প্রথম দিন শিয়ালদহ মেট্রো স্টেশনে যাত্রীদের ভিড়। ফাইল চিত্র
উত্তর শহরতলির তুলনায় দক্ষিণের যাত্রীদেরই ইস্ট-ওয়েস্টমেট্রো শিয়ালদহ থেকে বেশি টানছে। বিধাননগর রোড স্টেশন থেকে সল্টলেকমুখী বাস ও অটোয় যাত্রীদের ভিড় অন্তত সে কথাই বলছে। শিয়ালদহ পৌঁছতে উত্তর ও মেন শাখার লোকাল ট্রেনের দেরি ও ভিড়কেই মূলত দুষছেন তাঁরা।
বাণিজ্যিক পরিষেবা শুরু হওয়ার দু’সপ্তাহের মধ্যেই প্রত্যাশার চেয়ে বেশি যাত্রী পাচ্ছে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো। সর্বাধিক ৩৫ হাজার যাত্রী পাওয়ার আশা করেছিলেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ। বাস্তবে সেই হিসেব মাঝেমধ্যেই ছাড়িয়ে যাচ্ছে বলে দাবি মেট্রোর। ১৬ জুলাই ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোয় যাত্রী সংখ্যা ৩২ হাজার ছুঁই ছুঁই হয়েছিল। ২০ জুলাই তা এক লাফে ঠেকে ৪৬ হাজারে। ২১ জুলাই তৃণমূলের সমাবেশের দিনে যাত্রী হয় ৪২ হাজারের কাছাকাছি। পরদিন ইস্ট-ওয়েস্টে যাত্রী ছিল ৩৬ হাজার। আর চলতি সপ্তাহে সোমবার যাত্রী ছিল ৩৪ হাজারের কাছাকাছি।
মেট্রোর যাত্রী-সংখ্যা উল্লেখ্যযোগ্য হারে বাড়লেও শিয়ালদহ উত্তর শাখার যাত্রীদের এখনও সেই অর্থে টানতে পারেনি ওই মেট্রো। সরকারি পরিবহণ নিগমের আধিকারিক এবং বেসরকারি এসি-বাসের মালিকদের অভিজ্ঞতাও সে কথাই বলছে। বিধাননগর স্টেশন থেকে রাজ্য পরিবহণ নিগমের এসি ৩০ এস রুটের বাস চলে। এ ছাড়াও সিএনজি-চালিত বেসরকারি বাতানুকূল বাসের রুটও রয়েছে। ওই দু’টি রুটের যাত্রী সংখ্যায় খুব বেশি প্রভাব পড়েনি বলেই সূত্রের দাবি। বরং সরকারি নন-এসি রুটের যাত্রী সামান্য হলেও কমেছে। অটোয় যাত্রী আগের তুলনায় কমলেও ভাটার টান এখনও নজরে পড়ছে না। শিয়ালদহ থেকে করুণাময়ী এবং সেক্টর ফাইভগামী যাত্রীদের দাবি, উত্তরের তুলনায় দক্ষিণ শহরতলির যাত্রীদের জন্য নতুন মেট্রো বেশি সুবিধা এনেছে। এ জন্য উত্তর শহরতলির ট্রেনের শিয়ালদহ স্টেশনে পৌঁছতে বিলম্বকেই দায়ী করছেন তাঁরা। যাত্রীরা জানাচ্ছেন, শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার লোকাল ট্রেন থেকে নেমে ৫০ মিটারের কম দূরত্বে মেট্রোর পরিসরে প্রবেশ করছেন। এ ছাড়া দক্ষিণে ট্রেনের জট কম হওয়ায় শিয়ালদহে ঢুকতে লোকাল ট্রেনকে উত্তরের মতো অপেক্ষা করতেও হয় না।
তুলনায় উত্তর থেকে আসা লোকাল ট্রেন শিয়ালদহে ঢোকার আগে প্রায়ই অপেক্ষায় থাকে। তা ছাড়া লোকাল ট্রেনের পাশাপাশি দূরপাল্লার ট্রেন ছাড়ে শিয়ালদহ উত্তর এবং মেন শাখা থেকে। অনেক ক্ষেত্রে সে জন্যও ট্রেন স্টেশনে ঢোকার আগে থমকে থাকে বলে দাবি যাত্রীদের। পাশাপাশি, শিয়ালদহ উত্তর স্টেশনের সঙ্গে উত্তর এবং মেন শাখার সংযোগকারী সাবওয়ে তৈরি না হওয়ায় যাত্রীদের অনেকটা ভিড় ঠেলে হেঁটে দক্ষিণের প্রবেশপথ দিয়ে ইস্ট-ওয়েস্টের মেট্রো স্টেশনের চৌহদ্দিতে ঢুকতে হয়।
সরকারি পরিবহণ নিগমের এক আধিকারিকের দাবি, ‘‘বাতানুকূল বাসের যাত্রী সংখ্যায় সে ভাবে আঁচ পড়েনি।’’ আর ‘সিটি সাবার্বান সার্ভিস’-এর সাধারণ সম্পাদক টিটু সাহা বলছেন, ‘‘মেট্রোর জন্য যাত্রীর সংখ্যা খানিকটা ওঠানামা করলেও বড় প্রভাব পড়েনি।’’ রেলের কর্তারাও মানছেন, শিয়ালদহ উত্তর ও মেন শাখায় অনেক বেশি ট্রেনের চাপ সামলাতে হয় তাঁদের। তবে মাস দুয়েকের মধ্যে সাবওয়ে তৈরি হলে উত্তরের থেকে ইস্ট-ওয়েস্টে যাত্রীর বাড়বে বলে আশা মেট্রোর কর্তাদের।