কলকাতা পুলিশের মালখানা পরিষ্কার করতেই বেরিয়ে এল থমকে থাকা সময়
Kolkata Police

Kolkata Police: সোনা, টাকা ও দুর্লভ জিনিসে ঠাসা মালখানা না মিউজ়িয়াম!

কলকাতা পুলিশের অধীনে থাকা ৭০টি থানার মালখানা থেকে বেরিয়েছে প্রায় ২০ কিলোগ্রাম সোনা! গয়না ছাড়াও রয়েছে সোনার বার।

Advertisement

সুনন্দ ঘোষ, শিবাজী দে সরকার

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০২১ ০৭:৫৭
Share:

অমূল্য: লালবাজারের কেন্দ্রীয় মালখানায় পড়ে থাকা সেই হরিণ। (পাশে) জামার্নিতে তৈরি হওয়া পিস্তল। ছবি: কলকাতা পুলিশ

১৯৭০ সাল। পণের মামলায় পুলিশ বাজেয়াপ্ত করেছিল ব্রোঞ্জের বড়সড় একটি হরিণের মূর্তি। ৫০ বছর আগের সেই মামলা তামাদি হয়ে গিয়েছে। হরিণের মূর্তিটিও মালখানায় পড়েছিল এতকাল‌। যখন উদ্ধার হল, তখন সেটি কালো হয়ে গিয়েছে। পালিশ করতেই বেরিয়ে পড়েছে তার আসল রূপ।

Advertisement

সম্প্রতি মালখানা পরিষ্কার শুরু হতেই শ্যামপুকুর, জোড়াসাঁকো, ভবানীপুরের মতো যত পুরনো থানা-বাড়ি রয়েছে, সেখান থেকে বেরিয়ে আসছে চোখ কপালে তোলার মতো সামগ্রী। কলকাতা পুলিশের অধীনে থাকা ৭০টি থানার মালখানা থেকে বেরিয়েছে প্রায় ২০ কিলোগ্রাম সোনা! গয়না ছাড়াও রয়েছে সোনার বার। যার বাজারমূল্য ৯ কোটি ৭৪ লক্ষ টাকা!

চুরি, ছিনতাই, ডাকাতির পরে উদ্ধার হওয়া সোনার গয়না থেকে যায় পুলিশের হেফাজতে। ভারতীয় আইন অনুযায়ী, যত দিন না আদালতে মামলার নিষ্পত্তি হচ্ছে, তত দিন মালিকের ঘরে গয়না ফেরে না। বহু পুরনো মামলা আজও চলছে। ফলে বাজেয়াপ্ত সোনার গয়না রয়ে গিয়েছে মালখানায়। বিভিন্ন মামলায় যাঁদের সোনা বাজেয়াপ্ত হয়েছিল, তাঁদের খোঁজা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ) মুরলীধর শর্মা।

Advertisement

মালখানা থেকে পাওয়া গিয়েছে প্রায় ১০ কোটি টাকা! এগুলোও বিভিন্ন মামলায় বাজেয়াপ্ত। কখনও ডাকাত দলের কাছ থেকে, কখনও জুয়ার বোর্ড থেকে। যার প্রায় দু’কোটি টাকা নোটবন্দির চক্করে পড়ে বাতিলই হয়ে গিয়েছে। তবু হাল ছাড়তে নারাজ পুলিশকর্তারা। বাতিল ওই টাকা পাঠানো হয়েছে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের কাছে। যদি চলতি টাকা পাওয়া যায়, সেই আশায়। এ সব টাকা যাবে সরকারের ঘরে। ঠিক হয়েছে, এখন থেকে নগদ যা বাজেয়াপ্ত হবে, তা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে রাখা হবে। প্রতিটি ডিভিশনে একটি অ্যাকাউন্ট থাকবে।

কলকাতা পুলিশের সদর দফতর লালবাজারেও রয়েছে একটি কেন্দ্রীয় মালখানা। প্রাক্-স্বাধীনতার সময় থেকে সেখানে জমা রয়েছে বিভিন্ন মামলায় পুলিশের বাজেয়াপ্ত করা সামগ্রী। তারই একটি এই ব্রোঞ্জের হরিণ। ওই মালখানায় রাখা আছে জার্মানিতে তৈরি ১৫টি ছোট পিস্তল। সে সব আজও সচল! নথি বলছে, এগুলি স্বাধীনতার পূর্বের। এই সব অস্ত্র বিপ্লবীদের থেকে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল কি না, সেই তথ্য বর্তমান কলকাতা পুলিশের কাছে নেই। পাওয়া গিয়েছে বহু দেশি বন্দুক। কাঠ দিয়ে তৈরি ১৯৫০ সালের সেই দেশি বন্দুক দেখে অবাক অফিসারেরা।

কলকাতার পুলিশ কমিশনার সৌমেন মিত্র মালখানা পরিষ্কার করার এক প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিলেন। তাতে ভাল ফল করেছে আলিপুর, পাটুলি এবং সরশুনা। মুরলীধর জানিয়েছেন, প্রতিটি থানার অফিসারদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। মালখানায় সমস্ত জিনিসের বার কোড থাকবে। এমনই ব্যবস্থা হচ্ছে যে, আদালতে বসে বিচারক চাইলে ওই বার কোড মারফত কোন সামগ্রী কোথায় রাখা আছে, তা কম্পিউটারে দেখতে পাবেন।

মালখানা পরিষ্কার করে পাওয়া মাদক আর বাজি নষ্ট করার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। তবে মুরলিধর বলছেন, ‘‘ব্রোঞ্জের ওই হরিণ পুলিশ মিউজ়িয়ামে রাখা হবে।’’ (শেষ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement