রঙিন: আজ, রবিবার থেকে শুরু ফুটবল বিশ্বকাপ। তার আগে উত্তর কলকাতার একটি বাড়ির দেওয়াল ভরেছে বিশ্বকাপের রঙে। শনিবার। ছবি: সুমন বল্লভ
গোটা পাঁচিল জুড়ে বিভিন্ন দেশের রং-বেরঙের পতাকা। রাস্তার দু’ধারে তারকা ফুটবলারদের কাট-আউট এবং ব্যানার। গলির মুখের বাড়ির ছাদে কোথাও উড়ছে সাদা-নীল, কোথাও বা হলুদ-সবুজ বিশাল পতাকা। রাতারাতি ভোল বদলে গিয়েছে শহরের একাধিক অলিগলির। যার রেশ ময়দান-মার্কেটে জার্সি ও পতাকার বিকিকিনিতেও।সৌজন্যে, আজ, রবিবার থেকে কাতারে শুরু হতে চলা ফুটবলের বিশ্বকাপ।
মাঠে বিশ্বকাপের বল গড়ানোর কয়েক ঘণ্টা আগে প্রায় চার হাজার কিলোমিটার দূরের শহর কলকাতার বেলেঘাটা, উল্টোডাঙা, ফকির চক্রবর্তী লেন বা দক্ষিণের ভবানীপুর, বাঘা যতীন, আলিপুর ও বেহালার একাধিক এলাকায়চলছে পাড়া সাজানোর তোড়জোড়। কোথাও পাঁচিল জুড়ে পতাকা আঁকা হচ্ছে, কোথাও চলছে ফ্যান ক্লাবের নাম দিয়ে ব্যানার তৈরির কাজ।
শনিবার সকালে ফকির চক্রবর্তী লেনে গিয়ে দেখা গেল, সাজো সাজো রব। বিশাল এক পাঁচিল জুড়ে চলছে বিভিন্ন দেশের পতাকা আঁকার কাজ। পাশে দাঁড়িয়ে সমানে চিৎকার করে চলেছেন কমবয়সিরা। এক জন বলে উঠলেন, ‘‘আমাদের মেসিদাদা তো এ বার বলেই দিয়েছেন, এই বিশ্বকাপই শেষ! সবই তো পেয়েছেন, এ বার শুধু বিশ্বকাপটা দরকার।’’ একদল হলুদ জার্সি পাশ থেকে আগাম শুনিয়ে রাখলেন, ‘‘দেখা হলেই তিন গোল।’’ তাঁদেরই এক জন শুভেন্দু পাত্রের কথায়, ‘‘প্রতি বারই এলাকা সাজানো হয়। একসঙ্গে খেলা দেখার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। আগামী ক’দিন তো এটাই মজা!’’ একই রকম ভাবে সাজানো চলেছে ভবানীপুর, বাঘা যতীনের অলিগলিও।
তবে বিশ্বকাপের রেশ সব থেকে বেশি সম্ভবত ধর্মতলা সংলগ্ন ময়দান-মার্কেটে। নম্বরের সঙ্গে নাম মিলিয়ে জার্সির খোঁজে আসা কমবয়সিদের ভিড়ে পা ফেলার জায়গা নেই। ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, প্রতি বারের মতো ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনা— এই দুই দলের জার্সি আর পতাকার চাহিদা সব থেকে বেশি। এ ছাড়া জার্মানি, ফ্রান্স, পর্তুগালের জার্সিরও চাহিদা রয়েছে। অনেকে আবার প্রিয় তারকার নম্বরের সঙ্গে মিল রেখে জার্সিতে নিজের নাম ছাপিয়ে নিচ্ছেন।ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, বাজারে ১৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন দামের জার্সি বিকোচ্ছে।ময়দানের জার্সি বিক্রেতা মহম্মদ ফারুখের কথায়, ‘‘বিশ্বকাপের জন্য প্রায় পাঁচ হাজার নতুন জার্সি তুলেছি। যা চাহিদা দেখছি, মনে হচ্ছে নতুন করে অর্ডার দিতে হবে।’’ ফারুখের কথা শেষ হতেই পাশের দোকানি বলে উঠলেন,‘‘আর কিছু চাই না, শুধু ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা এক বার মুখোমুখি হোক, দেখবি কী হয়!’’
বছর বারোর ছেলেকে নিয়ে কসবা থেকে ময়দানে জার্সি কিনতে এসেছিলেন বিকাশ চক্রবর্তী। কেনাকাটা শেষে ফেরার সময়ে বললেন, ‘‘দিন দুই ধরে বায়না ধরেছিল ছেলেটা। নিজের দেশ খেলছে না, তাতেও এদের এত উৎসাহ! দেশ খেললে না-জানি কী করত!’’