সন্তোষ মিত্র স্কোয়্যার সর্বজনীনের পুজোর ‘লেজার শো’ বন্ধ করল প্রশাসন। —নিজস্ব চিত্র।
প্রচণ্ড ভিড়ের চোটে বন্ধ হয়ে গেল সন্তোষ মিত্র স্কোয়্যার সর্বজনীন পুজোমণ্ডপের আলো এবং শব্দের কারিগরি (লাইট অ্যান্ড সাউন্ড)। পুলিশ সূত্রে খবর, এই ‘লেজার শো’ চোখ টানছে দর্শকদের। তাই জনস্রোত সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে তারা। লালকেল্লার আদলে তৈরি মণ্ডপে ‘লাইট অ্যান্ড সাউন্ড’ দেখতে প্রচুর দর্শক দাঁড়িয়ে থাকছেন। তবে পুলিশ এই ভিড় নিয়ন্ত্রণ করছে। রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ এই আলো এবং শব্দের কারিগরি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
অন্য দিকে, বিজেপি কাউন্সিলর তথা পুজোর প্রধান উদ্যোক্তা সজল ঘোষের অভিযোগ, প্রশাসনের অপদার্থতায় দর্শকরা পুজো দেখতে আসতে পারছেন না। তাঁর কথায়, ‘‘পুলিশ ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। এটা তাদের ব্যর্থতা। বিভিন্ন গলিপথে পুজোমণ্ডপে ঢুকে পড়ছেন দর্শনার্থীরা।’’ সজলের সংযুক্তি, ‘‘আসলে তৃণমূল নেতাদের পুজোয় ভিড় নেই। সেখানে ঝালমুড়ি বিক্রি হচ্ছে না। এ বার লেবুতলা পার্ক একা, বাকি কলকাতা ফাঁকা। তাই এ সব করা হচ্ছে।’’
এ নিয়ে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের প্রতিক্রিয়া, ‘‘হাস্যকর কথাবার্তা বলছেন ওঁরা। এ নিয়েও রাজনীতির অভিযোগ করা হচ্ছে।’’ তিনি বলেন, ‘‘এর আগে ভিড়ের চাপে দেশবন্ধু পার্কের পুজো বন্ধ হয়েছে। সব জায়গায় ঠাসা ভিড় হচ্ছে।’’ এর পর সজলকে কুণালের কটাক্ষ, ‘‘শিয়ালদহ স্টেশনের পাশে বসে থাকলে অনেকে অনেক কথা বলে। ভিড়ের জন্য প্রশাসন ব্যবস্থা নিয়েছে। এতে রাজনীতি আসছে কোথা থেকে!’’
সন্তোষ মিত্র স্কোয়্যার সর্বজনীনের পুজো বরাবরই দর্শক টানে। এ বার লালকেল্লার আদলে তৈরি হয়েছে মণ্ডপ। থিম ‘স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব’। স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষ উপলক্ষে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের শ্রদ্ধার্ঘ জানানো হয়েছে। পুজোর ৮৭ তম বর্ষে প্রতিমা তৈরি করেছেন শিল্পী মিন্টু পাল। প্রথমে এই পুজোর উদ্বোধনে আসার কথা ছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের। পরে অবশ্য রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ফিতে কাটেন। পুজোর থিম মিউজিকের উদ্বোধন করেন মিঠুন চক্রবর্তী।
এ বারের সজল ঘোষদের পুজোর বিশেষ আকর্ষণ ‘লাইট অ্যান্ড সাউন্ড’ শো। ভগৎ সিং, চন্দ্রশেখর আজাদ, ক্ষুদিরাম বসু, বিনয় বাদল দীনেশ, নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু, মহাত্মা গান্ধীর আবদানের নানা কাহিনি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এই ‘শো’ দেখতে কাতারে কাতারে মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন লেবুতলা পার্কে। সেই পুজোয় সপ্তমীতে দানা বাঁধল বিতর্ক। এলো পুজো নিয়ে রাজনীতির অভিযোগ এবং পাল্টা অভিযোগ।
যদিও ভিড়ের চাপে মণ্ডপে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা নতুন ঘটনা নয়। এক বার কলকাতার শ্রীভূমির পুজোয় হয়েছে। আবার এ বছর বোধনের দিনই প্রবল জনাসমাগমের কারণে কল্যাণী আইটিআই মোড় দুর্গোৎসব কমিটির ‘টুইন টাওয়ার’-এর ‘লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো’ বন্ধ করা হয়েছে। গত বছর মন্ত্রী সুজিত বসুর শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবের ‘লেজার শো’ বিমান চালকদের চোখ ধাঁধাচ্ছে বলে বিতর্ক হয়। প্রথমে বিমান চলাচলে বিঘ্ন ঘটায় আঙুল উঠেছিল মণ্ডপের গায়ে লাগানো লেজার লাইটের উপর। চিঠিচাপাটিও হয়। যদিও উদ্যোক্তারা তা অস্বীকার করেন। পরে সপ্তমীর সন্ধ্যায় রাতারাতি বন্ধ করে দেওয়া হয় ‘বুর্জ খলিফা’র আদলে তৈরি মণ্ডপে লেজার আলোর প্রদর্শনী।