—ফাইল চিত্র
সামান্যতম সুযোগ পেতেই কলকাতা বিমানবন্দরের টার্মিনালের সামনে আবার সক্রিয়তা বেড়েছে দালাল-চক্রের।
বিমানবন্দর থেকে শহরের বিভিন্ন জায়গায় যেতে যাত্রীদের একটি বড় অংশই ব্যবহার করেন ভলভো বাস। কিন্তু সেই ভলভো বাসের সংখ্যা এখন ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে। আগে যেখানে বিমানবন্দর থেকে ১০-১৫ মিনিট অন্তর ভলভো বাস পাওয়া যেত, এখন তার জন্য অন্তত আধ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে। সূত্রের খবর, তেল কেনার টাকা নেই সরকারের। রক্ষণাবেক্ষণও হচ্ছে না।
আর এই সুযোগেই সক্রিয় হয়েছে দালাল-চক্র। বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনালের বাইরে সাদা গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন এক দল গাড়িচালক। যে যাত্রীরা উড়ান থেকে নেমে ভলভো বাস ধরবেন বলে আসেন, তাঁদের অনেকেই বাসের জন্য দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে চান না। অভিযোগ, মালপত্র হাতে যাত্রীদের বাসের জন্য অপেক্ষা করতে দেখলেই এগিয়ে আসছেন ওই গাড়িচালক ও দালালেরা। অনেক বেশি টাকায় গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার প্রস্তাব দিচ্ছেন তাঁরা। অনেকেই টাকা বাঁচাতে অপেক্ষা করছেন। অনেকে বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে ওই সাদা গাড়ি নিয়ে চলে যাচ্ছেন।
আরও খবর: টিকা নিয়ে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ৪৪৭ জনের, গুরুতর নয়, বলল কেন্দ্র
বিমানবন্দরের বেশ কিছু অফিসারও নিয়মিত ভলভো বাসে যাতায়াত করেন। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের ম্যানেজার মৌমিতা নন্দীর অভিযোগ, ‘‘ইদানীং তো রাত ৮টার পরে আর বাসই পাওয়া যায় না। আমি কাছেই কৈখালি থেকে আসি। আগে এক সময়ে ১০-১৫ মিনিট অন্তর বাস পেতাম। এখন প্রায় ৪৫ মিনিট পরে পাচ্ছি।’’ অভিযোগ, বিমানবন্দর থেকে অ্যাপ-ক্যাবও চড়া হারে ভাড়া হাঁকছে।
আরও খবর: জোট হলে কংগ্রেসের জেতা আসনে প্রার্থী দেবেন না আব্বাস, দাবি সোমেন পুত্রের
বিমানবন্দর সূত্রের খবর, হাওড়া ও টালিগঞ্জ রুটে ভলভো বাস নিয়মিত চলে। রাজ্য পরিবহণ নিগম ওই বাসগুলি চালায়। চালকেরা জানিয়েছেন, প্রতি রাতে কাজ শেষে ফেরার সময়ে কখনও মানিকতলা, কখনও বা গড়িয়া ডিপো থেকে তাঁরা ট্যাঙ্ক ভর্তি করে তেল তুলে নেন। সরকারের ওই সমস্ত ডিপোয় তেল সরবরাহ করে ইন্ডিয়ান অয়েল। কিন্তু, পরিবহণ দফতরের একটি সূত্র জানিয়েছে, পরিবহণ নিগমের হাতে এখন নাকি টাকা নেই। ফলে, তেলের দাম মেটানো যাচ্ছে না। তাই ইন্ডিয়ান অয়েল থেকে তেল সরবরাহ অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। ডিপো থেকে নিয়মিত তেল পাচ্ছেন না চালকেরাও। মাঝে পর পর দু’দিন তেল না পাওয়ার ফলে বিমানবন্দর থেকে সারা দিনে হাতে গোনা চার-পাঁচটি বাস চলেছে। ওই দু’দিন চূড়ান্ত সমস্যায় পড়েছিলেন যাত্রী ও বিমানবন্দরের অফিসারেরা।
টাকার অভাবে বাসের রক্ষণাবেক্ষণও বন্ধ হতে বসেছে। অভিযোগ, কিছু দিন আগেও যেখানে বিমানবন্দর থেকে ৩৬টি বাস যাতায়াত করছিল, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এখন সেই সংখ্যাটি কমে ৩২-এ নেমে এসেছে। রাজ্য সরকারের অর্থ দফতরকে এই টাকার অভাবের কথা বলা হয়েছে। পরিবহণ দফতরের কর্তাদের একাংশের দাবি, কিছু টাকা সম্প্রতি পাওয়া গিয়েছে। তাতে সাময়িক ভাবে সমস্যার সমাধান হয়েছে।
তবে, উল্টো ছবিও রয়েছে। বিমানবন্দরের বেসরকারি উড়ান সংস্থার অফিসার দেবারতি ভট্টাচার্য যেমন জানিয়েছেন, তিনি আগের মতোই নিয়মিত এবং সময় মতো ভলভো পাচ্ছেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমি বাগুইআটি থেকে যাতায়াত করি। এখনও পর্যন্ত তেমন সমস্যা হয়নি।’’
একটি সূত্রের খবর, ভলভো চালিয়ে আখেরে সরকারের লোকসানই হচ্ছে। প্রথমত, ভাড়া তুলনায় বেশি বলে অনেকে ওঠেন না। দ্বিতীয়ত, কোভিড পরিস্থিতিতে বদ্ধ এসি বাসে যাতায়াত অনেকেই এড়িয়ে চলছেন। তৃতীয়ত, প্রাক্ কোভিড-পর্বে যত মানুষ অফিস যাতায়াত করছিলেন, তাঁদের অনেকেরই ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ চলায় যাত্রী এমনিতেও কমে গিয়েছে।