ফাইল চিত্র।
গতির সঙ্গে বড়ই বেমানান! সে কারণে নাকি আধুনিক শহরে ক্রমেই সংখ্যা কমছে ট্রামের। তবে এ বার তার কৌলিন্যের কাহিনিতে জুড়বে দূষণ মুক্তির বার্তাবাহী পাট। দুইয়ের মিশেলে সাজবে ‘পাট-রানি’। যার অঙ্গের সাজসজ্জায় থাকছে পাঁচিল ঘেরা মানুষের হাতের ছোঁয়া। এ সব সঙ্গী করে আগামী সপ্তাহে শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণ পথ চলা শুরু করবে ‘পাট-রানি’।
জীবনচর্যার দূষণে অনুঘটকের কাজ করে প্লাস্টিক। তার পরিবর্তে সোনালি আঁশের পাট আমজীবনে নিত্যসঙ্গী হতে পারে। সেই ভাবনা থেকেই কারা দফতরের সহায়তায় দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে পরিবেশবান্ধব পাটের সামগ্রী তৈরিতে পদক্ষেপ করেছিল একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। তার হাত ধরে সাড়ে তিন বছর আগে পাটের নানা সামগ্রী তৈরির কাজ শুরু হয় দমদম সংশোধনাগারে। সেখানের বন্দিদের তৈরি সামগ্রী দ্রুত নানা স্তরে প্রশংসিত হতে শুরু করে। সেই সাফল্য বৃত্ত বাড়াতে সাহায্য করে সংস্থাটিকে। প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারের বন্দিরাও পাটের সামগ্রী তৈরি করতে শুরু করেন। যা ব্যবহার করে র্যাম্পে হেঁটেছেন মডেলরা, আবার নিত্যদিনের কাজেও জায়গা পেয়েছে বন্দিদের হাতে তৈরি পাটের সামগ্রী। সেই সব এ বার ঠাঁই পেতে চলেছে কলকাতা শহরের ঐতিহ্যের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে লেপ্টে থাকা ট্রামে। আগামী সপ্তাহে সেই ট্রামের যাতায়াত শুরু হবে গড়িয়াহাট ও শ্যামবাজারের মধ্যে। এক দিনে সাধারণ ভাবে তিনটি ট্রিপ হতে পারে। সম্ভব হলে কোনও দিন চারটিও করার চেষ্টা হবে।
উদ্বোধনের পরে এক সপ্তাহ ‘পাইলট প্রজেক্ট’ হিসাবে চলবে ট্রামটি। তার পরে মানুষের উৎসাহ বুঝে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে বলে জানাচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার ম্যানেজিং ট্রাস্টি চৈতালি দাস।
কী কী থাকছে ‘পাট-রানি’ তে?
বাইরের দিকে পাটের বিভিন্ন সামগ্রীর নানা ধরনের ছবি থাকবে। আর রানি তো মুকুট ছাড়া হয় না।
তাই ট্রামের মাথায় মুকুট রাখার পরিকল্পনা করেছে সংস্থাটি। যাত্রী হিসাবে যাঁরা ওই ট্রামটিতে
উঠবেন তাঁদের প্রতীকী মুকুট দেওয়া হবে। সদ্য দুর্গাপুজো মিটেছে। তবে কোভিড-১৯ আবহে সে ভাবে আড্ডা দেওয়া হয়নি। অনেকের পুজো পরবর্তী বৈঠকির আমেজও মিলবে সেখানে। কখনও লোকগীতি, কখনও বা আধুনিক আবার কখনও হয়তো ঝুমুরের আস্বাদ উপভোগ করতে পারবেন যাত্রীরা। তার মাঝেই ধারাভাষ্যে শোনা যাবে পুর নো কলকাতার নানা জানা-অজানা তথ্য-গল্প।
‘পাট-রানি’-র অন্দরসজ্জায় থাকবে পাটের নানা সামগ্রী। তার সঙ্গে সাযুজ্য রেখে থাকবে পাটের সামগ্রীতে তৈরি বসার আসনও। সঙ্গে থাকবে বন্দিদের তৈরি পাটের নানা সামগ্রীর প্রদর্শনী। যা হাতে নিয়ে পরখ করার সঙ্গেই কেনাকাটাও করতে পারবেন যাত্রীরা। এমনকি, ঝালমুড়ি, ঝুরিভাজা, শোনপাপড়ি, বাদামের মতো নানা শুকনো খাবার থাকবে গড়িয়াহাট থেকে শ্যামবাজারের যাত্রাপথে।
ইতিমধ্যে কোচ ভাড়ার জন্য আবেদন আসতে শুরু করেছে। কোচ ভাড়ার পাশাপাশি ব্যক্তিগত ভাবেও স্টপেজ থেকে উঠতে পারবেন যাত্রীরা। আবার ১৪ নভেম্বর শিশু দিবস। তাই একটি ট্রিপে শিশুদের ঘোরানোর পরিকল্পনা রয়েছে আয়োজকদের। সঙ্গে এই ট্রামে বয়স্কদের শহর দেখানোর ভাবনাও রয়েছে তাঁদের।
করোনা-কালের কারণে শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা, হাতশুদ্ধি-সহ সুরক্ষা বিধি পর্যাপ্ত থাকবে, তেমনই জানিয়েছেন রাজ্য পরিবহণ নিগমের (ডব্লিউবিটিসি) সহায়তায় চালানো সুসজ্জিত ট্রামটির পরিচালকেরা।
কেন এমন পরিকল্পনা?
চৈতালির মতে, “ঐতিহ্যের কলকাতা ট্রাম ছাড়া হয় না। অথচ নতুন প্রজন্মের কাছে ট্রাম প্রায় গুরুত্বহীন হতে চলছে। অনেকে হয়তো কখনও তাতে চড়েননি। পাট বাংলার জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকলেও ক্রমে তা-ও গুরুত্ব হারিয়েছে। কিন্তু পরিবেশের স্বার্থে পাটের বহুল ব্যবহার প্রয়োজন। একে আমজনতার সামনে তুলে ধরা প্রয়োজন।”
স্বাভাবিক জীবনে ছন্দপতন ঘটিয়েছে করোনা। সে সময়ে মানুষ কিছুটা মুক্তির স্বাদ খুঁজছে। সুরক্ষাবিধিকে সঙ্গী করে সেই স্বাদ অনেকটা ‘পাট-রানি’ দিতে পারবে বলে আশা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পরিচালকদের।