২০১৪ সালে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যখন প্রথম বার ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী হন, তখন অভিজিৎকেই সেই নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছিলেন মমতা। গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
পর পর তিন বার জয়ের হ্যাটট্রিকের মুখে দাঁড়িয়ে তিনি। জিতলেই তাঁকে দেখা যেতে পারে কলকাতা পুরসভার গুরুত্বপূর্ণ কোনও দায়িত্বে। তিনি কালীঘাটের বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের অন্যতম ঘনিষ্ঠদের একজন। তিনি কলকাতা পুরসভার ১৩০ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলর অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়। আসন্ন পুরভোটে তৃতীয় বার অংশ নিচ্ছেন।
সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নিয়ম করে প্রচার করছেন অভিজিৎ। যাচ্ছেন বাড়ি বাড়ি। ভোটের জন্য জনতার দরবারে গিয়ে আরও পাঁচ বছরের জন্য আশীর্বাদ চাইছেন। কিন্তু তার পরেই অভিজিতের মুখে আগামী প্রজন্মের জন্য জায়গা ছেড়ে দেওয়ার কথা। ১৯৮০ সাল থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁদের পারিবারিক যোগাযোগ। ১৯৮৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে মমতা যখন প্রথম বার সিপিএম নেতা সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের প্রার্থী হন, তখন বেহালার দু’টি বিধানসভা ছিল যাদবপুর লোকসভার অন্তর্গত। সেই সময় ওই দুই বিধানসভার ভোট পরিচালনার দায়িত্ব ছিল তরুণ অভিজিতের হাতে। সেই লড়াইয়ে মমতার জয়ে বড় ভূমিকা ছিল তাঁর।
২০১৪ সালে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যখন প্রথম বার ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী হন, তখন অভিজিৎকেই সেই নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা-অভিষেকের ‘ঘনিষ্ঠ’ হলেও মাটিতে পা রেখে চলতেই বেশি আগ্রহী অভিজিৎ। ২০১০ সালে প্রথম কাউন্সিলার হন। ২০১৫ সালে দ্বিতীয় বার জয়ের পর তাঁকে কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (শিক্ষা) করা হয়েছিল। তা সত্ত্বেও কাউন্সিলর হিসেবে একটুও বদলাননি অভিজিৎ। রাত ২টো পর্যন্ত মোবাইলে পাওয়া যায় তাঁকে। বাড়ির দরজাও সকাল থেকে রাত পর্যন্ত খোলা থাকে এলাকাবাসীর জন্য। বেহালা পশ্চিম কেন্দ্রে তাঁর ওয়ার্ডে তৃণমূলের ব্যবধান প্রতি নির্বাচনে বেড়েছে। শেষ বিধানসভার নির্বাচনে ৪,০৪৮ ভোটে এগিয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এ বার সেই ব্যবধান ছাপিয়ে যাওয়াই লক্ষ্য তাঁর।
তবে সেই লক্ষ্যের মধ্যেই দলের আগামী প্রজন্মের জন্য জায়গা ছাড়তে এতটুকুও দ্বিধা নেই অভিজিতের। তাঁর কথায়, ‘‘অভিষেক আমাদের ভবিষ্যৎ। ওকে জন্মাতে দেখেছি। ছোটবেলা থেকেই দেখেছিলাম, ওর মধ্যে সহজাত নেতৃত্বের গুণাবলি। যা রাজনীতিতে এসে অনেক বিকশিত হয়েছে। তাই এমন প্রজন্মকে সামনে দেখলে নিজের জায়গা হাসিমুখে ছাড়তে আমার আপত্তি নেই।’’
অভিজিতের আরও বক্তব্য, ‘‘দল আমাকে দু’বার অভিষেকের নির্বাচনী এজেন্ট করে আমার ওপর আস্থা রেখেছে। আমিও দলের আস্থার মর্যাদা দিয়েছি। আমার মতো একজন তৃণমূল কর্মীর কাছে সেটাই প্রাপ্তি। তৃতীয় বার জিতেও দলের কাছে নিজের কৃতজ্ঞতার কথা জানানোই আমার এ বারের লক্ষ্য।’’ প্রসঙ্গত, অভিজিতের দিদি শ্রীলা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত থেকে এই ওয়ার্ডের ব্যাটন তাঁর হাতে দিয়েছিলেন মমতা। সেই ওয়ার্ডে জয়ের ধারা বজায় রাখতেই পুরভোটের প্রচারে কোনও খামতি রাখতে চান না অভিষেকের নির্বাচনী এজেন্ট।