—ফাইল চিত্র।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের শিক্ষিকা মেরুনা মুর্মুকে তাঁর জাতিগত পরিচয় তুলে ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় কটাক্ষ, হেনস্থা এবং অনেকে মিলে নেট-নিগ্রহের ঘটনার তদন্ত অবশেষে পুলিশ পর্যন্ত গড়াল। যাদবপুর থানার পুলিশ আধিকারিককে ইমেল করে মেরুনার অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক ও কলকাতা পুলিশের সংশ্লিষ্ট ডিসি-কেও অভিযোগের প্রতিলিপি পাঠান তিনি। লালবাজারের এক কর্তা জানান, তফসিলি জাতি ও আদিবাসী নির্যাতন প্রতিরোধ আইনেই বেথুন কলেজের এক ছাত্রীর নামে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এই ধরনের মামলায় তদন্তের বিধি অনুসারে, অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার পদের এক অফিসারের অধীনে তদন্ত চলবে।
ইতিহাসবিদ রোমিলা থাপার, তনিকা সরকার এবং অধ্যাপিকা সুপ্রিয়া চৌধুরী-সহ কয়েক জন বিশিষ্ট জন জাতীয় এসসিএসটি কমিশনের কাছে এই ঘটনার প্রতিকার চেয়ে আবেদন জানিয়েছেন।
ফেসবুকে ওই ছাত্রীর তরফে যাদবপুরের শিক্ষিকা আদিবাসী, সাঁওতাল পরিচয় নিয়ে বিষোদ্গারের ন’দিন কেটে গিয়েছে। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় চাপান-উতোর থিতিয়ে যায়নি। মেরুনা বলেন, ‘‘নিট পরীক্ষা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে তর্কাতর্কিতে আমায় যে ভাবে আক্রমণ করা হয়েছে, তা অবশ্যই তফসিলি জাতি ও আদিবাসী নির্যাতন প্রতিরোধ আইনে তদন্তযোগ্য। সেই সঙ্গে এ দেশের বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে বিদ্বেষ ছড়ানোর চেষ্টাও ছিল বলে মনে হয়েছে। তাও এই ধরনের কথা যাঁরা বলেন, তাঁরা ভুল বুঝবেন ভেবে প্রথমে অভিযোগ দায়ের করিনি।’’ মেরুনার কথায়, ‘‘শিক্ষাজগতের অনেকে, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পড়ুয়ারা আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু যে ছাত্রীটি বিষোদ্গার শুরু করেন, তিনি ভিডিয়ো করে মিথ্যে অভিযোগ করছেন। আমি এই সংঘাতে নানা তথ্য গোপন করছি বলেও দোষারোপ চলছে। আমি ক্লান্ত। তা হলে আইনি পথেই নিষ্পত্তি হোক।’’ ছাত্রীটির আচরণ নিয়ে বেথুন কলেজ কর্তৃপক্ষ, যাদবপুর-প্রেসিডেন্সির শিক্ষক-পড়ুয়াদের অনেকেই নিন্দা করেছেন। পরে ওই ছাত্রী ভিডিয়ো বার্তায় দাবি করেন, তিনি হুমকি পাচ্ছেন। এই অবস্থায় আত্মহত্যা করতে বাধ্য হবেন তিনি।
পুলিশের তরফে বিধি মেনেই তদন্তের কথা বলা হয়েছে। তফসিলি জাতি ও আদিবাসী নির্যাতন প্রতিরোধ আইনে সাধারণত আগাম জামিন নেওয়া যায় না। দোষ প্রমাণিত হলে ছ’মাস থেকে পাঁচ বছর জেল এবং জরিমানা হতে পারে। আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কিছু ক্ষেত্রে এই আইনটির অপপ্রয়োগ হয়। কিন্তু এই আইন অনুযায়ী প্রকাশ্যে কাউকে জাত তুলে বা জাতিগত পরিচয় তুলে বিষোদ্গার করলে তাতে সাজা হতে পারে।’’