মেয়র, তবু ফিরহাদ এখনও ‘কাউন্সিলর নন’

পুরসভা সূত্রের খবর, ওই ওয়েবসাইট চালু হয়েছিল ২০০৯-’১০ সালে। তখন থেকে এখনও পর্যন্ত যত বার ‘হিট’ হয়েছে ওয়েবসাইটে, তার সংখ্যা হল ওই প্রায় ৪০ লক্ষ।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০১৯ ০২:৪৫
Share:

ফিরহাদ হাকিম।—ফাইল চিত্র।

মেয়র হয়েছেন ফিরহাদ হাকিম। তা-ও ছ’মাস হয়ে গেল। অথচ এখনও কাউন্সিলরই হতে পারলেন না! অন্তত কলকাতা পুরসভার ওয়েবসাইট খুললে তেমনটাই মনে হতে পারে।

Advertisement

প্রসঙ্গত, পুরনো পুর আইন অনুযায়ী, কলকাতা পুরসভার মেয়র হতে হলে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে কাউন্সিলর হতে হবে। কিন্তু গত বছরের সংশোধিত আইনে বলা হয়েছিল, মেয়র পদে কেউ বসতেই পারেন, তবে তাঁকে ছ’মাসের মধ্যে কাউন্সিলর হিসেবে জিতে আসতে হবে। পুর আইনে সংশোধন নিয়ে তখন প্রতিবাদ করেছিলেন বিরোধীরা।

ঘটনাপ্রবাহ বলছে, ‘পরিবর্তন’ শেষে মানতে ‘বাধ্য’ হয়েছিলেন বিরোধীরাও। তবে সে ‘পরিবর্তন’ মানতে নারাজ কলকাতা পুরসভার ওয়েবসাইটই! তাই রবিবারও ৮২ নম্বর ওয়ার্ড, যেখান থেকে ফিরহাদ জানুয়ারিতে কাউন্সিলর হিসেবে জয়ী হয়েছিলেন, পুরসভার ওয়েবসাইটে সেখানকার প্রাক্তন কাউন্সিলর প্রণব বিশ্বাসের নাম এখনও জ্বলজ্বল করছে। পুরসভার ওয়েবসাইটে তথ্যভ্রান্তি অবশ্য নতুন নয়। এর আগে মেয়র হওয়ার পরেও মেয়র-নামের ক্রমতালিকায় ফিরহাদের নাম সঠিক সময়ে সংযোজিত হয়নি। বিষয়টি নজরে এলে সে ভ্রম সংশোধন করেছিল পুরসভা।

Advertisement

কলকাতা পুরসভার ওয়েবসাইট অনুযায়ী, ৮২ নম্বর ওয়ার্ডে মেয়র ফিরহাদ হাকিমের পরিবর্তে কাউন্সিলর হিসেবে নাম রয়েছে প্রণব বিশ্বাসের (চিহ্নিত)। রবিবার রাতেও ওয়েবসাইটে এমন দেখা গিয়েছে।

পুরকর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, অনলাইনের তথ্যভ্রান্তিকে পুরসভা অভ্যাস করে ফেলেছে। ফলে অনলাইন-সক্রিয় যুগে কেউ যদি সঠিক তথ্যের জন্য পুরসভার ওয়েবসাইটের উপরে ভরসা করেন, তা হলে তাঁকে ভুগতে হবে। অথচ নাগরিকদের একাংশের অনলাইন সক্রিয়তার কথা ভেবেই পুর কর্তৃপক্ষ একের পর এক অ্যাপ চালু করছেন। বেআইনি হোর্ডিং, পার্কিং থেকে ‘পে অ্যান্ড ইউজ টয়লেট’, জলমগ্ন এলাকার মতো একাধিক তথ্য সেখানে থাকছে। সরকারি ওয়েবসাইট যাতে নিয়মিত আপডেট করা হয়, সে ব্যাপারে প্রশাসনের শীর্ষ স্তর থেকে বারবার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তার পরেও এমন ‘ভ্রান্তি’ গা-ছাড়া মনোভাবের কারণেই কি না, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েও। রবিবার রাত পর্যন্ত ৮২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হিসেবে প্রণব বিশ্বাসের নাম যখন দেখা গিয়েছে, তখন ওয়েবসাইটের প্রথম পাতায় ‘ভিজিটর্স নম্বর’ দেখাচ্ছে, ৪০ লক্ষ ৩ হাজার ৭৩১!

পুরসভা সূত্রের খবর, ওই ওয়েবসাইট চালু হয়েছিল ২০০৯-’১০ সালে। তখন থেকে এখনও পর্যন্ত যত বার ‘হিট’ হয়েছে ওয়েবসাইটে, তার সংখ্যা হল ওই প্রায় ৪০ লক্ষ। নিছক সংখ্যাতত্ত্বের বিচারে বছরে চার লক্ষ বার ‘হিট’ হয়েছে পুরসভার ওয়েবসাইট, ছ’মাসে গড়ে দু’লক্ষ বার। অর্থাৎ, সে দিক থেকে যদি দেখা যায়, তা হলে কমপক্ষে দু’লক্ষ বার ফিরহাদ যে কাউন্সিলর নন, সে তথ্য সংশ্লিষ্ট ‘ইউজ়ার’-এর কাছে গিয়েছে। এক পুরকর্তা বলেন, ‘‘এ এক ভয়ানক ভুল তথ্য প্রতিনিয়ত সার্কুলেট করছি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে।’’

প্রসঙ্গত, গত নভেম্বরে মেয়রের পদ থেকে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের ইস্তফার পরেই ফিরহাদের নাম মেয়র হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ডিসেম্বরে আনুষ্ঠানিক ভাবে মেয়র পদে শপথ নিয়েছিলেন ফিরহাদ। তার পরের মাসেই, অর্থাৎ, জানুয়ারিতে ৭৫ শতাংশেরও বেশি ভোট পেয়ে ৮২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি। কিন্তু সে তথ্য জানে না পুরসভার ওয়েবসাইটই!

অবশ্য শুধু ফিরহাদই তো নন, এই তথ্যভ্রান্তির থেকে বাদ নেই অন্য বিভাগও। বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায় মেয়র পারিষদ হওয়ার পরে আট নম্বর বরোর চেয়ারম্যান পদ থেকে সরে যান। তাঁর জায়গায় বরো চেয়ারম্যান হন সন্দীপ বক্সি। অথচ পুরসভার ওয়েবসাইট বলছে, আট নম্বর বরোর চেয়ারম্যান এখনও বৈশ্বানরবাবুই। ফলে ভুল তথ্যের এ রকম ‘মণিমুক্তো’ সারাটা ওয়েবসাইটেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে বলে জানাচ্ছেন পুরকর্তাদের একাংশ। এক পুরকর্তার কথায়, ‘‘কেউ যদি ওয়েবসাইটের তথ্য দেখে বর্তমান পরিস্থিতি জানার চেষ্টা করেন, তিনি ভুল জানবেন! কারণ, সকলে যেটা জানেন, সেটা পুরসভার ওয়েবসাইট এখনও জানে না!’’ পুর কমিশনার খলিল আহমেদ বলেন, ‘‘তথ্য সব সময়ে আপডেট করার কথা। কিন্তু কেন এ ক্ষেত্রে সেটা হয়নি, খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’

ওয়েবসাইটে সার্বিক তথ্য আপডেট না হওয়া নিয়ে মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘ওয়েবসাইট ঢেলে সাজানোর কথা ভাবছি। শুধু বরো চেয়ারম্যান বা কাউন্সিলরদের নামই নয়, কোনও বিষয়ে পুরসভা কী নীতি গ্রহণ করছে, তা-ও ওয়েবসাইটে উল্লেখ থাকবে। আস্তে আস্তে সে সব করা হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement