প্রতীকী ছবি।
করোনা আক্রান্ত রোগীর শারীরিক অবস্থা যাতে সঙ্কটজনক হয়ে না ওঠে, তার জন্য এক বিশেষ ওষুধ প্রয়োগের গবেষণা শুরু হয়েছে দেশ জুড়ে। তবে সেটি ইঞ্জেকশন নয়, খাওয়ার ওষুধ। ভারতের অন্যান্য প্রান্তের মতো পশ্চিমবঙ্গেও শুরু হয়েছে তৃতীয় পর্যায়ের সেই গবেষণা। পরীক্ষামূলক এই গবেষণা চলছে কলকাতার একটি সরকারি এবং দুই বেসরকারি হাসপাতালে।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ‘মলনুপিরাভির’ নামে এই ওষুধটি অ্যান্টিভাইরাল হিসাবে কাজ করবে। তৃতীয় পর্যায়ের এই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত এক গবেষক-চিকিৎসকের কথায়, “সিটি-ভ্যালু থেকে বোঝা যায় শরীরে ভাইরাল লোড অর্থাৎ সংক্রমণের মাত্রা কতটা। প্রথম পরীক্ষা করে যখন কোনও রোগীর রিপোর্ট করোনা পজ়িটিভ আসছে, তখন এই ওষুধ প্রয়োগ করা হচ্ছে। পাঁচ দিন পরে ফের পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে, সিটি-ভ্যালু কতটা বেড়েছে (অর্থাৎ, ভাইরাল লোড কতটা কমেছে) কিংবা নেগেটিভ হয়েছে কি না।’’
একটি বিদেশি ওষুধ সংস্থা প্রথম এই অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ তৈরি করে। দেশের মোট ২৬টি কেন্দ্রে সেটির মহড়া শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই রাজ্যের তিনটি হাসপাতালে মোট ৯০ জনের উপরে প্রয়োগ করা হয়েছে ওষুধটি। সূত্রের খবর, কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৪২ জন, রুবি হাসপাতালে ১৪ জন এবং কস্তুরী দাস মেমোরিয়াল হাসপাতালে ৩৪ জন করোনা রোগীকে ওষুধটি খাওয়ানো হয়েছে। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, দিনে দু’টি করে পাঁচ দিনের এই ওষুধ বাড়িতেই খাওয়া যায়। তবে প্রথম দিন হাসপাতালে এসে সম্মতিপত্রে সই করতে হচ্ছে রোগীকে। এর পরে তাঁর মোবাইলে একটি অ্যাপ ডাউনলোড করে দেওয়া হচ্ছে। যাতে রোগীর শরীরের দৈনিক তাপমাত্রা, অক্সিজেনের পরিমাণ, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে তথ্য অ্যাপেই নথিভুক্ত করা যায়। রাজ্যে এই ওষুধের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ফেসিলিটেটর স্নেহেন্দু কোনার বলেন, “গবেষণার সমন্বয়কারী সংস্থার তরফে রোগীর বাড়িতে ওষুধ পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। ওঁরা প্রতিদিন যে তথ্য আপলোড করছেন, সেটি সরাসরি গবেষক দলের কাছে চলে আসছে। ওষুধটি এখন ড্রাগ কন্ট্রোলের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।’’
চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, করোনাভাইরাস কোষ গ্রাহকের (সেল রিসেপটর) মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে কোষের মারাত্মক ক্ষতি করে। সেখানে এই অ্যান্টিভাইরাল ওষুধটি কোষ গ্রাহককে রক্ষা করবে। যাতে ভাইরাস শরীরে ঢুকতে না পারে। শহরের তিন হাসপাতাল সূত্রে জানা যাচ্ছে, যে সব রোগীর উপরে এই ওষুধ প্রয়োগ করা হয়েছে, তাঁদের অধিকাংশেরই এক সপ্তাহ পরে নেগেটিভ রিপোর্ট এসেছে। বাকিদের ভাইরাল লোড কমেছে। আবার, প্রতিষেধক নেওয়ার পরেও কেউ সংক্রমিত হলে এই ওষুধটি খেতে পারবেন। কারণ ওষুধটির মূল কাজই হল, রোগীর অবস্থা যাতে সঙ্কটজনক হয়ে না পড়ে তা নিশ্চিত করা।