দর্শক টানছে পশ্চিম পুঁটিয়ারি পল্লি উন্নয়ন সমিতির মণ্ডপ। —নিজস্ব চিত্র।
‘জল পড়ে। পাতা নড়ে।’ যে দু’টি লাইনের ছন্দময়তা মন কেড়েছিল বালক রবি ঠাকুরের, সেই পাতা দিয়েই মণ্ডপ করেছে হরিদেবপুরের পশ্চিম পুঁটিয়ারি পল্লি উন্নয়ন সমিতি। পাতার কারুকাজ করা মণ্ডপের সঙ্গে ঝিঁঝি পোকার ডাকের আবহ, দর্শনার্থীদের এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা এনে দেবে মণ্ডপ এবং প্রতিমা।
গাছ এবং পাতার সঙ্গে আবর্তিত মানুষের জীবন। গাছের ছাল কিংবা পাতা দিয়ে লজ্জা নিবারণ থেকে বাড়ির— পাতার ব্যবহার বহুবিধ। এখনও বহু প্রান্তিক মানুষ শুধু পাতা কুড়িয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। সেই পাতাকেই থিম হিসেবে ভেবেছেন এখানকার পুজো উদ্যোক্তারা। কলকাতার নামী পুজোকে টেক্কা দিচ্ছে পশ্চিম পুঁটিয়ারি পল্লি উন্নয়ন সমিতি। উদ্যোক্তাদের দাবি, এই অভিনব থিম দেখতে ষষ্ঠীতেই প্রচুর ভিড় হয়েছে। সপ্তমীতে দর্শনার্থী সংখ্যা বেড়েছে কয়েক গুণ। উদ্যোক্তারা এ-ও জানাচ্ছেন, যে সাড়া তাঁরা পাচ্ছেন, তা অভূতপূর্ব।
ক্লাবের সম্পাদক শুভম চক্রবর্তীর মতে, পাতার সঙ্গে সরাসরি যোগ রয়েছে নবপত্রিকার। তাঁর কথায়, ‘‘নবপত্রিকার নয় উপাস্য দেবীকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ব্যবহার হয়েছে ধান, ভুট্টা, কচুর মতো ন’ রকমের গাছ।’’ মণ্ডপের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পাতা দিয়ে তৈরি হয়েছে প্রতিমাও। দুর্গার শাড়িতে রয়েছে পাতার কারুকাজ। প্রতিমা শিল্পী আলোককুমার দে এবং সৃজন শিল্পী সোমনাথ তামলীর অসাধারণ যুগলবন্দিতে তৈরি হয়েছে ‘নবপত্র’ থিম।
প্রতিমার গায়ে ব্যবহৃত পাতার প্রলেপ দিন দিন অন্য রূপ নেবে। আসলে জীবন পরিবর্তনশীল। এই ভাবনা থেকে দশমীর বিষাদ ফুটিয়ে তুলতে দুর্গামূর্তিতে যে পাতা ব্যবহৃত হয়েছে, তা অন্য রকম রং ধারণ করবে। ক্লাবের সম্পাদক শুভম চক্রবর্তী বলেন, ‘‘মণ্ডপ থেকে প্রতিমা, সর্বত্র পরিবেশবান্ধব জিনিস ব্যবহার করেছি। কোথাও কোনও রাসায়নিক রঙের ব্যবহার হয়নি।’’ তিনি জানান, প্রতিমার জন্য যে রং ব্যবহার করা হয়েছে, তার জন্য বিস্তর পরিশ্রম করতে হয়েছে। ঝাড়গ্রামের পাহাড় থেকে মাটি আনা হয়েছে। তাতে জল মিশিয়ে তৈরি হয়েছে দেবীর গায়ের রং।
প্রতিমা রং করতে ব্যবহৃত হয়েছে পাহাড়ি মাটি। নিজস্ব চিত্র।
এ বার ৬৮তম বছরে পদার্পণ করল পুঁটিয়ারি পল্লি উন্নয়ন সমিতির পুজো। তবে থিম পুজোর শুরু ২০০৩ সালে। এখানকার পুজো উদ্যোক্তাদের সঙ্গে নামী কোনও ব্যক্তিও জড়িয়ে নেই। তবে দর্শনার্থী টানতে প্রতি বারই অন্যদের টেক্কা দেয় এই ক্লাব। প্রতি বারই থাকে অভিনবত্বের ছোঁয়া। গত বছর ওড়িশা ও তেলঙ্গানার সীমানায় বসবাসকারী শৌরা উপজাতির শিল্পচর্চার ছবি ফুটে উঠেছিল মণ্ডপে। এ বার শুধু পাতার ‘কারসাজি’ চোখ টানছে দর্শকদের।