Jadavpur University Student Death

যাদবপুরে র‌্যাগিংকাণ্ড ধামাচাপা দেওয়ার ঘটনায় জড়িত, কমিটির রিপোর্টে কাঠগড়ায় ফেটসুর তিন নেতা

ফেটসুর তিন নেতা অরিত্র, সৈকত এবং গৌরব শুধু ছাত্রমৃত্যুর রাতে নয়, আগেও হস্টেল এবং ক্যাম্পাসে র‌্যাগিংয়ের ঘটনা ধামাচাপা দিয়েছেন বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৭:০৪
Share:

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। —ফাইল চিত্র।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রমৃত্যুর ঘটনার পরে বেশ কয়েক জন ছাত্র মেন হস্টেলে তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা সমাজমাধ্যমে লিখেছিলেন। এ বার বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটির রিপোর্টে তা আরও বিস্তারিত ভাবে উঠে এসেছে বলে খবর। বিশ্ববিদ্যালয়ের সূত্রের খবর, হস্টেলে নির্যাতনের পাশাপাশি ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির ছাত্র সংসদের (ফেটসু) তিন নেতা অরিত্র মজুমদার, সৈকত শিট ও গৌরব দাস ছাত্রমৃত্যুর রাতে র‌্যাগিংয়ের ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার ষড়যন্ত্রের অংশীদার ছিলেন বলেও রিপোর্টে জানানো হয়েছে। ওই তিন জনের শাস্তির সুপারিশও করেছে তদন্ত কমিটি। চার ছাত্রকে আজীবন বহিষ্কারের সুপারিশও করা হয়েছে। পাঁচ আবাসিক পড়ুয়াকে চারটি সিমেস্টার, ১১ জনকে দু’টি সিমেস্টার এবং ১৫ জনকে এক সিমেস্টার সাসপেন্ড করার সুপারিশ করা হয়েছে। ২৬ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কর্মসমিতির বৈঠক ডেকেছেন। ওই বৈঠকে এই রিপোর্ট নিয়ে আলোচনা ও পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক হবে বলে খবর।

Advertisement

সূত্রের খবর, মেন হস্টেলে প্রথম বর্ষের ছাত্রদের সঙ্গে সিনিয়রেরা কী আচরণ করতেন, তার ১৫ দফা বর্ণনা দেওয়া হয়েছে ওই রিপোর্টে। সেখানে বলা হয়েছে, নবাগত ছাত্রদের সর্বদা ফুল প্যান্ট পরে থাকতে হত। শৌচাগারে গেলেও ফুল প্যান্ট পরে যেতে হত। প্রথম বর্ষের ছাত্রদের চুল ছোট করে ছেঁটে দেওয়ার প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। হাতে ঘড়ি পরা কিংবা সিনিয়রদের সামনে মোবাইলে কথা বলা নিষিদ্ধ ছিল। সিনিয়রদের জন্য বাইরে থেকে সিগারেট, মদ , খাবার কিনে এনে দিত হত প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের। নিয়মিত গালিগালাজ করা, ‘ইন্ট্রোর’ নামে জোর করে অশ্লীল কথা বলানো, এমনকি হস্টেলের জানলা দিয়ে পাশের পুলিশ আবাসনের উদ্দেশে কুৎসিত কথা বলানো হত। বিভিন্ন আবাসিককে জিজ্ঞাসা করে কমিটি জেনেছে, ‘ইন্ট্রো’-র নামে নগ্ন করে নাচানো হত। নানা ধরনের শারীরিক নির্যাতনও চলত। প্রসঙ্গত, মৃত ছাত্রকেও হস্টেলের নীচে বিবস্ত্র অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল।

সূত্রের খবর, ফেটসুর তিন নেতা অরিত্র, সৈকত এবং গৌরব শুধু ছাত্রমৃত্যুর রাতে নয়, আগেও হস্টেল এবং ক্যাম্পাসে র‌্যাগিংয়ের ঘটনা ধামাচাপা দিয়েছেন বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। কমিটির সুপারিশ, সৈকতকে আজীবনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ও হস্টেলে ঢুকতে নিষেধ এবং বাকি দু’জন পঠনপাঠন অথবা গবেষণা শেষের পরে আর ক্যাম্পাসে এবং হস্টেলে ঢুকতে পারবেন না। হস্টেলের এ-১ এবং এ-২ ব্লকের সুপার তপন জানাকে এক মাসের জন্য সাসপেন্ড ও বদলির সুপারিশ করা হয়েছে। মেন হস্টেলের সি এবং ডি ব্লকের সুপার দ্বৈপায়ন দত্তকেও বদলির সুপারিশ করা হয়েছে। হস্টেল থেকে ফোন পাওয়ার পরেও ডিন অব স্টুডেন্টস রজত রায় ঘটনার গুরুত্ব বুঝতে পারেননি বলে রিপোর্টে বলা হয়েছে। মোট ৯৫ জন সিনিয়র আবাসিককে হস্টেল থেকে বার করার সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।

Advertisement

এ দিকে, ইউজিসি-র নিয়ম মেনে ছাত্রমৃত্যুর ঘটনার পরে প্রথম বর্ষের ছাত্রদের জন্য একটি আলাদা হস্টেলের ব্যবস্থা হবে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলেন। ক্যাম্পাসের ভিতরে নিউ ব্লক হস্টেলকে চিহ্নিতও করা হয়। কিন্তু সেখানকার পুরনো আবাসিকদের অন্য হস্টেলে যাওয়ায় আপত্তি আছে। শনিবার স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার বোর্ডের বৈঠকে প্রথম বর্ষের ছাত্রদের জন্য আলাদা হস্টেলের বিষয় নিয়ে আলোচনা হলেও সিদ্ধান্ত হয়নি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement