Hijab Controversy

‘হিজাব-দোষে’ ইস্তফা রাজ্যের আইন কলেজে

বছর দু’য়েক আগে কর্নাটকে তৎকালীন বিজেপি সরকার শিক্ষাঙ্গনে হিজাব নিষিদ্ধ করায় বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। কংগ্রেস সরকার হিজাব-ফতোয়া তুলে নিলেও সুপ্রিম কোর্টে হিজাব ও ধর্মীয় অনুশাসন বিতর্কের পুরোপুরি নিষ্পত্তি হয়নি।

Advertisement

ঋজু বসু

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০২৪ ০৭:৪৪
Share:

—প্রতীকী ছবি।

তাঁর প্রিয় কলকাতা বা বাংলায় এমনটা হতে পারে, ভাবেনইনি আইন কলেজের শিক্ষিকা সানজিদা কাদের। শাড়ি বা সালওয়ার কামিজের সঙ্গে হিজাবে মাথা ঢাকার ‘অপরাধে’ রাজ্যের একটি বেসরকারি আইন কলেজ থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য হন তিনি।

Advertisement

গত বুধবার, ৫ জুনের পদত্যাগ পত্রে সানজিদা লেখেন, ‘কলেজ কর্তৃপক্ষের হিজাব-বিরোধী নীতির জন্যই আমি পদত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছি। কারণ হিজাব খুলতে বলা হলে তা আমার ধর্মীয় বিশ্বাস এবং মূল্যবোধের সঙ্গে সংঘাত সৃষ্টি করছে।’

রামপুরহাটের মেয়ে সানজিদা বছর আড়াই হল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এল জে ডি আইন কলেজের শিক্ষিকা। গত রমজান মাস থেকে তিনি হিজাব পরা শুরু করেন। গত ৩১ মে হঠাৎই কলেজের পোশাক-বিধি তৈরি করা হয়। কলেজ কর্তৃপক্ষ তাঁকে ডেকে হিজাব পরতে নিষেধ করেন। ইস্তফা দিতে বাধ্য হলেও রাজ্যের সংখ্যালঘু কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছেন সানজিদা। কমিশনের চেয়ারপার্সন হাসান আহমেদ ইমরান বলেন, ‘‘কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ কলেজে হিজাব নিয়ে আপত্তির কারণ মাথায় ঢুকছে না। আমরা অবশ্যই কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি জানতে চাইব।’’

Advertisement

ওই কলেজের চেয়ারম্যান গোপাল দাস রবিবার আনন্দবাজারকে তাঁদের প্রতিষ্ঠানের পোশাক-বিধির কথাই বলেছেন। তাতে কর্মীদের পোশাকী ট্রাউজ়ার, শাড়ি, সালোয়ারের কথা বলা আছে। গোপাল বলেন, ‘‘আমাদের ড্রেস কোডে ধর্মীয় কিছু পরা যাবে না।’’ তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, সে-ক্ষেত্রে শিখ ধর্মাবলম্বী কারও পাগড়ির ক্ষেত্রে কী হবে? গোপাল বলেন, ‘‘পাগড়িতে সমস্যা নেই।’’

তা হলে হিজাবে বৈষম্য কেন? সদুত্তর মেলেনি। তবে শিক্ষিকা হিসেবে সানজিদার কোনওরকম অযোগ্যতার কথা কলেজ কর্তৃপক্ষ বলেননি। ৩৮ বছরের সানজিদা স্পষ্ট বলছেন, ‘‘আমি বোরখাও পরি না। শাড়ি, চুড়িদারের উপরে মাথা ঢাকা একটি কাপড় জড়িয়ে নিই। এ দেশের সাংবিধান ধর্মনিরপেক্ষ। তা তো সবাইকে নিজস্ব ধর্মীয় বিধি পালন করার অধিকার দিচ্ছে।’’ সমাজমাধ্যমে ওই কলেজের অনেক ছাত্রছাত্রীই সানজিদার পাশে থাকার কথা বলেছেন। তাঁর সহকর্মী শিক্ষকেরাও অনেকে এই বৈষম্যে ব্যথিত। হিজাব ধর্মীয় চিহ্ন বলে বাতিল হলে শাঁখা, নোয়া, সিঁদুর কেন ছাড় পাবে— উঠছে সেই প্রশ্নও।

বছর দু’য়েক আগে কর্নাটকে তৎকালীন বিজেপি সরকার শিক্ষাঙ্গনে হিজাব নিষিদ্ধ করায় বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। কংগ্রেস সরকার হিজাব-ফতোয়া তুলে নিলেও সুপ্রিম কোর্টে হিজাব ও ধর্মীয় অনুশাসন বিতর্কের পুরোপুরি নিষ্পত্তি হয়নি। হিজাব নিয়ে আন্তর্জাতিক স্তরেও নানা বিতর্ক হয়েছে।

অর্থনীতির প্রবীণ অধ্যাপক সৌরীন ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘জোর করে কাউকে হিজাব পরানো বা হিজাব খুলতে বাধ্য করা দুটোই ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ।’’ সানজিদা বলছেন, ‘‘আমি ইরানে মেয়েদের উপরে হিজাব চাপানোর বিরুদ্ধে লড়াইও সমর্থন করি। আবার হিজাব পরে মেয়েরা ক্রিকেট খেলে, সাঁতার কাটে। হিজাব মেয়েদের ক্ষমতায়নে বাধা বলে মানি না। ওই কলেজের মুসলিম ছাত্রীরাও ইদানীং মুশকিলে পড়ছেন। আমিও রাতারাতি ইস্তফা দিতে বাধ্য হই। আমার সঙ্গে যা হয়েছে, তা ইসলাম বিদ্বেষের প্রকাশ।’’

কলেজ কর্তৃপক্ষের নিঃশর্ত ক্ষমার দাবিতেই লড়াইটা লড়তে চান সানজিদা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement