—ফাইল চিত্র।
চলতি বছর মার্চ মাসে গার্ডেনরিচে বহুতল ভেঙে পড়ার ঘটনায় ঘরে-বাইরে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল কলকাতা পুরসভাকে। তার পরেই বেআইনি নির্মাণ রুখতে কড়া আইন আনার বিষয়ে মনস্থির করেছিলেন পুরসভা কর্তৃপক্ষ। এত দিনে সেই আইনের খসড়া পাঠানো হল পুর এবং নগরোন্নয়ন দফতরে। কলকাতা পুরসভার একটি সূত্র জানাচ্ছে, গার্ডেনরিচে বেআইনি বহুতল ভেঙে পড়ার পর ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছিল কলকাতা পুরসভা। যে হেতু ঘটনাটি ঘটেছিল মেয়র ফিরহাদ হাকিমের বিধানসভা কেন্দ্র কলকাতা বন্দর এলাকায়, সে জন্য পুরসভার উপর চাপ বেড়েছিল কয়েক গুণ। সেই সময় পুরসভার আধিকারিকেরা মেয়রকে জানিয়েছিলেন, বেআইনি নির্মাণ রুখতে কড়া আইনের প্রয়োজন। সে কথা জানার পরেই কলকাতা পুরসভার বিল্ডিং বিভাগকে এই সংক্রান্ত বিষয়ে একটি খসড়া তৈরি করতে নির্দেশ দেন মেয়র। আলাপ-আলোচনার পর সেই খসড়া তৈরি হয়ে আপাতত অনুমোদনের জন্য পুর এবং নগরোন্নয়ন দফতরে গিয়েছে।
মার্চ মাসে গার্ডেনরিচে নির্মীয়মাণ বহুতল ভেঙে পড়ার ঘটনায় ১২ জনের মৃত্যু হয়। সেই ঘটনার পর অভিযোগের মুখে পড়ে পুরসভা। ঘটনার জেরে তৈরি হওয়া অস্বস্তি কাটাতে তিন জন পুর ইঞ্জিনিয়ারকে শোকজ় করা হয়। সঙ্গে গ্রেফতার করা হয় প্রোমোটার মহম্মদ ওয়াসিমকে। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছিল, এর পরেই বেআইনি নির্মাণ নিয়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা থাকলেও, তা যথেষ্ট ‘কড়া’ নয়। এ বিষয়ে পুরসভা উদ্যোগী হলেও লোকসভা নির্বাচনের কারণে এই প্রক্রিয়া থমকে যায়। কিন্তু ভোট মিটে যেতেই পুরসভা আবার নতুন আইন তৈরি করতে কাজ শুরু করে। কড়া আইনের প্রয়োজনীয়তা প্রসঙ্গে কলকাতা পুরসভার এক আধিকারিক বলেন, ‘‘বেআইনি নির্মাণ প্রমাণিত হলে জমির মালিক ও প্রোমোটারের সাত বছরের বেশি কারাদণ্ডের বিধান থাকা উচিত। এমন আইন প্রয়োজন, যাতে অভিযুক্তেরা জামিন না পান। এমন সব কড়া বিষয় অন্তর্ভুক্ত হলেই এই ধরনের বেআইনি নির্মাণ করার সাহস পাবেন না কোনও প্রোমোটার। এমনকি, জমির মালিকেরাও প্রোমোটারদের বেআইনি নির্মাণ থেকে বিরত থাকতে বলবেন।’’ তাঁর মতে, এখন বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই জমির মালিক এবং প্রোমোটার পৃথক ব্যক্তি। তাই এমন আইন কার্যকর হলে উভয়েই যে কোনও নির্মাণের ক্ষেত্রে সাবধানি হবেন।
প্রসঙ্গত, রাজ্যে কোনও নতুন আইন আনতে হলে বা পুরনো আইন সংশোধন করতে গেলে বিধানসভায় বিল পাশ করা জরুরি। এ ক্ষেত্রে নিয়ম হল কলকাতা পুরসভাকে পুর দফতর মারফত রাজ্য সরকারের কাছে বিল্ডিং বিভাগের আইন বদলের আবেদন জানাতে হবে। আইন দফতর মারফত বিধানসভায় বিল পাশ হলেই সেই আইন কার্যকর হবে। এ ক্ষেত্রে পুরসভার আইনি বিষয়টি খতিয়ে দেখতে খসড়া পাঠানো হয়েছে পুর এবং নগরোন্নয়ন দফতরে। সেখানে অনুমোদনের পর খসড়াটি যাবে আইন দফতরে। সেখানে বিল তৈরি হয়ে তা পেশ করা হবে বিধানসভায়। সেখানে পাশ হওয়ার পর তা চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য যাবে রাজভবনে। সেই বিলে রাজ্যপাল স্বাক্ষর করলেই তা আইনে পরিণত হবে।