বৃষ্টির মধ্যেই স্বাস্থ্য ভবনের সামনে অবস্থান জুনিয়র ডাক্তারদের। —নিজস্ব চিত্র।
বৃষ্টির মধ্যেই স্বাস্থ্য ভবনের সামনে অবস্থান চালিয়ে যাচ্ছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। শুক্রবার দুপুরে দেখা যায়, অবস্থানরত জুনিয়র ডাক্তারেরা নিজেরাই ত্রিপল ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। ত্রিপলের নীচে দাঁড়িয়েই ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ বলে স্লোগান দিচ্ছেন তাঁরা। কেউ কেউ গায়ে বর্ষাতি চাপিয়েছেন।
শর্তের গেরোয় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজ্যের সঙ্গে জুনিয়র ডাক্তারদের বৈঠক ভেস্তে গিয়েছে। অন্য দিকে, চলতি অচলাবস্থা কাটাতে বৃহস্পতিবার সকালেই রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সাহায্য চেয়ে তাঁকে মেল করেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। মেলের প্রতিলিপি পাঠানো হয়েছে উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মন্ত্রী এবং কেন্দ্রের স্বাস্থ্য এবং পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী জেপি নড্ডাকে। জুনিয়র ডাক্তারদের সূত্র মারফত আরও গিয়েছে রাষ্ট্রপতি ভবনের তরফে এখনও পর্যন্ত কোনও সাড়া মেলেনি।
মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিক বৈঠক করার পর জুনিয়র ডাক্তারেরা সংবাদমাধ্যমের সামনে বলেন, ‘‘আমরা নবান্নের দুয়ারে পৌঁছে গিয়েছিলাম। কী চেয়েছিলাম? আমাদের বোনের সঙ্গে যে জঘন্য ঘটনা ঘটে গিয়েছে, তার বিচার। ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনা আর না ঘটে, তার নিশ্চয়তা। তা নিশ্চিত করার জন্য যাঁরা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত, যাঁরা ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে চেয়েছিলেন, তাঁদের শাস্তি চেয়েছিলাম। মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারের উপর ভরসা রেখেই আমরা গিয়েছিলাম।’’ মুখ্যমন্ত্রীর ‘চেয়ার চায়’ দাবি প্রসঙ্গে জুনিয়র ডাক্তারেরা বলেন, “গত ৩৩ দিন ধরে আমরা রাস্তায়। দরকারে আরও ৩৩ দিন রাস্তায় পড়ে থাকব। কিন্তু বিচার আমাদের চাই। আমরা চেয়ার চাই না।’’
বৈঠক ভেস্তে যাওয়ার পর বৃহস্পতিবার নবান্ন থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘তিন দিনেও সমাধান করতে পারলাম না। বাংলার মানুষের কাছে ক্ষমা চাইছি। যাঁরা নবান্নের সামনে এসেও বৈঠকে এলেন না, তাঁদের আমি ক্ষমা করলাম। আমাকে অনেক অসম্মান করা হয়েছে। আমার সরকারকে অসম্মান করা হয়েছে। অনেক ভুল বোঝাবুঝি, কুৎসা হয়েছে। সাধারণ মানুষ রং বোঝেনি। আমি পদত্যাগ করতে রাজি আছি। কিন্তু ওরা বিচার চায় না। চেয়ার চায়। আশা করি মানুষ সেটা বুঝবেন।’’ বৈঠক না হওয়ায় নবান্নের সামনে বসে পড়েন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। মমতা জানান, অনেকেই বৈঠকে আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বাইরে থেকে সমঝোতা না করার নির্দেশ এসেছে। আরও বলেন, ‘‘অনেকে বৈঠক করতে আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বাইরে থেকে নির্দেশ আসছিল। দু’-তিন জন রাজি হননি। আমি মানুষের কাছে ক্ষমা চাইছি। ডাক্তারদের অনুরোধ করছি, কাজে ফিরুন।’’
বৃহস্পতিবার নবান্নের তরফে আন্দোলনকারীদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছিল। জানানো হয়েছিল, মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করবেন। তবে ১৫ জন প্রতিনিধিকে নবান্নে ডাকা হয়েছিল। বৈঠকের সরাসরি সম্প্রচার করা যাবে না, সে কথাও চিঠিতে জানিয়েছিলেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। তার পরেও নবান্নে যান ডাক্তারদের ৩২ জন প্রতিনিধি। তাঁদের প্রবেশের অনুমতিও দেওয়া হয়। কিন্তু বৈঠকের সরাসরি সম্প্রচারের অনুমতি দেয়নি সরকার। এতে অচলাবস্থা তৈরি হয়। দীর্ঘ ক্ষণ নবান্নের বাইরে অপেক্ষা করেন আন্দোলনকারীরা। সভাঘরে দু’ঘণ্টার বেশি সময় বসে ছিলেন মমতা। বৈঠক ভেস্তে যাওয়ার পর তিনি সাংবাদিক বৈঠক করেন। জানান, তিনি পদত্যাগ করতে রাজি। কিন্তু কিছু মানুষ বিচার চাইছেন না। চেয়ার চাইছেন। অচলাবস্থা কাটাতে না পারার জন্য বাংলার মানুষের কাছে ক্ষমাও চেয়ে নেন মুখ্যমন্ত্রী। এর পরেই নবান্ন থেকে আবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন জুনিয়র ডাক্তারেরা।
মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টের পর স্বাস্থ্য ভবনের সামনে অবস্থানে বসেছিলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শর্তের গেরোয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনা ভেস্তে যায় জুনিয়র ডাক্তারদের। তার পরে অবস্থান চালিয়ে যাওয়ার কথা জানান তাঁরা। শুক্রবার সকালেও স্বাস্থ্য ভবনের সামনে অবস্থান বসে থাকতে দেখা যায় জুনিয়র ডাক্তারদের।