প্রায় চারতলা বাড়ির সমান উচ্চতার দু’টি এসক্যালেটর বসছে দেশের গভীরতম মেট্রো স্টেশন হাওড়ায়।
প্রায় চারতলা বাড়ির সমান উচ্চতার দু’টি এসক্যালেটর বসছে দেশের গভীরতম মেট্রো স্টেশন হাওড়ায়। উচ্চতা এবং দৈর্ঘ্যের বিচারে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর এই এসক্যালেটর পাল্লা দিতে চলেছে দিল্লির ম্যাজেন্টা লাইনের জনকপুরী ওয়েস্ট স্টেশনের চলমান সিঁড়ির সঙ্গে। উল্লেখ্য, দৈর্ঘ্য এবং উচ্চতার মাপকাঠিতে সারা দেশের সব ক’টি মেট্রো স্টেশনের মধ্যে জনকপুরী ওয়েস্ট স্টেশনের এসক্যালেটর শীর্ষে রয়েছে। সেটি প্রায় পাঁচতলা বাড়ির সমান উঁচু।
ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর হাওড়া স্টেশনটি তৈরি হচ্ছে মাটির নীচে প্রায় ৩০ মিটার গভীরে। গভীরতার দিক থেকে সারা দেশের মধ্যে এই স্টেশনটি শীর্ষে। ইতিমধ্যে তার নির্মাণকাজ প্রায় সম্পূর্ণ। মাটির উপর থেকে স্টেশনটি পাঁচটি তলে বিভক্ত। গড়ে এক-একটি তলার উচ্চতা ৬ মিটার। অর্থাৎ, মাটির উপর থেকে ছ’মিটার নীচে নামলে প্রথম তল। প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করার আগে সেখানেই টিকিট কাটতে হবে যাত্রীদের। মেট্রোর আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, এই তলকে মেট্রোর পরিভাষায় বলা হয় ‘আপার কনকোর্স’। এর পরে মেট্রোর মেকানিক্যাল এবং ইলেকট্রিক্যাল বিভাগের কাজকর্মের জন্য আরও দু’টি তল রয়েছে। ওই দু’টি তলের মোট উচ্চতা ১২ মিটার। তারও নীচে রয়েছে বাকি দু’টি তল। প্রথমটিকে বলা হচ্ছে ‘লোয়ার কনকোর্স’। তার পরেই প্ল্যাটফর্ম। যে প্ল্যাটফর্ম ছাড়িয়ে পূর্বে কিছুটা দূর এগোলেই গঙ্গার নীচ দিয়ে চলে গিয়েছে সুড়ঙ্গ। মেট্রো সূত্রের খবর, নদীর তলদেশে সুড়ঙ্গের গভীরতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে গিয়েই মাটির এতটা নীচে হাওড়া স্টেশনটি তৈরি করতে হয়েছে।
আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, প্রায় ১০তলা বাড়ির সমান গভীর এই মেট্রো স্টেশনে যাত্রীদের সহজে ঢোকা-বেরনো নিশ্চিত করতে বিভিন্ন তল মিলিয়ে ২৭টি এসক্যালেটর এবং ৭টি লিফট থাকছে। এর মধ্যে মেকানিক্যাল এবং ইলেকট্রিক্যাল বিভাগের জন্য নির্দিষ্ট অন্তর্বর্তী দু’টি তল এড়িয়ে যাওয়ার জন্য স্টেশনের মাঝ বরাবর দু’পাশে বসছে দু’টি দীর্ঘ এসক্যালেটর। আনত অবস্থায় যার দৈর্ঘ্য প্রায় ৩০ মিটার বা ৯৮ ফুটের সামান্য বেশি। ওই চলমান সিঁড়ির উচ্চতা ১২ মিটার। স্টেশনের আপার এবং লোয়ার কনকোর্সের যে অংশকে এই চলমান সিঁড়ি যুক্ত করছে, তাদের মাঝে সরলরৈখিক দূরত্ব ২২ মিটারের কিছুটা বেশি। মেট্রো সূত্রের খবর, বিশালাকায় দু’টি এসক্যালেটর বসানোর জন্য প্রযুক্তিগত ভাবে একাধিক বিষয় মাথায় রাখতে হচ্ছে। এসক্যালেটরের উচ্চতা বেশি হলে ওঠানামার সময়ে যাত্রীদের শরীরের ভারসাম্য ধরে রাখায় সমস্যা হয়। তাই চেষ্টা করা হয়, ৩০ ডিগ্রির মধ্যে ওই উচ্চতাকে সীমাবদ্ধ রাখার। দিল্লির ম্যাজেন্টা লাইনের জনকপুরী স্টেশনের চলমান সিঁড়ির দৈর্ঘ্য ৩৫.৩ মিটার এবং উচ্চতা ১৫.৬ মিটার। তবে হাওড়ার ক্ষেত্রে আপার কনকোর্স থেকে লোয়ার কনকোর্স ও তার পরে লোয়ার কনকোর্স থেকে প্ল্যাটফর্মে পৌঁছতে যাত্রীদের আরও দু’টি এসক্যালেটরের সাহায্য নিতে হবে।
এ ক্ষেত্রে আপার কনকোর্স থেকে সরাসরি একটি এসক্যালেটরের সাহায্যে প্ল্যাটফর্মে পৌঁছনো গেলে কলকাতার ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর সেই এসক্যালেটরটিই হত দেশের মধ্যে দীর্ঘতম। কিন্তু যাত্রী-সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে উপর থেকে নীচে প্ল্যাটফর্ম পর্যন্ত পৌঁছতে থাকছে চারটি এসক্যালেটর। নির্মীয়মাণ স্টেশনে কয়েক মাসের মধ্যেই শুরু হবে এই এসক্যালেটর বসানোর কাজ।