Cyclone Yaas

আবার ঝড়ের মুখে ‘মৃত্যুফাঁদ’ তারের জট

আমপানেই মৃত্যু হওয়া ১৯ জনের মধ্যে ১৫টি ক্ষেত্রে সরাসরি দায়ী ছিল ইতিউতি ঝুলতে থাকা তারের জট।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০২১ ০৭:১৬
Share:

 (বাঁ দিকে) বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটের বাতিস্তম্ভে তারের জাল। (ডান দিকে) পুলিশ ট্রেনিং স্কুলের সামনে বাতিস্তম্ভে খোলা তার। নিজস্ব চিত্র

ঘটনা ১: ঝড় থেমে যাওয়ার কিছু ক্ষণ পরে এক পরিচিতকে এগিয়ে দিতে গিয়েছিলেন পর্ণশ্রীর বাসিন্দা পিন্টু গায়েন। আর বাড়ি ফেরেননি তিনি। কয়েক ঘণ্টা পরে পরিবারের লোকজন বেরিয়ে দেখেন, বৃষ্টির জমা জলে পড়ে থাকা ছেঁড়া তারের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে পিন্টুর মৃতদেহ।

Advertisement

ঘটনা ২: ঝড়ের রাতে মা ঠিক আছেন কি না দেখতে বন্ধুর বাড়ি থেকে আসছিলেন মানিকতলার রাহুল অধিকারী। কিন্তু বাড়ি পৌঁছনো হয়নি তাঁর। পরের দিন ভোরে পথে পড়ে থাকা তার জড়ানো অবস্থায় উদ্ধার হয় রাহুলের দেহ।

এমন ঘটনা নেহাত কম নয়। লালবাজারের হিসেব, শুধু আমপানেই মৃত্যু হওয়া ১৯ জনের মধ্যে ১৫টি ক্ষেত্রে সরাসরি দায়ী ছিল ইতিউতি ঝুলতে থাকা তারের জট। ফণী, বুলবল এবং আমপান মিলিয়ে এই মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ৪২। এ বার আরও একটি ঘূর্ণিঝড়ের মুখে দাঁড়িয়ে আদৌ কি সতর্ক হয়েছে শহর?

Advertisement

নাগরিকদের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতা বলছে, অবস্থা এতটুকু পাল্টায়নি। পরিস্থিতি এমন যে, সামান্য বৃষ্টিতেই আগুন ধরে যায় বহু তারের জটে। বিদ্যুতের খুঁটি থেকে বেরিয়ে থাকা তারে তড়িদাহত হয়ে প্রাণ যায় ফুটপাতবাসী বালকের। অভিযোগ, ছিঁড়ে পড়া তারের মধ্যে কোনটি বিদ্যুতের আর কোনটি কেব্‌ল সংযোগের, তা বুঝতে না পারায় পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়।

অবশ্য পুজোর সময়ে এবং কোনও বড় বিপদের আঁচ পেয়ে শহর তারমুক্ত করার ব্যাপারে উদ্যোগী হয় পুরসভা। পুর প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য দেবাশিস কুমার রবিবার বলেন, “সমস্যা হল, খারাপ তার না সরিয়ে সেখানেই নতুন তার জুড়ে দেন কেব্‌ল অপারেটরেরা। তাই তাঁদের ডেকে এ বার মুচলেকা নেওয়া হয়েছে, এক দিনের মধ্যে সমস্ত পুরনো তার কেটে সরিয়ে ফেলতে বাধ্য থাকবেন তাঁরা।”

২০১৫ সালে তৎকালীন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ও শহরকে তারমুক্ত করতে কেব্‌ল অপারেটর এবং মাল্টি সিস্টেম অপারেটরদের (এমএসও) সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। যদিও সেই ঘোষণা মতো কোথাওই অপটিক্যাল ফাইবার মাটির তলা দিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ হয়নি। পুরসভা সূত্রের খবর, শহরে তাদের তিন লক্ষাধিক খুঁটি রয়েছে। এ ছাড়াও আছে কেএমডিএ এবং সিইএসসি-র খুঁটি। প্রতিটিতেই ধারণক্ষমতার কয়েক গুণ বেশি তার চাপানো। এক পুর আধিকারিকের কথায়, ‘‘২০-৩০ কিলোমিটার বেগের হাওয়া সহ্য করারই ক্ষমতা খুঁটির নেই, তো ১৮০ কিলোমিটারের ইয়াস! সঙ্গে রয়েছে পাড়ার দাদাদের দাপট। পুরসভার খুঁটি ব্যবহার করলে ভাড়া দিতে হয়। কিন্তু কোনও কেব্‌ল পরিষেবা সংস্থাই ঠিক মতো ভাড়া দেয় না।” সিইএসসি-র এক আধিকারিক বলেন, “বহু এলাকায় তারের জট হাল্কা করতে গিয়ে এই দাদাদের ঘেরাওয়ের মুখে পড়ে ফিরে আসতে হয় আমাদের। ওঁদেরই জোরে তারের জট মাটির নীচ দিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রকল্প দিনের আলো দেখে না।”

যেমন বাস্তবায়িত হয়নি রবীন্দ্র সদন থেকে কালীঘাট পর্যন্ত রাস্তা ‘তারমুক্ত’ করার প্রকল্পও। গত বছরের শেষে ওই রাস্তার সব তার মাটির তলা দিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রকল্প ঘোষণা হয়। বরাদ্দ হয় ৫০ লক্ষ টাকা। কিন্তু দেড় মাসের মধ্যে কাজ শেষ করে শহরের অন্যত্র এই প্রকল্প করার কথা হলেও আজও তা হয়নি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement