পেনশনের অপেক্ষায় অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা। — ফাইল চিত্র।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত কলকাতা পুরসভা থেকে ৮১০ জন কর্মী অবসর নিয়েছেন। কিন্তু তাঁদের কেউই এখনও পর্যন্ত অবসরকালীন গ্র্যাচুইটি ও কমিউটেশন (পেনশনের একাংশের বদলে এককালীন টাকা) হাতে পাননি। পুরসভা সূত্রের খবর, বকেয়া মিটিয়ে দিতে এই মুহূর্তে প্রয়োজন ২১৬ কোটি টাকা। ওই টাকা দ্রুত পেতে ইতিমধ্যেই পুরসভার পেনশন দফতরের তরফে সিএমএফঅ্যান্ডএ (কন্ট্রোলার অব মিউনিসিপ্যাল ফিনান্স অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস)-কে জানানো হয়েছে। কলকাতা পুরসভার অর্থদফতরের এক শীর্ষ কর্তা সোমবার বলেন, ‘‘কোষাগারের সঞ্চিত তহবিলের অবস্থা বুঝে ধাপে ধাপে বকেয়া টাকা পেনশন দফতরকে দেওয়া হবে।’’
বকেয়া মোটা টাকা হাতে না পাওয়ায় নিত্যদিনই পুরসভার পেনশন দফতরে গিয়ে বসে থাকছেন অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা। বকেয়া টাকা কবে মিলবে, সে বিষয়ে পেনশন দফতরের আধিকারিকেরা তাঁদের কোনও আশ্বাস দিতে পারছেন না। প্রসঙ্গত, গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের পেনশনের সমস্যা চলছে। জানুয়ারি মাসে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পরে জানুয়ারি পর্যন্ত অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা বকেয়া টাকা পেলেও ফের ফেব্রুয়ারি থেকে আগের মতোই অবস্থা হয়। অবসরকালীন বকেয়া টাকা কবে পাবেন, তা জানতে ফেব্রুয়ারি মাসে অবসর নেওয়া এক পুরকর্মী সোমবার দফতরে এসেছিলেন। তিনি বেশ হতাশার সুরে বলেন, ‘‘দশ মাস আগে অবসর নিলেও এখনও গ্র্যাচুইটি ও কমিউটেশনের টাকাটা হাতে পেলাম না। আমি ও আমার স্ত্রী অসুস্থ। মাসে অনেক টাকার ওষুধ কিনতে হয়। পেনশন বাবদ যে টাকা হাতে পাচ্ছি, তাতে প্রয়োজন মিটছে না।’’
পেনশন দফতর সূত্রের খবর, অবসরপ্রাপ্ত পুরকর্মীদের কেবল পেনশনই দেওয়া হচ্ছে এখন। ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত যথাক্রমে ১১৭, ১১৭, ৭৩, ৭৮, ১০২, ৭৪, ৯০, ৭৭ এবং ৮২ জন পুরকর্মী অবসর নিয়েছেন। চলতি মাসে ৯৪ জন কর্মী অবসর নেবেন। পুরসভা সূত্রের খবর, করোনার পরে বিভিন্ন বিভাগে কর আদায় তেমন বাড়েনি। পুরসভার কোষাগারের অবস্থাও ভাল নয়। পুরসভার অর্থ দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘কোষাগারে পর্যাপ্ত টাকা এলেই ধাপে ধাপে পেনশন দফতরে টাকা দেওয়া হবে।’’ তবে কবে বকেয়া ২১৬ কোটি টাকা দেওয়া হবে, সেই বিষয়ে কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি অর্থ দফতরের আধিকারিকেরা। গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সাতটি ধাপে পুরসভার অর্থ দফতর পেনশন বিভাগকে ১৭০ কোটি টাকা দিয়েছিল। সেই টাকায় চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত অবসরপ্রাপ্তদের গ্র্যাচুইটি ও কমিউটেশনের টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।
বিজেপি কাউন্সিলর সজল ঘোষের অভিযোগ, ‘‘কোনও ভাবেই আপস না করে বকেয়া সম্পত্তিকর আদায় বাড়াতে হবে। এমনিতেই দান-খয়রাতি করে পুরসভার আর্থিক অবস্থা অতি সঙ্কটে। সম্পত্তিকর বাবদ বকেয়া কয়েক হাজার কোটি আদায় না করলে এ বার পুরকর্মীদের বেতন দিতেও সমস্যা হবে।’’