মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
কোন অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন, মন্ত্রীদের তা আগে জানাতে হবে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে। রাজ্য মন্ত্রিসভার সহকর্মীদের এমনই নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মন্ত্রীদের কোন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে হবে বা কোথায় তাঁদের উপস্থিতি প্রয়োজন, তা আগে খতিয়ে দেখবে মুখ্যমন্ত্রীর দফতর। তার পরেই সেই সংক্রান্ত ‘অনুমোদন’ পাওয়া যাবে। ২০২৫ সালের শুরু থেকেই এই নির্দেশ কঠোর ভাবে মেনে চলতে হবে মন্ত্রীদের।
নবান্ন সূত্রের খবর, সম্প্রতি এক মন্ত্রীর একটি অনুষ্ঠানে যাওয়া নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। ওই অনুষ্ঠানে মন্ত্রীকে মঞ্চে উঠে সংবর্ধনা জানান এক ব্যক্তি। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে একাধিক আর্থিক প্রতারণার মামলা থাকায় প্রশ্ন ওঠে দলের অন্দরে। সেই সংবর্ধনার বেশ কিছু ছবিও প্রকাশ্যে এসেছে। বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীর কানেও পৌঁছয়। গত বৃহস্পতিবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে নাম না করে মুখ্যমন্ত্রী সতর্ক করেন ওই মন্ত্রী-সহ তাঁর বাকি সতীর্থদের। সঙ্গে নির্দেশ দেন, কোন মন্ত্রী কোথায় যাচ্ছেন এবং কোন অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন, তা আগে থেকে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে জানাতে হবে। নতুন বছর থেকেই এই নির্দেশ কার্যকর করতে হবে বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
২০২৬ সালে রাজ্যে বিধানসভার নির্বাচন। তার আগে রাজ্য মন্ত্রিসভার কোনও সদস্য যাতে অযথা কোনও বিতর্কে জড়িয়ে না পড়েন, সে বিষয়ে এখন থেকেই তাঁদের সজাগ করতে চান মুখ্যমন্ত্রী তথা শাসকদলের সর্বময় নেত্রী মমতা। তাই নতুন বছরের গোড়া থেকেই দল তথা প্রশাসনকে তিনি শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণ করতে চান। যাতে বিধানসভা নির্বাচনের আগে কোনও ‘অস্বস্তিকর’ পরিস্থিতি তৈরি না হয়। তাই সরাসরি মন্ত্রিসভার বৈঠকে সকলের উপস্থিতিতেই নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সম্প্রতি তৃণমূলের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, দলবিরোধী কোনও কাজ করলে যে কোন স্তরের নেতাকে শো কজ করবে দল। পর পর তিন বার কোনও নেতাকে শো কজ করা হলে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। মন্ত্রীদের অনেকেই মমতার এই সতর্কবার্তাকে দলীয় শৃঙ্খলার সঙ্গে মিলিয়ে দেখছেন। পাশাপাশিই, দলের প্রথম সারির নেতাদের একাংশের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রীর এই নির্দেশে এটাও স্পষ্ট যে, আর্থিক বেনিয়মের সঙ্গে যুক্ত কোনও ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ থাকলে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে সংশ্লিষ্ট বিধায়ক বা মন্ত্রীকে টিকিট না-ও দেওয়া হতে পারে। এর আগে মদন মিত্র, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের মতো নেতাদের সঙ্গে ‘অসাধু’ ব্যক্তি বলে পরিচিতদের ছবি গত কয়েক বছরে ‘বিপাকে’ ফেলেছে বাংলার শাসকদলকে। ঘটনাচক্রে, ওই তিন নেতাই এখন আর মন্ত্রিসভায় নেই। যাঁরা এখনও মন্ত্রিসভার সদস্য, তাঁদের ভাবমূর্তি যাতে ‘স্বচ্ছ এবং উজ্জ্বল’ থাকে, তার দিকে নজর রেখেই ওই সতর্কবার্তা জারি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা।