জ্বলন্ত: বহুতলের ১৭ তলার ফ্ল্যাটে জ্বলছে আগুন। সোমবার, এলগিন রোডে। ছবি: সুমন বল্লভ
ভবানীপুর এলাকার এলগিন রোড মোড়ের কাছে জাস্টিস চন্দ্রমাধব রোডের একটি বহুতলের সতেরো ও আঠারো তলার দু’টি ফ্ল্যাটে সোমবার সকালে আগুন লাগে। দমকলের ১২টি ইঞ্জিন এবং বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী প্রায় চার ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণ করে। আগুনে কেউ হতাহত হননি বলেই জানিয়েছে পুলিশ। আগুন দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন আবাসনের বাসিন্দারা। অনেকের দাবি, আগুন লাগার পরে বিকট শব্দ পেয়েছেন তাঁরা। সেই শব্দ গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের কি না, তা খতিয়ে দেখছে দমকল।
দমকলের আধিকারিকেরা জানান, যে দু’টি ফ্ল্যাটে আগুন লেগেছিল সেগুলিই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দমকলের ডিজি জগমোহন ঘটনাস্থলে যান। তিনি বলেন, ‘‘সতেরো তলার ফ্ল্যাটটিই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আঠারো তলার ফ্ল্যাটটির ততটা ক্ষতি হয়নি। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান আবাসনে বিদ্যুতের লাইনের কোনও জায়গা থেকে আগুন লেগে থাকতে পারে। তবে ফরেন্সিক তদন্তের পরেই আগুন লাগার প্রকৃত কারণ বোঝা যাবে।’’ ওই বহুতলে আগুন নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ঠিক মতো ছিল কি না, তা-ও খতিয়ে দেখছে দমকল।
পুলিশ ও দমকল সূত্রের খবর, ওই বহুতল আবাসনের প্রতিটি তলেই রয়েছে দু’টি করে ফ্ল্যাট। পাঁচ হাজার বর্গফুটের এক-একটি ফ্ল্যাটে অধিকাংশই উচ্চবিত্ত পরিবারের বাস। ওই আবাসনে থাকেন মার্কিন দূতাবাসের দুই শীর্ষ আধিকারিকও। পুলিশ জানায়, ওই ফ্ল্যাটের ১৭ তলায় অনিরুদ্ধ মোদী নামে এক আবাসিকের ১৬এ নম্বর ফ্ল্যাটে প্রথমে আগুন লাগে। আবাসনের নিরাপত্তাকর্মীরা জানান, ফ্ল্যাটে আগুন লাগার বিষয়টি অনিরুদ্ধবাবুরা যত ক্ষণে বুঝতে পারেন, তত ক্ষণে তাঁদের ফ্ল্যাটের খানিকটা অংশে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। অনিরুদ্ধবাবু ফোন করে আগুন লাগার খবর দেন আবাসনের নিরাপত্তাকর্মীদের অফিসে। সেখান থেকে ফ্ল্যাটের বাকি আবাসিকদের সতর্ক করে নীচে নেমে আসতে বলা হয়।
এক নিরাপত্তাকর্মী বলেন, ‘‘অনিরুদ্ধবাবুর ফ্ল্যাটের সামনে গিয়ে দেখি চার দিক কালো ধোঁয়ায় ভরে গিয়েছে। ওঁর বাড়ির দরজা, জানলা দাউদাউ করে জ্বলছে। তখন আর আবাসনের নিজস্ব অগ্নি-নির্বাপক দিয়ে আগুন নেভানোর মতো পরিস্থিতি ছিল না।’’
দমকলকর্মীদের একাংশের অবশ্য অভিযোগ, আগুন নেভাতে এসে তাঁরা দেখেন আবাসনের নিজস্ব পাম্প কাজ করছে না। তখন তাঁরা দমকলের পাম্প লাগিয়ে ওই বহুতলের সতেরো তলায় জল নিয়ে গিয়ে আগুন নেভানো শুরু করেন।
ঘটনাস্থলে পৌঁছে দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু বলেন, ‘‘অত উঁচুতে হাইড্রলিক ল্যাডার নিয়ে সতেরো তলায় পৌঁছনোর চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু হাইড্রলিক ল্যাডার বসানোর মতো জায়গা পাওয়া যায়নি। এ দিন হাওয়া বেশি থাকায় আগুন উপরের তলায় ছড়িয়ে পড়ে। তবে দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণ করেছে দমকল।’’ যদিও আবাসনের বাসিন্দাদের দাবি, তাঁদের একটি পাম্প আগুনেই নষ্ট হয়েছে। অন্য পাম্পটি অবশ্য চালু ছিল।
আগুন লাগার খবর শুনে এলাকার আশপাশের বাসিন্দারা ওই আবাসনের সামনে জড়ো হয়ে যান। ১৭ তলার বারান্দা ও জানলায় আগুনের লেলিহান শিখা জ্বলতে থাকার ছবিও মোবাইলে তুলতে থাকেন অনেকে। পুলিশ ওই ভিড় সরিয়ে দেয়। করোনা পরিস্থিতিতে ঘরে থাকার নির্দেশ দেওয়া হলেও ওই বহুতলের কয়েক জন আবাসিককে দেখা যায় নিরুপায় হয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে আবাসন ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। অনেককে দেখা যায় প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে জড়ো হয়ে আবাসনের বাইরে দাড়িয়ে রয়েছেন।
দমকলমন্ত্রী জানান, ওই আবাসনে বর্তমানে বিদ্যুতের সংযোগ কেটে দেওয়া হয়েছে। তবে তা দ্রুত সারিয়ে ফেলা হচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব পুরো আবাসনে বিদ্যুৎ চলে আসবে। তার পরে আবাসিকেরাও দ্রুত নিজের ফ্ল্যাটে ফিরে যেতে পারবেন।