গার্ডেনরিচ এলাকায় বেআইনি নির্মাণ নিয়ে গুচ্ছ গুচ্ছ অভিযোগ জমা পড়েছে কলকাতা পুরসভা এবং পুলিশের কাছে। —ফাইল চিত্র।
গার্ডেনরিচে নির্মীয়মাণ বহুতল ভেঙে পড়ার ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে কলকাতা পুরসভা। পাশাপাশি সেই ঘটনার তদন্ত করছে কলকাতা পুলিশও। আগেই এই ঘটনায় প্রোমোটার মহম্মদ ওয়াসিমকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তার পরেই গার্ডেনরিচ এলাকায় বেআইনি নির্মাণ নিয়ে গুচ্ছ গুচ্ছ অভিযোগ জমা পড়েছে কলকাতা পুরসভা এবং পুলিশের কাছে। তাই এ বার গত এক বছরে গার্ডেনরিচ এলাকায় বেআইনি নির্মাণের সংখ্যা জানতে তৎপরতা বাড়িয়েছে লালবাজার। ঘটনার পর দিন সকালেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ে ওই এলাকা পরিদর্শনে যান। তার পরেই ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনা করে এই উদ্যোগ শুরু করেন লালবাজারের পুলিশ কর্তারা।
গার্ডেনরিচের ঘটনার পর কলকাতা পুলিশের কমিশনার বিনীতকুমার গোয়েলের সঙ্গে বৈঠকে হয় ডিসি পোর্ট হরিকিসান পাই-সহ উচ্চ পদস্থ পুলিশ কর্তাদের। পুলিশ সূত্রে খবর, সেই বৈঠকেই সিদ্ধান্ত হয় যে, গার্ডেনরিচে গত এক বছরে কত বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ জমা পড়েছে, তা জানতে হবে। তার পরই গার্ডেনরিচ থানায় লালবাজার থেকে নির্দেশ গিয়েছে। কলকাতা পুরসভা সূত্রে খবর, গার্ডেনরিচের বেআইনি নির্মাণ নিয়ে ওঠা অভিযোগের কথা জানতে বোরো ১৫-র দ্বারস্থ হয়েছে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন। এই উদ্যোগের পাশাপাশি কলকাতা পুরসভাও ওই ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তারাও পৃথক ভাবে এলাকায় বেআইনি বাড়ি চিহ্নিত করবে।
পুরসভা থেকে পাওয়া তালিকা পুলিশের তালিকার সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হতে পারে। তা থেকে ওই এলাকায় বেআইনি বাড়ির প্রকৃত সংখ্যা জানা সম্ভব বলে মনে করছে কলকাতা পুলিশের একাংশ। তালিকা মিলিয়ে দেখার পাশাপাশি, চিহ্নিত করা বেআইনি বহুতলগুলিকে নোটিস পাঠানো হতে পারে পুলিশের তরফে। বেআইনি নির্মাণ সংক্রান্ত গোটা বিষয়টিতে নজরদারি চালাবেন কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার অজয় প্রসাদ। যাবতীয় তথ্য হাতে পেলে বেআইনি নির্মাণ নিয়ে থানার ওসির সঙ্গে কথা বলবেন যুগ্ম কমিশনার। এ বিষয়ে কলকাতা পুরসভার সঙ্গে সমন্বয় রাখবেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার-১ মুরলীধর শর্মা। বেআইনি নির্মাণ নিয়ে কলকাতা শহর জুড়ে পুলিশ এই উদ্যোগ চালু করবে কি না, সে বিষয়ে স্পষ্ট কিছু জানা যায়নি।
গার্ডেনরিচে নির্মীয়মাণ বাড়ি ভেঙে পড়ার ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কলকাতা পুরসভা। সাত সদস্যের সেই কমিটিকে আটটি প্রশ্নের জবাব খুঁজতে বলা হয়েছিল। সেই জবাবের ভিত্তিতে আগামী সপ্তাহে পুরসভাকে রিপোর্ট দেবেন তাঁরা। গত শনিবার এই কমিটি গঠন করে সাত দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু দোল উৎসবের কারণে সোমবার পর্যন্ত ওই কমিটি ঘটনাস্থলে যেতে পারেনি। মঙ্গলবার কমিটির সব সদস্যেরা একসঙ্গে দুর্ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। মঙ্গলবার বিকেলে গার্ডেনরিচের আজহার মোল্লা বাগানে যান ওই কমিটির সদস্যেরা। সেই দলে ছিলেন কলকাতার বিল্ডিং, রাস্তা এবং কঠিন বর্জ্য বিভাগের ডিজিরা। এ ছাড়াও ছিলেন কলকাতা পুরসভার এক জন করে নির্মাণ বিষয়ক এবং মাটি বিভাগের বিশেষজ্ঞ। ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই ইঞ্জিনিয়ারেরা সেখানকার নমুনা সংগ্রহ করেন। পাশাপাশি ওই জমির মাটির নমুনাও পরীক্ষার জন্য সংগ্রহ করা হয়েছে। তারা আগামী সপ্তাহে রিপোর্ট জমা দেবেন পুর কমিশনারের কাছে। তার পর সেই তদন্ত রিপোর্ট যাবে মেয়র ফিরহাদ হাকিমের টেবিলে।