‘অরণ্যে’ লুকিয়ে কোন রহস্য? গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
অরণ্য ভবনে ইডির তল্লাশি শেষ হয়েছে গভীর রাতে। আর সেই তল্লাশিতে বেরিয়ে আসছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। ইডি সূত্রের খবর, রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের এক সময়ের কার্যালয় অরণ্য ভবন থেকে উদ্ধার হয়েছে ফিক্সড ডিপোজ়িটের নথি। যা অর্থমূল্যে কয়েক কোটি টাকার বলে মনে করা হচ্ছে। তবে ইডি সূত্রে খবর, কয়েকশো ফাঁকা স্ট্যাম্প পেপার উদ্ধার করা হয়েছে। আর এতেই রহস্য আরও ঘনীভূত হয়েছে।
রাজ্যে বনমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন অধুনা জেলবন্দি জ্যোতিপ্রিয়। মঙ্গলবার তাঁর সেই অফিস, অরণ্য ভবনে তল্লাশি চালায় ইডি। কেন্দ্রীয় এজেন্সি সূত্রে খবর, তাতে কোটি কোটি টাকা মূল্যের ফিক্সড ডিপোজ়িট উদ্ধার হয়েছে। যা জ্যোতিপ্রিয় এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে। তবে ইডির কাছে আরও রহস্য উদ্ধার হওয়া হাজারখানেক স্ট্যাম্প পেপারকে ঘিরে। সূত্রের খবর, বালুর অফিস থেকে প্রায় ৯০০ স্ট্যাম্প পেপার উদ্ধার হয়েছে। যার প্রতিটিই হয় ফাঁকা অথবা অন্য কোনও তারিখ দেওয়া (ব্যাকডেটেড)। তদন্তকারীদের প্রশ্ন, অরণ্য ভবনে এত স্ট্যাম্প পেপার কেন রাখা হয়েছিল? সাধারণত, সম্পত্তির হাতবদলে স্ট্যাম্প পেপারে শর্ত নথিভুক্ত হয় এবং তাতে দু’পক্ষের সাক্ষরের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির হাতবদল হয়। এই প্রেক্ষিতেই ইডির সন্দেহ, তা হলে কি বালুর অফিসে সম্পত্তি এ দিক-ও দিক করতেই বিপুল সংখ্যক স্ট্যাম্প পেপার মজুত করা হয়েছিল? স্বভাবতই, এত স্ট্যাম্প পেপার একসঙ্গে উদ্ধার হওয়ায় যাবতীয় রহস্য এখন তাকে ঘিরেই।
২০২১ সাল পর্যন্ত রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী ছিলেন জ্যোতিপ্রিয়। বিধানসভা ভোটের পর জ্যোতিপ্রিয়কে বনমন্ত্রী করা হয়। অভিযোগ, বনমন্ত্রীর দফতরেই বড় মাত্রায় দুর্নীতি হয়েছিল।
প্রসঙ্গত, রেশন বণ্টন দুর্নীতি মামলায় গত ২৭ অক্টোবর মাঝরাতে ইডির হাতে গ্রেফতার হন জ্যোতিপ্রিয়। তারও আগে গত ১৩ অক্টোবর গভীর রাতে গ্রেফতার করা হয় রেশন মামলার মূল অভিযুক্ত বাকিবুর রহমানকে। জ্যোতিপ্রিয় গ্রেফতার হওয়ার ৪৬ দিন পরে আদালতে চার্জশিট পেশ করেছে ইডি। কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার দাবি, রেশন বণ্টন নিয়ে কয়েকশো কোটি টাকার ‘দুর্নীতি’ হয়েছে। তদন্ত চলাকালীন আদালতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা অভিযোগ তোলে, নজর এড়াতে ‘দুর্নীতির টাকা’ বিভিন্ন জায়গায় এবং বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে পাঠিয়েছিলেন মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয়। আর জ্যোতিপ্রিয় ওরফে বালু যাঁদের যাঁদের কাছে টাকা পাঠাতেন, তাঁদের বেশ কয়েক জনকে চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন বলেও দাবি করে ইডি। চার্জশিটে দাবি করা হয়েছে, ওই চাকরি প্রাপকদের মধ্যে এক জন বাকিবুর রহমানের শ্যালক অভিষেক বিশ্বাস। বনমন্ত্রী থাকাকালীন অভিষেককে তাঁর দফতরে চাকরি পাইয়ে দিয়েছিলেন বালু, দাবি করেছে ইডি। এর আগে বাকিবুরের কাছ থেকেও স্ট্যাম্প উদ্ধার হয়েছিল। এ ছাড়াও বিভিন্ন দফতরের সফ্টঅয়্যারের লগইন আইডি-ও মিলেছিল। এ বার বালুর প্রাক্তন অফিস থেকে উদ্ধার হল ফাঁকা স্ট্যাম্প পেপার।