Kolkata Metro

Bowbazar Metro Project: জলে কংক্রিটের ‘বাঁধ’, পিছোতে পারে প্রকল্প

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, শুক্রবার নতুন করে ফাঁকা করাতে হয়েছে স্যাকরাপাড়া লেনের দু’টি বাড়ি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০২২ ০৫:৫৪
Share:

জল রুখতে ঢালা হচ্ছে কংক্রিট মিশ্রণ। —নিজস্ব চিত্র।

বুধবার দুপুর থেকে বৃহস্পতিবার মধ্যরাত্রি— প্রায় ৩৬ ঘণ্টা লাগাতার চেষ্টার পরে বৌবাজারে মেট্রো রেলের সুড়ঙ্গে জল ঢোকা বন্ধ করা গিয়েছে বলে মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষের দাবি। যে জল ঢুকে পড়ায় তার সঙ্গে ধুয়ে আসা মাটি আলগা করে দিয়েছে আশপাশের বাড়ির ভিতের নীচের মাটি। ফাটলের সমস্যা দেখা দিয়েছে দুর্গা পিতুরি লেনের বেশ কয়েকটি বাড়িতে।

Advertisement

মেট্রো আধিকারিকেরা জল ঢোকা বন্ধ করে দিতে পারার কথা জানালেও, গত দু’দিনের বিপত্তির জেরে প্রকল্পের বাকি কাজ অন্তত তিন মাস (শেষমেশ তার বেশিও হতে পারে) পিছিয়ে যেতে পারে বলে সূত্রের দাবি।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, শুক্রবার নতুন করে ফাঁকা করাতে হয়েছে স্যাকরাপাড়া লেনের দু’টি বাড়ি। দুর্গা পিতুরি লেনের দু’টি বাড়িতেও নতুন করে ফাটল দেখা গিয়েছে বলে খবর। যদিও তা মানতে নারাজ মেট্রো রেল কর্তারা।

Advertisement

প্রকল্পের কাজ পিছিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিল কেন?

মাটির নীচ থেকে দু’টি সুড়ঙ্গ খোঁড়ার যন্ত্র বা টানেল বোরিং মেশিন (টিবিএম) বার করে আনতে যে শক্ত সিমেন্টের স্তম্ভে ঘেরা চৌবাচ্চার মতো বড়সড় গর্ত খোঁড়া হয়েছিল, তার এসপ্লানেড প্রান্তে প্রায় ২০০ ঘন মিটার উচ্চ শ্রেণির তরল কংক্রিট ঢালা হয়েছে। লক্ষ্য, সোডিয়াম সিলিকেটে সমৃদ্ধ ওই মিশ্রণ (যা আধ ঘণ্টার মধ্যে জমে যেতে সক্ষম) মারফত জল ঢোকা বন্ধ করা। কিন্তু এখন চারপাশের মাটিতে স্থিতি আসার জন্য অপেক্ষা তো করতেই হবে, সেই সঙ্গে পাথরের মতো শক্ত ওই কংক্রিট পরে কেটে বার করতেও সময় লাগবে অনেক বেশি। জুনে বর্ষা ঢুকে পড়ার কথা। সেই সময়ে ওই কংক্রিট সরাতে গেলে ফের জল ঢোকার আশঙ্কা। ফলে সব মিলিয়ে, প্রকল্পের বাকি কাজ শেষ করতে বেশ কয়েক মাস অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই বলে মানছেন ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর নির্মাণ সংস্থা কেএমআরসিএলের কর্তারা। তাই বৌবাজারে বাকি থাকা সুড়ঙ্গ নির্মাণের কাজে হাত দিতেই হয়তো কয়েক মাস লেগে যেতে পারে।

এ দিন কেএমআরসিএল কর্তা এন সি কারমালি বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে আশঙ্কার কিছু নেই। তবে পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হলে, তবে কাজ শুরু করা যাবে। তাতে তিন মাস দেরি হতে পারে বলে অনুমান।’’

মেট্রো সূত্রে খবর, গত শনিবার পর্যন্ত শুকনো চৌবাচ্চার ভিতরে মাটি খোঁড়ার কাজ হচ্ছিল। কিন্তু তার পরে মঙ্গলবার পর্যন্ত কলকাতায় বৃষ্টি হওয়ায় ভূগর্ভস্থ মাটির মধ্যের জলস্তর হঠাৎ বেড়ে যায়। এক সময়ে মিনিটে ১৫০ লিটার জল ঢুকতে শুরু করে। তড়িঘড়ি খনন বন্ধ রেখে উপর থেকে তরল কংক্রিটের মিশ্রণ পাইপের মাধ্যমে ঢালা শুরু হয়।
চৌবাচ্চার বাইরের মাটিকে স্থায়িত্ব দিতে শুরু হয় গ্রাউটিং। অবশেষে জল ঢোকা বন্ধ হয়।

মেট্রো রেল কর্তাদের দাবি, সমস্যা তুঙ্গে থাকার সময়ে ভূগর্ভস্থ মাটির মধ্যের জলস্তরের চাপ (পিজোমেট্রিক লেভেল) যথেষ্ট বেশি ছিল। আপাতত ওই অংশের মাটিতে স্থিতি ফেরার জন্য অপেক্ষা করা হবে। প্রতিদিন ৪ ঘণ্টা অন্তর মাটি বসে যাচ্ছে কি না, তা পরীক্ষা করা হচ্ছে। খালি করা বাড়িতে ঠেকনা দেওয়া হয়েছে। আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে, নতুন করে আশঙ্কার কিছু নেই বলে। যদিও এ দিনও বাসিন্দাদের অনেককে বাড়ি ছাড়তে দেখা গিয়েছে।

এক সোনার কারিগর বলেন, ‘‘মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ বাসিন্দাদের থাকার জায়গা দিচ্ছেন। কিন্তু আমরা যাঁরা এখানে দোকান চালাই, তাঁদের কী হবে? আমরা তো সারা সপ্তাহ এখানে থেকে কাজ করে সপ্তাহ শেষে বাড়ি যাই!’’ দোকানের জিনিসপত্র বার করে নিয়ে যাওয়ার পথে এক দোকান মালিক আবার বলছেন, ‘‘নতুন করে ঘরভাড়া খুঁজতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছি। সুযোগ বুঝে যে যেমন খুশি টাকা হাঁকছেন।’’

বৌবাজার পরিস্থিতি নিয়ে মুখ্যসচিবকে তথ্য দিয়েছেন কলকাতার মেয়র তথা পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। শীঘ্রই মুখ্যসচিব স্তরে পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক হতে পারে। থাকতে পারেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ। তার আগে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় এবং টেকনিক্যাল কমিটির অনুসন্ধান তথ্য জানিয়ে রাখা হল মুখ্যসচিবকে। এ দিন এলাকা পরিদর্শনে যান বিধায়ক নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর আশ্বাস, ‘‘দ্রুত সমস্যা মেটানোর চেষ্টা হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement