বইয়ের দেশে: বইমেলার শেষ দিনে বইয়ের পাতায় চোখ কচিকাঁচাদের। রবিবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
কলেজ স্ট্রিটের নামী প্রকাশকের স্টলে কাউন্টারে আধ ঘণ্টা ধরে থিকথিকে ভিড়। আচমকা হাঁকডাক ‘দেখি, আপনার ব্যাগে কী!’
‘কী বলতে চান!’ মোটা ফ্রেমের চশমা নাকে মহিলাও তেরিয়া ভঙ্গিতে!
শেষে ওই বই-দোকানের মহিলা কর্মীদের অনড় অনুরোধে ব্যাগ খুলে দেখাতেই হল। দেখা গেল, সন্দেহ মিথ্যে নয়। কাঁদো-কাঁদো চশমাধারিণী এ বার বললেন, “আসলে আমার বাবা চলে গেছেন কয়েক মাস আগে। মাথার ঠিক নেই!”
রবিবার দুপুরে বইমেলার ‘চোর ধরা’ নাট্যের আপাতত এখানেই ইতি। মুখে দু’-এক বার ‘ডাকব পুলিশকে’ বলা হলেও মহিলাকে জল-টল খাইয়ে নিজেরাই বিষয়টির মিটমাটও হল। পরে বইয়ের দোকানের কর্তা হাসতে হাসতে বললেন, ‘‘ভাগ্যিস মহিলা কর্মীরা ছিলেন। কোনও মহিলার ভাবগতিক সন্দেহজনক ঠেকলেও জোর করে তো আর ব্যাগ খুলতে পারব না।”
পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায় বললেন, “টুকটাক বই চুরির অভিযোগ বইমেলায় পেয়েছি বই কী! তবে নিজেরাই সে-সব মিটিয়েও ফেলা হয়েছে।’’ বরং মেলার শেষ দিন অনেক প্রকাশকই বই বিক্রিতে দেদার ছাড় ঘোষণা করেছিলেন। এ বারই প্রথম বইমেলায় যোগ দিয়েছে সোদপুরের একটি সংস্থা। তারা বেশ খুশি বিক্রিতে। তবু শেষ দিনে ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় তারা ঘোষণা করে। লিটল ম্যাগাজিন মণ্ডপ দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে। তবু ‘উদার আকাশ’-এর ফারুখ আহমেদ খুশি বিক্রিতে। এ বারই প্রথম টেবিল সাজিয়ে বসেছিল রায়া দেবনাথ মেমোরিয়াল সোসাইটি। তাদের নারীবাদ বিষয়ক সিরিয়াস ইংরেজি পত্রিকা ‘আই রাইজ়’ও অনেকেই বইমেলায় কিনেছেন। তবে কেনাকাটির পথে আসল শত্রু বইমেলায় ঢিলেঢালা মোবাইল নেটওয়ার্ক। গিল্ড সভাপতি সুধাংশুশেখর দে বললেন, “২০২০-র তুলনায় অনেক বেশি লোক অনলাইন কেনাকাটিতে ঝুঁকবেন, এটা বুঝিনি। এটা শুধরে নেব। মাঠে ফোনে কথা বলতেও সমস্যা হয়েছে।’’
বিধাননগর পুলিশের অবশ্য দাবি, বইমেলার মাঠে সব থেকে বেশি ভিড় ছিল শনিবার বিকেলে। শেষ প্রহর পর্যন্ত মেলা তল্লাটে বিচিত্র শব্দের মন্তাজ। লোকগানের করতাল, ফিল্মি গানের সুর মিশেছে ‘শঙ্খ ঘোষ মঞ্চে’ বাংলা ভাষার ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনায়। বইমেলার ভিড় এবং কেনাকাটির মার্কশিট পরে জানাবেন গিল্ড কর্তারা। তবে শেষ দিনই বইমেলায় ব্যাগ বোঝাই করে নিয়ে গিয়েছেন চাকদহের মাস্টারমশাই দেবব্রত চট্টোপাধ্যায়। সব মিলিয়ে তিন লক্ষ টাকার বই কিনেছেন ‘ডিসি স্যর’! সেই সঙ্গে লটারিতে ‘ভাউচার’ জমা দিয়ে সাতটি লাকি ড্রয়েও তিনি বিজয়ী। মানে ফাউ আরও সাত হাজার টাকার বই প্রাপ্তি।
থিম দেশ বাংলাদেশ এবং প্রথম বারের অতিথি ইরানকে ধন্যবাদ দিয়েছেন উদ্যোক্তারা। স্পেনের রাষ্ট্রদূত হোসে মারিয়া রিদাওকে পাশে নিয়ে ঘোষণা হল, ২০২৩-এর বইমেলায় থিম দেশ হবে স্পেন। হাততালির শব্দে রাত ৯টায় বইমেলা শেষের মুহূর্ত থেকেই পরের বছরের প্রহর গোনা শুরু…।