-ফাইল চিত্র।
শাসক দলের মদতে চলা সিণ্ডিকেট রাজের দাপটে ব্যবসা বন্ধ হওয়ার জোগাড় কলকাতা বন্দরের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ জেটিতে। অভিযোগ, বার বার পুলিশকে লিখিত ভাবে অভিযোগ জানিয়েও সমস্যা মেটেনি। বন্ধ হয়নি তোলাবাজির চেষ্টা। উল্টে ওই তিনটি জেটির মাধ্যমে আমদানি-রফতানি কারবারের সঙ্গে যুক্ত কোম্পানিগুলির কর্তাদের এবং কর্মীদের লাগাতার হুমকি দিয়ে চলেছে কিছু দুষ্কৃতী।
ওই দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে পশ্চিম বন্দর থানায় একাধিক বার অভিযোগ জানানোর পর শুক্রবার এফআইআর করে পুলিশ। তবে এখনও অভিযুক্ত মহম্মদ আখতার খান ওরফে ভুট্টো এবং তাঁর ভাই আসগর খান ওরফে ছোটু অধরা। ভুট্টো এবং ছোটু ওই এলাকার কুখ্যাত দুষ্কৃতী হিসাবেই পরিচিত। অতীতে একাধিক বার তোলাবাজি-র অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছে দু’জনেই।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আখতার কয়েক বছর আগে কিং খান লজিস্টিক নামে একটি কোম্পানি খোলে। মূলত বন্দর এলাকার বিভিন্ন জেটিতে মাল ওঠানো-নামানোর জন্য শ্রমিক সরবরাহ করে তার সংস্থা। স্থানীয় ব্যাবসায়ীদের একাংশের অভিযোগ, ওই জেটিগুলিতে আমদানি-রফতানিকারী সংস্থাগুলি বাধ্য হয় আখতারের সংস্থাকে কাজ দিতে, না হলেই সে দলবল নিয়ে অশান্তি বাধায়।
আরও পড়ুন: প্রশিক্ষণে দুর্ঘটনা, গোয়ায় ভেঙে পড়ল নৌবাহিনীর যুদ্ধবিমান
অভিযোগ গত বছর নভেম্বর মাস থেকে বিভিন্ন সময়ে আখতার এবং তাঁর ভাই আসগর লোকজন নিয়ে সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট ইস্ট গেটওয়ে (ইন্ডিয়া) নামে একটি সংস্থার ভুতঘাটের দফতরে গিয়ে হাঙ্গামা করে। ওই সংস্থাটি ২০১৮ সালে অন্তর্দেশীয় জলপথ পরিবহণ দফতরের টেন্ডারের মাধ্যমে গার্ডেনরিচ ১, ২ এবং বিআইএনএস জেটির পণ্য ওঠানো-নামানোর দায়িত্ব পেয়েছে। সংস্থার সহকারী জেনারেল ম্যানেজার সাগর খাস্তগীর পশ্চিম বন্দর থানায় যে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন, তাতে জানানো হয়েছে, আখতার লোকজন নিয়ে এসে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি জোর করে তাঁদের দফতকে ঢোকে। সেখানে কর্মী এবং নিরাপত্তা কর্মীদের হুমকি দেয়। সংস্থার শীর্ষকর্তাদের কাছে মাসে ২ লাখ টাকা এবং নিরাপত্তা কর্মীদের কাছে মাসে ২৫০০ টাকা দাবি করে। দাবির টাকা না দিলে কর্মীদের এলাকাতে ঢুকতে দেওয়া হবে না বলেও শাসায় আখতার। সাগরবাবুর অভিযোগ, এর আগেও গত বছর ৩০ নভেম্বর, এই বছরের ৯ জানুয়ারি এবং ২৩ জানুয়ারি একই ভাবে অশান্তি পাকিয়েছিল আখতার। সেই সময়েও থানায় অভিযোগ জানানো হয়েছিল।
আরও পড়ুন: শাহিন বাগের ধাঁচে জাফরাবাদেও শুরু ধর্না, মোতায়েন আধাসেনা
সূত্রের খবর, ১৪ ফেব্রয়ারি আখতারের বিরুদ্ধে ভয় দেখিয়ে তোলা আদায়ের অভিযোগ দায়ের করে আরও একটি কোম্পানি। পায়োনিয়ার এন্টারপ্রাইজ নামে ওই সংস্থা গার্ডেনরিচ ২ নম্বর জেটি ব্যবহার করে ফ্লাইং অ্যাশ আমদানি-রফতানি করে। ওই সংস্থার পক্ষে সমীর রঞ্জন রায় পশ্চিম বন্দর থানায় লিখিত অভিযোগ জানান। তাঁর অভিযোগ, আখতার মাসে ২ লাখ টাকা তোলা দাবি করেছে ওই সংস্থার কাছে।
স্থানীয় ব্যাবসায়ীদের একাংশের অভিযোগ, রাজারহাট নিউটাউনের কুখ্যাত সিন্ডিকেটের মতো বন্দরেও রমরমিয়ে চলছে সিন্ডিকেট। গার্ডেনরিচ ২ নম্বর জেটি দিয়ে যে সমস্ত সংস্থা আমদানি-রফতানি ব্যবসা করে, তারা বাধ্য হয় আখতারের সংস্থাকে শ্রমিক সরবরাহের বরাত দিতে। পায়োনিয়ার এন্টারপ্রাইজও বরাত দিতে বাধ্য হয়েছিল। কিন্তু পরে সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট ইস্ট গেটওয়ে (ইন্ডিয়া) জেটির ইজারা পাওয়ায় ওই সংস্থার মাধ্যমেই কাজ করতে বাধ্য হয় পায়োনিয়ারের মতো বিভিন্ন সংস্থা। ফলে ওই সংস্থাগুলি আখতারের বরাত বাতিল করে। আর তাই সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট ইস্ট গেটওয়ে (ইন্ডিয়া)-সহ ওই জেটিটে ব্যবসা করা বিভিন্ন সংস্থার অফিসে হামলা চালাচ্ছে আখতারের লোকজন।
স্থানীয় সূত্রে খবর, আখতার শাসক দলের ঘনিষ্ঠ এবং এলাকায় শাসক দলের সমস্ত ধরনের রাজনৈতিক কাজকর্মেই সে সক্রিয় ভাবে অংশ নেয়। আখতার ওই এলাকায় শাসকদলের যে নেতাদের ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত, তাঁরা আবার রাজ্য রাজনীতির এক প্রভাবশালীর ঘনিষ্ঠ। অভিযোগ, সেই কারণেই পর পর অভিযোগ থাকার পরও, আখতার ভাইদের বিরুদ্ধে বড় কোনও পদক্ষেপ করতে পরেনি পুলিশ। এই সমস্ত অভিযোগ সম্পর্কে আখতার খান ওরফে ভুট্টোকে রবিবার সকাল থেকে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তার ফোন প্রত্যেক বারই সুইচড অফ ছিল।