বাজি-গড়: উত্তর থেকে দক্ষিণ, শহরের সর্বত্র প্রকাশ্যেই বিক্রি হচ্ছে নানা ধরনের আতশবাজি। মুচিবাজারে চলছে কেনাবেচা। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।
কোনটা ‘সবুজ বাজি’ আর কোনটা নয়? এমন বাজি পাওয়াই বা যায় কোথায়? শহরে এই ধরনের বাজির জোগান কি আদৌ রয়েছে?
কালীপুজোর আগের রাত পর্যন্তও এই প্রশ্নগুলির উত্তর নেই। যদিও সূত্রের খবর, তারই মধ্যে সবুজ বাজি বিক্রির প্রায় ৩৩টি লাইসেন্স দিয়েছে কলকাতা পুলিশ। সেই লাইসেন্স পেয়েছেন যে ব্যবসায়ীরা, তাঁরা বিধিনিষেধ মেনে দোকান থেকে সবুজ বাজি বিক্রি করতে পারবেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, যেখানে বাজি বাজার করার মতো বা সেই বাজার হলেও সেখানে নজরদারি চালানোর পরিকাঠামো নেই, সেখানে ব্যবসায়ীদের দোকানে দোকানে ঘুরে নজরদারি চালানোর মতো পরিকাঠামো কি পুলিশের আছে? এ ভাবে ব্যবসার সুযোগ পেয়ে সবুজ বাজির আড়ালে আদতে নিষিদ্ধ বাজিই বিক্রি করা হবে না তো?
চলতি বছরে কলকাতা হাই কোর্ট সব রকমের বাজি বিক্রি এবং ফাটানোয় নিষেধাজ্ঞা জারি করার পরে বাজি ব্যবসায়ীরা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। সর্বোচ্চ আদালত সবুজ বাজি বিক্রি এবং ফাটানোয় ছাড় দেয়। তার পরেই প্রশ্ন ওঠে, শহরে এমন বাজি পাওয়া যায় কোথায়? বুধবার রাত পর্যন্ত খবর, কলকাতায় এই ধরনের কোনও বাজি বিক্রি হয় না। পরিবেশবান্ধব সবুজ বাজি তৈরি করে, এমন কোনও কারখানাও এই রাজ্যে নেই। রাজ্যের ৩৭টি বাজি কারখানা দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদে নথিভুক্ত। যার মধ্যে মাত্র তিনটি কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড এক্সপ্লোসিভ সেফটি অর্গানাইজ়েশনের (পেসো) ছাড়পত্র পাওয়া। কিন্তু ওই কারখানাগুলি পরিবেশবান্ধব বাজি তৈরি করে না। এমন বাজি তৈরিতে ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট (নিরি)-এর ছাড়পত্র লাগে। দেশে কোনও কারখানাকে সেই ছাড়পত্র দিয়েছে নিরি, তা শোনা যায়নি। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, যদি সবুজ বাজি শহরে না-ই পাওয়া যায়, তা হলে সেই বাজি বিক্রির অনুমতি পেতে ব্যবসায়ীরা এত উতলা কেন?
রাজ্যের ‘বাজি শিল্প উন্নয়ন সমিতি’র সদস্যদের দাবি, বাজি শিল্পকে বাঁচাতেই তাঁরা আইনি লড়াই লড়ছেন। এক বাজি ব্যবসায়ী বললেন, ‘‘প্রতি বছর মার্চ থেকেই কালীপুজোর জন্য বাজি মজুত করা শুরু হয়ে যায়। এ বছরও তা-ই করা হয়েছিল। পরে শুধুমাত্র সবুজ বাজির বিক্রিতে ছাড় পাওয়া যেতে পারে ভেবে ভিন্ রাজ্য থেকে ওই ধরনের বাজি আমদানি করার চেষ্টা শুরু হয়। কিন্তু হাই কোর্ট প্রথমে সব রকমের বাজি নিষিদ্ধ ঘোষণা করায় থমকে যায় সেই কাজও। এখন সুপ্রিম কোর্টের রায় মেনে হাই কোর্টও সবুজ বাজিতে ছাড় দেওয়ার পরে শেষ মুহূর্তে কোনও বাজিই আনা যাচ্ছে না। তবু ব্যবসায়ীদের একাংশ বাজি শিল্প বাঁচিয়ে রাখার নামে লড়ছেন। অন্য অংশ গত বছর বিক্রি না হওয়া বাজি বেচে রোজগারের পথ খুঁজছেন।’’
কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার পদমর্যাদার এক কর্তা অবশ্য বললেন, ‘‘যা নিষিদ্ধ নয়, আইনত তার বিক্রি বন্ধ করা যায় না। যে ব্যবসায়ীরা লাইসেন্সের আবেদন করেছিলেন, তাঁরা সবুজ বাজি বিক্রি করবেন বলে জানিয়েছেন। তার আড়ালে অন্য কিছু হলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ কিন্তু এমনিতেই বাজি নিয়ে নাজেহাল পুলিশের হাতে সেই সুযোগ থাকবে তো? এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে আগামী দু’দিনেই।