—প্রতীকী চিত্র।
কেউ মিড-ডে মিলের চাল, ডাল, আলু রাখবেন বলে দোকানঘর কিনে ফেলেছিলেন, কেউ আবার ঘর ভাড়া নিয়েছিলেন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের সামগ্রী রাখবেন বলে। কিন্তু দিনের পর দিন পেরিয়ে গেলেও ঘরগুলি কাজে লাগাতে পারছিলেন না। অতঃপর তাঁরা বুঝে যান যে, প্রতারিত হয়েছেন! অভিযোগ, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের সামগ্রী মজুত রাখার বরাত পাইয়ে দেওয়ার নাম করে এঁদেরই এক জনের থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা নেওয়া হয়েছে! তা ছাড়াও একাধিক ব্যক্তির থেকে লক্ষাধিক করে টাকা হাতানো হয়েছে বলে অভিযোগ। এখনও পর্যন্ত সব মিলিয়ে প্রায় ছ’কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগের তদন্তে নেমে তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আরও তিন জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর।
গত ১৭ মে এ বিষয়ে উত্তর কলকাতার শ্যামপুকুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। অভিযোগকারীর দাবি, প্রতারকদের মধ্যে এক জন নিজেকে আইএএস অফিসার বলে পরিচয় দিয়েছিল। নিজেকে রাজ্য সরকারের কাজে নিযুক্ত বলে দাবি করা ওই ব্যক্তি মিড-ডে মিলের ‘স্টক’ রাখার বরাত পাইয়ে দেবে বলে পাঁচ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকা নেয়। রবার স্ট্যাম্প মারা একটি কাগজও দেওয়া হয় অভিযোগকারীকে। এর পরে তদন্তে নেমে পুলিশ শ্যামপুকুর থানা এলাকার বাসিন্দা বলরাম বসাক এবং মীনাক্ষী বসাক নামে দু’জনকে মঙ্গলবার গ্রেফতার করে। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করে শিবশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় নামে তৃতীয় জনকে গ্রেফতার করা হয়। শিবশঙ্করের বাড়ি কেষ্টপুর এলাকায়। তিন জনকেই বাগুইআটি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। এই তিন জন ছাড়া আরও তিন জনকে আটক করা হয়েছে বলে লালবাজার জানিয়েছে।
ধৃতদের জেরা করে জানা গিয়েছে, এই চক্রের সঙ্গে আরও কয়েক জন জড়িত থাকতে পারে। কমপক্ষে ৬০ জনের থেকে দলটি টাকা তুলেছে বলে মনে করা হচ্ছে। ওই দলের তরফে স্কুলে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নামে কিংবা মিড-ডে মিলের সামগ্রী মজুত রাখার বরাত পাইয়ে দেওয়ার নামে টাকা তোলা হয়েছে। পুলিশের দাবি, টাকা তোলার পরে চাকরি পাকা হওয়ার এবং সামগ্রী মজুত রাখার বরাতের ভুয়ো কাগজ দেওয়া হত। ভুয়ো রবার স্ট্যাম্পও পাওয়া গিয়েছে ধৃতদের থেকে। পুলিশকে অবাক করেছে অন্য একটি বিষয়। সূত্রের খবর, এই দলটি স্কুলে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নাম করে সংশ্লিষ্ট স্কুলে প্রতারিতদের ঘুরিয়েও এনেছে। তবে কি এই চক্রে স্কুলেরও কেউ জড়িত?
এক তদন্তকারী অফিসার বলছেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত কোনও স্কুলের কেউ জড়িত, এমন প্রমাণ মেলেনি। তবে সব দিক দেখা হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রেই ভুয়ো কাগজ তৈরি করে নিয়ে কাজ হয়। এ ক্ষেত্রেও তেমনই ভুয়ো কাগজ বানিয়ে নিয়ে সরকারের তরফে পরিদর্শন বলে স্কুলে ঘোরানো হয়ে থাকতে পারে।’’