কসবা রাজডাঙায় তিনটি আবাসিক প্লট মিলিয়ে তৈরি হয়েছে এই অনুষ্ঠান বাড়িটি। মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেফতারির পরে সেটি নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
আদতে তিনটি আবাসিক প্লট। কিন্তু কলকাতা পুরসভার কর রাজস্ব বিভাগের রেকর্ডে সেগুলির মধ্যে একটি মাত্র প্লটকে ফাঁকা জমি হিসাবে নথিভুক্ত করা হয়েছে। পুর লাইসেন্স বিভাগের রেকর্ডে ওই ফাঁকা প্লটেরই মালিকানা নথিভুক্ত আছে এক জন কেব্ল অপারেটরের নামে! অন্য দিকে, বাকি দু’টি প্লটের কোনও রেকর্ডই নেই পুরসভায়। সোমবার ১০৭ নম্বর ওয়ার্ডের কসবা এলাকার রাজডাঙা মেন রোডের ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, তিনটি আবাসিক প্লটকে একত্র করে একটি প্রাসাদোপম অনুষ্ঠান বাড়িতে পরিণত করা হয়েছে। যার রেকর্ড পুরসভার খাতায় নেই। শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের গ্রেফতারির পরে এই অনুষ্ঠান বাড়িটি নজরে রাখছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)।
পুরসভা সূত্রের খবর, কসবা এলাকার ইডি ব্লকের ‘ই’ সেক্টরের অন্তর্গত ১০, ১১ এবং ১২ নম্বর আবাসিক প্লটকে একত্র করে ওই অনুষ্ঠান বাড়িতে পরিণত করা হয়েছে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বাড়িটি ভাড়া দেওয়ার পাশাপাশি সেখানে শুটিংও চলে। কিন্তু সাত কাঠা জমির উপরে অনুষ্ঠান বাড়িটি গড়ে উঠলেও পুরসভার কর রাজস্ব (অ্যাসেসমেন্ট) বিভাগের খাতায় ১১ নম্বর প্লটকে ২ কাঠা ৯ ছটাক ফাঁকা জমি হিসাবে দেখানো হয়েছে। পুর রেকর্ড অনুযায়ী, ওই প্লটের মালিক বিবেকনগরের বাসিন্দা, জনৈক সুখরঞ্জন নন্দী। অনুষ্ঠান বাড়ির লেটারবক্সে ঠিকানা লেখা রয়েছে ৯৫, রাজডাঙা মেন রোড। পুরসভার লাইসেন্স বিভাগের খাতায় আবার ওই ঠিকানারই মালিক এক কেব্ল অপারেটর। নাম রঞ্জিত কর। অন্য দিকে, ১০ এবং ১২নম্বর প্লটের রেকর্ড পুরসভার নথিতে নেই।
এ দিন ওই অনুষ্ঠান বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, ভিতর থেকে গেট বন্ধ। কর্তব্যরত নিরাপত্তারক্ষী গেট না খুলেই বললেন, ‘‘আপাতত সাত দিন অগ্রিম বুকিং নেওয়া হচ্ছে না। জরুরি হলে অন্য কোনও হল বুক করতে পারেন।’’ এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ দাবি করলেন, এই অনুষ্ঠান বাড়িতে অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কে মাঝেমধ্যেই আসতে দেখেছেন তাঁরা। বিশেষত, মাসের শেষ দিকে তিনি নিয়ম করে আসতেন। পার্থকেও এখানে আসতে দেখেছেন বলে দাবি তাঁদের। বিশালাকায় ওই বাড়ির একাংশে শুটিংয়েরও ব্যবস্থা রয়েছে। এ দিন বাড়িটির চার পাশ ঘুরে দেখা গেল, শুটিং চলছে। তার জন্য রাস্তায় একাধিক গাড়ি দাঁড় করানো রয়েছে।
পুরসভার কর রাজস্ব বিভাগের আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, আবাসিক প্লটকে কোনও ভাবেই একত্র করে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা যায় না। উপরন্তু এ ক্ষেত্রে অনুষ্ঠান বাড়িতে পরিণত হলেও সেটি পুর রেকর্ডে সেই হিসাবে নথিভুক্ত নেই। এতেই শেষ নয়। পুরসভার কর রাজস্ব বিভাগ সূত্রের খবর, মাত্র একটি প্লট ফাঁকা জমি হিসাবে নথিভুক্ত থাকায় সেখান থেকে বছরে সাকুল্যে ২৩৫২ টাকা সম্পত্তিকর বাবদ আদায় হয়। অথচ প্রকৃতপক্ষে ওই বিশাল অনুষ্ঠান বাড়ি থেকে অন্তত এক লক্ষ টাকা সম্পত্তিকর হিসাবে পাওয়ার কথা পুরসভার। ফলে প্রতি বছর বিরাট অঙ্কের সম্পত্তিকর থেকে বঞ্চিত হচ্ছে পুর প্রশাসন। কর রাজস্ব বিভাগের আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, পুরসভাকে অন্ধকারে রেখে তিনটি প্লটের সংযুক্তিকরণ করার অর্থ হল, ওই বাড়িটি বেআইনি।
স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, শহরের বুকে দীর্ঘদিন ধরে এমন ভাবে একটি অনুষ্ঠান বাড়ি ভাড়া দেওয়া হচ্ছে, অথচ তা পুরসভার নজরে পড়ল না? মোটা টাকার সম্পত্তিকর থেকে বঞ্চিত হওয়া সত্ত্বেও কেন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হয়নি? কর রাজস্ব বিভাগের এক শীর্ষ আধিকারিক বলেন, ‘‘অ্যাসেসমেন্টের খাতায় নথিভুক্ত হলে তবেই পুরসভা সম্পত্তিকর আদায় করে। কিন্তু ২০০৭ সালে কসবার ওই ঠিকানার একটিমাত্র প্লট ফাঁকা জমি হিসাবে নথিভুক্ত হয়েছে। শহরের কয়েক কোটি ঠিকানাকে নিয়মিত অ্যাসেসমেন্টের আওতায় আনার পরিকাঠামো পুরসভার নেই। তবে কেউ অভিযোগ জানালে তা খতিয়ে দেখা হয়।’’