East-West Metro

স্মৃতি সঙ্গী করে তৃপ্তির সফর নয়া মেট্রোয়

এক দশকেরও বেশি সময় ধরে কাজ চলা ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোপথে শুক্রবার প্রথম ট্রেনে চড়ার মধ্যে যেন যাত্রীদের সেই দীর্ঘ প্রতীক্ষারই অবসান ঘটল।

Advertisement

ফিরোজ ইসলাম

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০১:৫৮
Share:

ক্যামেরাবন্দি: ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোয় প্রথম সফরের সময়ে ছবি তুলতে ব্যস্ত যাত্রীরা। শুক্রবার। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

কতটা অপেক্ষা ফুরোলে তবে এ শহরে মেট্রো ছুটতে দেখা যায়?

Advertisement

এক দশকেরও বেশি সময় ধরে কাজ চলা ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোপথে শুক্রবার প্রথম ট্রেনে চড়ার মধ্যে যেন যাত্রীদের সেই দীর্ঘ প্রতীক্ষারই অবসান ঘটল।

কারও ছেলেবেলা ফুরিয়েছে মেট্রোর নির্মাণ-পর্ব দেখে, কেউ এখন যৌবন পার করে প্রৌঢ়ত্বের মুখে, কেউ চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন। সকলের কাছেই নতুন মেট্রো যেন এক ইচ্ছেপূরণের গল্প। বৈশাখী আবাসনের তিথি হালদার, লেক টাউনের তপন দাস, কল্যাণীর প্রদীপ কয়াল, সল্টলেকের সোমঋতা গুহ, তমাল বিশ্বাস কিংবা আশুতোষ সিংহ চৌধুরীরা সেই টানেই ছুটে এসেছিলেন প্রথম মেট্রো-যাত্রার সাক্ষী থাকতে।

Advertisement

ছত্রিশ বছর আগে বাবার হাত ধরে এসপ্লানেড থেকে ভবানীপুর পর্যন্ত দেশের প্রথম মেট্রোয় চড়েছিল দশ বছরের তিথি। সাড়ে তিন দশক পেরিয়ে প্রৌঢ়ত্বের দোরগোড়ায় পৌঁছনো সেই তিথিই এ দিন ভোরে উঠে চলে এসেছিলেন ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর প্রথম ট্রেন যাত্রার শরিক হতে। লেক টাউনের বাসিন্দা, পেশায় সংবাদপত্র ব্যবসায়ী তপন দাস আবার বেলগাছিয়া থেকে দমদম পর্যন্ত প্রথম মেট্রোর যাত্রী ছিলেন। এ দিন করুণাময়ীতে ব্যবসার কাজ ফেলে তিনি এসেছিলেন নয়া মেট্রোর যাত্রী হতে।

বছর সাতাশের তমাল বিশ্বাস চাকরির সুবাদে এখন জেলা শহরের বাসিন্দা। কিন্তু ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর নির্মাণ-পর্ব দেখে কেটেছে তাঁর কৈশোর। এ দিন অনেকটা সেই টানেই তিনি হাজির হয়েছিলেন সেন্ট্রাল পার্ক স্টেশনে।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সেক্টর ফাইভ থেকে সল্টলেক স্টেডিয়াম পর্যন্ত মেট্রো-পথ আনুষ্ঠানিক ভাবে যাত্রী পরিষেবার জন্য খুলে দেওয়া হলেও যাত্রীরা ট্রেনে চড়ার অনুমতি পাননি। এ দিন সকালে তাই প্রথম মেট্রো চড়ার সুযোগ হাতছাড়া করতে চাননি কেউই। যাত্রীদের এমন উৎসাহকে সম্মান দিতে মেট্রো কর্তৃপক্ষও প্রেমদিবসের সকালে স্টেশনে হাজির ছিলেন গোলাপ এবং চকলেট নিয়ে। সকাল সাড়ে সাতটা বাজতে না বাজতেই সেক্টর ফাইভ স্টেশনে পৌঁছে গিয়েছিলেন মেট্রোর চিফ অপারেশন্‌স ম্যানেজার সাত্যকি নাথ, সিনিয়র ট্রান্সপোর্টেশন ম্যানেজার কৌশিক মিত্র-সহ একাধিক শীর্ষ আধিকারিক।

ওই স্টেশনেই মেট্রোর প্রথম টোকেন ও স্মার্ট কার্ড কেনেন সল্টলেকের এসি ব্লকের বাসিন্দা রাজীব রায়। মেট্রো কর্তৃপক্ষ তাঁর হাতে বিশেষ স্মারক তুলে দেন। ঘটনাচক্রে, কর্মসূত্রে দুবাইয়ে থাকা রাজীব সেই শহরেরও প্রথম মেট্রো-যাত্রী। নিজের শহরে আধুনিক মেট্রো দেখে মুগ্ধ তিনি। গুগলের আঞ্চলিক গাইড শৌনক দাস শ্রীরামপুর থেকে এসেছিলেন মেট্রোর যাত্রী হতে। ছবি ছাড়াও বিভিন্ন স্টেশন সংক্রান্ত তথ্য তিনি আপলোড করেছেন গুগলে।

প্রথম দিনের প্রথম মেট্রোয় ছ’টি স্টেশন মিলে ১৭৪ জন যাত্রী ছিলেন। প্রথম ও দ্বিতীয় মেট্রোর চালক ছিলেন শ্যামল রায়চৌধুরী এবং রামেশ্বর ভৌমিক। আধুনিক এসি ট্রেন, ঝকঝকে স্বচ্ছ কাচের লিফট, বিমানবন্দরের মতো ডিসপ্লে-বোর্ড বা প্ল্যাটফর্মে স্ক্রিন ডোর যাত্রীদের তৃপ্ত করলেও অন্য ছবিও চোখে পড়েছে। কার্যত দু’-তিন জন কর্মীর ভরসায় সামলাতে হচ্ছে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর এক-একটি স্টেশন। রয়েছে নিরাপত্তারক্ষীর অভাবও।
যাত্রী বাড়লে কী ভাবে চাপ সামলানো যাবে, তা ভেবে এখন থেকেই চিন্তিত মেট্রোর কর্মী এবং আধিকারিকেরা। যদিও কর্মী বাড়ানোর সব রকম আশ্বাস দিয়েছেন মেট্রোকর্তারা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement