ফাইল চিত্র।
গড়াগাছা ও পামারবাজারে কলকাতা পুরসভার যে দু’টি হট মিক্স প্লান্ট রয়েছে, তার দূষণের মাত্রা জানার জন্য রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে নির্দেশ দিয়েছিল জাতীয় পরিবেশ আদালত। সেই মতো গত ২৭ এবং ৩০ ডিসেম্বর গড়াগাছা ও পামারবাজারের প্লান্ট পরিদর্শন করে পর্ষদের প্রতিনিধি দল। পরিদর্শনের পরে যে রিপোর্ট তারা দাখিল করেছে আদালতে, তা যথেষ্ট উদ্বেগজনক বলে জানাচ্ছেন পরিবেশকর্মীরা।
কারণ, কোথাও নির্ধারিত মাত্রা থেকে চার গুণ, আবার কোথাও নির্ধারিত মাত্রার প্রায় ন’গুণ বেশি দূষণের চিত্র ধরা পড়েছে রিপোর্টে! এমনিতেই ওই দু’টি হট মিক্স প্লান্ট চালানোর ছাড়পত্রের মেয়াদ গত বছরের এপ্রিলেই শেষ হয়ে গিয়েছিল বলে পুরসভা সূত্রের খবর। কিন্তু তারও আট মাস পরে তা নবীকরণের জন্য পুরসভার তরফে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কাছে আবেদন জানানো হয়। যা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে পরিবেশকর্মীদের একটি অংশের মধ্যে। সেই নবীকরণের ছাড়পত্র বা ‘কনসেন্ট টু অপারেট’ দেওয়ার আগে এক বার প্লান্ট দু’টি পরিদর্শনের নির্দেশ দেয় আদালত।
দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সূত্রের খবর, গড়াগাছা প্লান্টের দু’টি চিমনি থেকে কার্বন, সালফার ডাই অক্সাইড-সহ যে ধোঁয়া নির্গত হচ্ছে একটিতে তার পরিমাণ প্রতি ঘনমিটারে ৪৫৯.৬২ মিলিগ্রাম। আর অন্য একটি থেকে যে ধোঁয়া বার হচ্ছে, তার দূষণের মাত্রা প্রতি ঘনমিটারে ১৩৮৯.১০ মিলিগ্রাম। অর্থাৎ নির্ধারিত মাত্রা প্রতি ঘনমিটারে ১৫০ মিলিগ্রামের থেকে যা নয় গুণ বেশি!
একই চিত্র দেখা যায়, পামারবাজার প্লান্টটির ক্ষেত্রেও। সেখানে একটি চিমনি থেকে নির্গত ধোঁয়ার পরিমাণ প্রতি ঘনমিটারে ৪১৩.৭৫ মিলিগ্রাম। অন্য চিমনি থেকে বার হওয়া ধোঁয়া-দূষণের পরিমাণ প্রতি ঘনমিটারে ৬০৭.৩০ মিলিগ্রাম। যা ক্রমাগত দূষিত করে চলেছে দু’টি প্লান্ট সংলগ্ন এলাকা বলে জানাচ্ছেন পরিবেশকর্মীরা।
সম্প্রতি ওই রিপোর্ট দেখে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তরফে তখন আগামী চার মাসের মধ্যে প্লান্ট দু’টির পরিকাঠামো পরিবেশবান্ধব করা এবং ধোঁয়া নির্গমনের ক্ষেত্রে দূষণের পরিমাণ নির্ধারিত মাত্রার মধ্যে রাখার সুপারিশ করা হয়। একমাত্র তা হলেই প্লান্ট দু’টির ক্ষেত্রে ‘কনসেন্ট টু অপারেট’ বা প্লান্ট চালানোর ছাড়পত্র দেওয়া হবে বলে পর্ষদ জানিয়েছে।
যা মানতে নারাজ মামলার আবেদনকারী পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। তাঁর কথায়, ‘‘এতগুলো বছর ধরে পুরসভা কিছু করতে পারেনি। চার মাসে তারা আর কী করবে!’’