আড়ালে: হোর্ডিংয়ে ঢাকা পড়েছে ট্র্যাফিক পুলিশের স্ট্যান্ড ও সিগন্যাল (চিহ্নিত)। উত্তর কলকাতার রাজবল্লভপাড়ায়। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
মুখ ঢেকে যায় প্রচারের হোর্ডিংয়ে!ঢাকা পড়ে ট্র্যাফিক পুলিশের সিগন্যাল।ট্র্যাফিকের টাঙানো পথ নির্দেশিকা, ত্রিফলা বাতি।ঢাকা পড়ে যায় পুলিশের কিয়স্কও!
উত্তর কলকাতার শোভাবাজার হয়ে রাজবল্লভ পাড়া, বাগবাজারের দিকে এগোলেই চোখে পড়ে নেতা-নেত্রীদের ছবি-সহ বিশাল বিশাল হোর্ডিং। কোনওটির উচ্চতা মাটি থেকে ১৫ ফুট, কোনওটি আবার ২০ ফুটের কাছাকাছি। কেউ কেউ উচ্চতার প্রতিযোগিতায় জিততে পথের ধারে লাগানো আলোর স্তম্ভকেও টেক্কা দিচ্ছে। এই সব হোর্ডিংয়ের কোনওটিতে হাসিমুখে রয়েছেন কলকাতা পুরসভার ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ। নীচে লেখা, ‘শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন’! কোনওটিতে জ্বলজ্বল করছে কলকাতার নতুন মেয়র ফিরহাদ হাকিমের মুখ। একটিতে আবার রয়েছে খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি।
ওই এলাকার বাসিন্দাদের একটি বড় অংশের অভিযোগ, এই প্রচার হোর্ডিংয়েই পথচলা ‘বিপজ্জনক’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অতীনবাবুর ছবি লাগানো হোর্ডিংয়ে ঢাকা পড়েছে ট্র্যাফিক সিগন্যাল। মুখ্যমন্ত্রীর ছবি আবার কলকাতা পুলিশের যান নিয়ন্ত্রণের বড় অস্ত্র পুলিশের কিয়স্কই ঢেকে দিয়েছে। এক দুপুরে ওই অঞ্চলে গিয়ে দেখা গেল, রাজবল্লভপাড়ার ঠিক মুখের ওই কিয়স্কের ধারকাছে কোনও ট্র্যাফিক পুলিশকর্মী নেই। কিয়স্ক আগলে বিরাজমান বিশাল একটি হোর্ডিং। অবস্থা এমনই যে, ট্র্যাফিক পুলিশকর্মী থাকলেও তিনি কিয়স্ক ব্যবহার করতে পারতেন না। স্থানীয়েরাও বলছেন, পুলিশকর্মী থাকলে হোর্ডিং-বন্দি হয়েই থাকতে হত তাঁকে। ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ অ্যাভিনিউয়ের বাসিন্দা রমেন হাজরা আবার বললেন, ‘‘মাসের পর মাস নানা উপলক্ষ খুঁজে এখানে হোর্ডিং পড়ে। এখন তো আর কিছুই মানছে না। কিয়স্ক ঢেকে দিয়েছে বুঝছেন না? রাস্তা পেরোতে হলে গাড়ির গতি বুঝে পা বাড়ানোই ভরসা।’’
প্রসঙ্গত, শ্যামবাজার এবং উত্তর কলকাতার পুরনো পাড়ায় হোর্ডিং-বিজ্ঞাপনের ভিড় নিয়ে বিতর্ক দীর্ঘদিনের। এই প্রেক্ষিতে পুর-প্রশাসনে রদবদলের পরে নতুন করে রাজনৈতিক হোর্ডিং লাগানো নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। ট্র্যাফিক আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এ ভাবে হোর্ডিং লাগানোর যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। বাগবাবাজার এলাকার একটি বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে এক বাসচালক আবার বললেন, ‘‘কিয়স্কটাই তুলে দিলে ভাল হয়। অকারণ রেখে কী লাভ? কেস খাওয়ার ভয়ও থাকে না।’’ ওই বাসচালকই দেখালেন, ফুটপাতের ধারের একটি বিশাল হোর্ডিংয়ে আবার ঢাকা প়ড়ে গিয়েছে ত্রিফলা বাতি। ফলে সন্ধ্যা নামলে ফুটপাত নয়, ত্রিফলার আলো পায় হোর্ডিং!
কিয়স্ক ঢেকে লাগানো হোর্ডিংয়ের নীচে লেখা সৌজন্যে পার্থ মিত্র। তাঁর পরিচয় হিসেবে লেখা, ‘পৌর প্রতিনিধি, ৮ নং ব্লক তৃণমূল যুব কংগ্রেস’। এ প্রসঙ্গে পার্থবাবুকে ফোন করা হলে তিনি জানান, গত ১৫ ডিসেম্বর কলকাতা পুরসভার নতুন মেয়র এবং ডেপুটি মেয়রকে সংবর্ধনা দিয়েছেন তাঁরা। সেই উপলক্ষে বেশ কয়েক দিন আগে থেকে এই সব হোর্ডিং লাগানো হয়। পরে আর তা খোলা হয়নি। তাই বলে পুলিশের কিয়স্ক এবং ট্র্যাফিক সিগন্যাল ঢেকে হোর্ডিং? পার্থবাবু এ বার সামলে নিয়ে বলেন, ‘‘দ্রুত খুলে দেব। কাল দেখবেন সরে গিয়েছে।’’ এলাকাটি কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের শ্যামবাজার ট্র্যাফিক গার্ডের অন্তর্গত। সেখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক বলেন, ‘‘দ্রুত বিষয়টি দেখছি। এ ভাবে কখনওই লাগানো যায় না।’’ আর এক পুলিশকর্মী বলেন, ‘‘পার্থবাবুকেই বলে হোর্ডিং খোলাতে হবে। বোঝেনই তো, মুখ্যমন্ত্রীর হোর্ডিংয়ে এ ভাবে হাত দেওয়া যায় না!’’