নতুন বছরের দেড় মাস কেটে গেলেও কোনও হকারই সরকারি শংসাপত্র পাননি। প্রতীকী ছবি।
কথা ছিল, গত ২১ নভেম্বরের মধ্যে শহরের বড় তিনটি বাজার এলাকায় হকার সমীক্ষার ‘পাইলট প্রজেক্ট’ শেষ করা হবে। ফুটপাত মেপে এক-তৃতীয়াংশ জায়গা হকারদের জন্য রেখে বাকি জায়গা দখলমুক্ত করা হবে। তার পরেই শেষ করা হবে হকার শংসাপত্র (ভেন্ডিং সার্টিফিকেট) দেওয়ার কাজ। কিন্তু নতুন বছরের দেড় মাস কেটে গেলেও কোনও হকারই সরকারি শংসাপত্র পাননি। এমনকি, প্রথমে ১৯ জন হকারের নাম চূড়ান্ত করে শংসাপত্র দেওয়ার দিন নির্দিষ্ট করা হলেও পরে সেই পরিকল্পনা বাতিল হয়। কেন? প্রশাসনের তরফে উত্তর মিলছে না। তাই হকাররা প্রশ্ন তুলছেন, সমীক্ষার পরে কি দখলমুক্ত করতে গিয়ে ধাক্কা খাচ্ছে পুরসভা?
গত ৯ নভেম্বর পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে গড়িয়াহাটে হকার সমীক্ষা শুরু করেন পুরকর্তারা। ফিতে দিয়ে মেপে, চকের দাগ কেটে ফুটপাতের এক-তৃতীয়াংশ জায়গা নির্দিষ্ট করা হয় হকারদের জন্য। এর বাইরে তাঁরা বসতে পারবেন না বলে জানানো হয়। আরও জানানো হয়, প্লাস্টিকের ছাউনির বদলে রঙিন ছাতা মাথায় দিয়ে বসতে হবে। রাস্তায় দোকান খোলা বা রাস্তার দিকে মুখ করে দোকান খোলা যাবে না। যান চলাচলের জায়গা দখল করে বসা যাবে না। গড়িয়াহাটের সঙ্গেই সমীক্ষা হয়েছিল শ্যামবাজার-হাতিবাগান, নিউ মার্কেট এলাকায়। নভেম্বরের মধ্যে সমীক্ষা শেষ হওয়ার কথা থাকলেও আরও কিছুটা সময় লাগে। সূত্রের খবর, শেষ পর্যন্ত গড়িয়াহাট থেকে প্রায় ২৪০০ জন হকারের নাম নথিভুক্ত করা হয়। হাতিবাগান এবং নিউ মার্কেট থেকে নথিভুক্ত হয় যথাক্রমে ১৪০০ ও ২০০০ হকারের নাম।
এর পরে ঠিক হয়, ২০১৫ সালে সরকারি নির্দেশ মতো যে হকারেরা শংসাপত্র পেতে আবেদন করেছিলেন, তাঁদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। ওই আবেদনের কাগজ থাকলে এবং তাঁরা এখনও পুরনো জায়গাতেই বসলে এখনই তাঁদের শংসাপত্র দেওয়া হবে। কিন্তু দেখা যায়, গড়িয়াহাটে বর্তমানে নথিভুক্ত ২৪০০ জনের মধ্যে মাত্র ছ’জনের পুরনো সেই আবেদনের কাগজ আছে। হাতিবাগান-শ্যামবাজার এলাকার ১৪০০ জনের মধ্যে ওই কাগজ আছে ১০ জনের। নিউ মার্কেটেও নথিভুক্ত ২০০০ জনের মধ্যে পুরনো কাগজ রয়েছে ছ’জনের। অর্থাৎ, মোট ২২ জন হকারের থেকে পুরনো কাগজ পাওয়া যায়। এর মধ্যে সব দিক খতিয়ে দেখে ১৯ জনকে চূড়ান্ত করা হয়। কিন্তু তার পরেও শেষ মুহূর্তে তা স্থগিত রাখা হয়।
কিন্তু কেন? শহরের এই তিনটি বাজার এলাকার হকার সংগঠন সূত্রের খবর, এত সংখ্যক হকারকে কোথায় বসতে দেওয়া হবে— সেটাই মূল সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফুটপাতের দুই-তৃতীয়াংশ জায়গা ছাড়তে গেলে সমীক্ষায় নাম লেখানো অধিকাংশ হকারই বসার জায়গা পাবেন না। সরকারের তরফে এই সমস্যার সমাধানসূত্র হকার সংগঠনগুলির উপরেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে কাকে বসতে দিয়ে কাকে তুলে দেওয়া হবে, তা ঠিক করতে কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। প্রায়ই গন্ডগোলের অভিযোগ পৌঁছচ্ছে হকার সংগঠনের নেতাদের কাছে। ফলে তড়িঘড়ি শংসাপত্র না দিয়ে ‘ধীরে চলো’ নীতি নেওয়া হয়েছে।
কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (হকার পুনর্বাসন কমিটি) দেবাশিস কুমার বলছেন, ‘‘সবটা হয়ে এসেছে। বাকিটা খুব দ্রুত হয়ে যাবে। আগামী সপ্তাহে টাউন ভেন্ডিং কমিটির বৈঠকেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে।’’ হকার সংগ্রাম কমিটির যুগ্ম সম্পাদক দেবাশিস দাস যদিও বললেন, ‘‘কেন ১৯ জনকে শংসাপত্র দেওয়ার কাজ আটকে গেল, কেউ জানে না। তবে ২০১৫-এ আবেদন করেছিলেন, এমন আরও নাম পেয়েছি। দ্রুত সেই সব নাম জমা করব। আশা করছি, টাউন ভেন্ডিং কমিটির পরবর্তী বৈঠকে ধোঁয়াশা কাটবে।’’