প্রতীকী ছবি
ভারতীয় নারীর মাথার চুল উড়ে যাচ্ছে মায়ানমারে। লকডাউনের বাজারে, কলকাতা বিমানবন্দর থেকে সেই চুলের রফতানি বেড়েছে অনেকটাই। প্রতি দিন গড়ে আট থেকে দশ টন!
এত চুল আসছেই বা কোথা থেকে আর যাচ্ছেই বা কেন?
বিমানবন্দর সূত্রের খবর, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শুধুমাত্র মহিলাদের মাথার চুল জোগাড়ে নেমেছেন অনেকে। কলকাতা থেকে মায়ানমারে চুল পাঠানোর কাজ করেন রফতানি এজেন্ট অরূপ ঘোষ। তিনি জানিয়েছেন, রাজ্যের প্রায় ৪০ জন ব্যবসায়ী এই চুল জোগাড় করে বস্তায় ভরে নিয়ে আসছেন বিমানবন্দরে। তার পরে পণ্যবাহী বিমানে তা সটান পৌঁছে যাচ্ছে মায়ানমার। অরূপবাবু একা নন, কলকাতা বিমানবন্দর থেকে এই চুল পাঠানোর কাজে যুক্ত রয়েছেন আরও জনা তিনেক এজেন্ট।
অরূপবাবু বলেন, ‘‘এই চুলকে প্রধানত কোম্বিং হেয়ার বলে। আঁচড়ানোর সময়ে অনেক মহিলার মাথা থেকে চিরুনির সঙ্গে চুল উঠে আসে। যাঁরা চুলের ব্যবসা করেন, তাঁদের বেশ কয়েক জন নির্দিষ্ট গ্রাহক থাকেন। সেই মহিলা গ্রাহকেরা চিরুনিতে উঠে আসা চুল আলাদা করে জমিয়ে রেখে দেন। সময় মতো ওই জমানো চুল কিনে নেন ব্যবসায়ীরা। কেটে ফেলা চুল বা পুরুষদের চুলের এই বাজারদর নেই।’’
মায়ানমারে এই চুল নিয়ে কী হয়?
অরূপবাবু জানান, কালো, সাদা, বাদামি-সহ নানা রঙের চুল থাকে। মায়ানমারে নিয়ে গিয়ে সেগুলি বেছে রং অনুযায়ী আলাদা করা হয়। তার পরে সেগুলির ময়লা পরিষ্কার করে, প্যাকেটে ভরে পাঠিয়ে দেওয়া হয় চিনে। ভারতীয় মহিলাদের ঝরে যাওয়া চুল থেকে সেখানে তৈরি হয় পরচুলা। যার চাহিদা বিশ্ব জুড়ে।
কলকাতায় বা ভারতের অন্যত্র কেন এই চুল বাছাইয়ের কাজ হয় না?
বিমানবন্দর সূত্রের খবর, প্রথমত কলকাতা তথা এই রাজ্যে শ্রমের মূল্য মায়ানমারের থেকে বেশি। তা ছাড়া, এই চুল বাছাইয়ের কাজে অনীহা আছে এখানকার মানুষদের। মায়ানমারে প্রধানত ১৮ বছরের কম বয়সি এবং বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের এই কাজে লাগানো হয়। গাছের তলায় বসে তাঁরা ন্যূনতম মজুরির বিনিময়ে এই কাজ করেন।
অরূপবাবু জানান, মূলত ২০০২ সাল থেকে এই চুল রফতানি শুরু হয়। আগে রফতানির অনেকটাই হত সড়কপথে। এখন সড়কপথ বন্ধ। তাই সবটাই বিমানে করে হচ্ছে।
যে উড়ান সংস্থার পণ্যবাহী বিমানে সপ্তাহে চার-পাঁচ দিন এই চুল পাঠানো হচ্ছে, তার এক কর্তা জানিয়েছেন, কলকাতা-মায়ানমার রুটে যখন যাত্রী-বিমান চালু ছিল, তখন সেই যাত্রী বিমানেও পণ্য হিসেবে এই চুল যাচ্ছিল। এখন যাত্রী-বিমান বন্ধ। তাই পুরোটাই পণ্যবাহী বিমানে করে পাঠানো হচ্ছে।