অঘটন: আগুন নেভানোর চেষ্টা দমকলকর্মীদের। শনিবার, উল্টোডাঙা রোডে। নিজস্ব চিত্র
পুড়ে গেল ‘বিপজ্জনক’ বলে ঘোষিত একটি বাড়ি। শনিবার দুপুরে বড়তলা থানা এলাকায় উল্টোডাঙা রোডে ওই ঘটনা ঘটে। দমকলের সাতটি ইঞ্জিন আড়াই ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন আয়ত্তে আনে। আগুনে কেউ হতাহত না হলেও ওই বাড়ির বাসিন্দা তেরো-চোদ্দোটি পরিবারের অনেকেরই মূল্যবান নথিপত্র, আসবাব ও গৃহস্থালির জিনিসপত্র পুড়ে গিয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ১৪ নম্বর উল্টোডাঙা রোডের ওই বাড়িটি বেশ পুরনো। একতলার অংশটি পাকা হলেও দোতলাটি বাঁশ, কাঠ ও টিন দিয়ে তৈরি। দু’টি তলা মিলিয়ে বাড়িটিতে তেরো-চোদ্দোটি ঘর রয়েছে। একতলায় কয়েকটি দোকানও রয়েছে। এ দিন বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ ওই বাড়ির দোতলায় একটি গ্যাস সিলিন্ডার ফেটে যায়। শব্দে কেঁপে ওঠে এলাকা। তার পরেই স্থানীয় লোকজন দেখতে পান, রাস্তার দিকের একটি ঘরে আগুন লেগে গিয়েছে। দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে দোতলার অন্য ঘরগুলিতে। দাউদাউ করে জ্বলতে থাকে সেগুলি।
স্থানীয় লোকজনই প্রথমে দোতলার ঘরগুলি থেকে বাসিন্দাদের নামাতে শুরু করেন। খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছয় বড়তলা থানার পুলিশ। কয়েক জন পুলিশ অফিসার দোতলায় উঠে অন্য ঘরগুলি থেকে রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার সরাতে শুরু করেন। সেগুলি সরানো না-হলে আরও বিস্ফোরণ ঘটত বলে দমকলের অফিসারদের অনুমান। এমনকি, আগুন আশপাশের বাড়িতেও ছড়িয়ে পড়তে পারত। দমকলের এক অফিসার জানান, প্রাথমিক ভাবে দু’টি সিলিন্ডার ফেটেছে বলে প্রাথমিক ভাবে তাঁরা জানতে পেরেছেন।
পুলিশ জানায়, পরিস্থিতি সামাল দিতে দেরি না-করে কলকাতা পুলিশের বিপর্যয় মোকাবিলা দলকে কাজে নামানো হয়। কাজে নামেন কলকাতা পুরসভার ১০০ দিনের কাজের কর্মীরাও। কলকাতা পুলিশের উত্তর ডিভিশনের বিভিন্ন থানা থেকে অফিসার ও কর্মীদের ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। দমকলের মানিকতলা কেন্দ্র থেকেও ইঞ্জিন পাঠানো হয় আগুন নেভাতে।
এ দিন বেলা দেড়টা নাগাদ ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, দমকলের কাজের সুবিধার জন্য এপিসি রোড থেকে উল্টোডাঙা রোডে ঢোকার অংশটি গার্ডরেল দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দমকলকর্মীরা তখনও বাড়ির দোতলার অংশে হোসপাইপ দিয়ে জল ঢেলে যাচ্ছেন। পুড়ে যাওয়া বাঁশ, কাঠ ও টিন ব্যাটারিচালিত গাড়িতে চাপিয়ে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন ১০০ দিনের কাজের কর্মীরা।
ওই বাড়ির বাসিন্দা ময়ূরী মণ্ডল এ দিন বলেন, ‘‘আমার মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকের মার্কশিট, অ্যাডমিট কার্ড সব আগুনে পুড়ে গিয়েছে। কী করে যে আবার ওগুলো পাব, বুঝতে পারছি না।’’
যে বাড়িতে আগুন লাগে, সেটি কলকাতা পুরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের অধীন। ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রণতি ভট্টাচার্য এ দিন জানান, পুরসভা অনেক আগেই বাড়িটিতে ‘বিপজ্জনক’ বোর্ড টাঙিয়ে দিয়েছে। দোতলা ও একতলার ভাড়াটেরা সেখানে দীর্ঘ দিন ধরে আছেন। সব পুড়ে গিয়ে তাঁরা কার্যত গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। আপাতত পুরসভার কমিউনিটি হলে তাঁদের থাকার ব্যবস্থা করার কথা ভাবা হচ্ছে।