আনাচে-কানাচে: ধর্মতলায় চলছে বিকিকিনি। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী
কালীপুজো এবং দীপাবলি-সহ আসন্ন সব উৎসবে এ বছর বাজি বিক্রি এবং পোড়ানো নিষিদ্ধ করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, বিক্রির জন্য যে পরিমাণ বাজি ইতিমধ্যেই মজুত করা হয়ে গিয়েছে, সেগুলির কী হবে? আইনবিরুদ্ধ জেনেও সেই বাজি বসতি এলাকায় মজুত করে রাখবেন না তো ব্যবসায়ীরা? আশঙ্কা বাড়িয়ে বাজি ব্যবসার সঙ্গে যুক্তদের বড় অংশই জানাচ্ছেন, বসতি এলাকার বাইরে বাজি রাখতে গেলে যে বাড়তি খরচ হয়, বহু ব্যবসায়ীই তা করতে চাইছেন না।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাজি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে প্রশাসনের বৈঠক ছিল। কিন্তু আদালতের রায়ের পরে তা অর্থহীন হয়ে পড়ে। এর পরেই মজুত বাজি নিয়ে কী করা হবে, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে। কলকাতা পুলিশের তরফে সমস্ত বাজি দ্রুত ‘সেফ হাউসে’ সরিয়ে ফেলার জন্য কয়েক দিন সময় দেওয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা, তার পরে ধরপাকড় শুরু করতে পারে পুলিশ।
বাজি ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, বিস্ফোরক আইনে বাজি রাখার এই ধরনের সেফ হাউসগুলিকে ‘ম্যাগাজ়িন’ বলা হয়। কয়েক বিঘা ফাঁকা জায়গায় ৪০০-৫০০ মিটার লম্বা এক-একটি ঘর বানিয়ে তৈরি হয় ম্যাগাজ়িন। এমন ঘরের চার দিকে জলাশয় তৈরি করতে হয়। ঘরগুলি হতে হয় তাপ নিরোধক। ঘরের ছাদের নীচে সে জন্য কয়েক স্তরে শেড দিয়ে তার নীচে বাজি রাখতে হয়। শর্ট সার্কিট বা অন্য কোনও ভাবে বিপদ এড়াতে ঘরে আলোর ব্যবস্থা রাখা হয় না। অগ্নিকাণ্ড এড়াতে সেখানে মোমবাতি নিয়ে প্রবেশও নিষিদ্ধ।
আরও পড়ুন: কোর্টের নির্দেশ বলবৎ করতে জোর সচেতনতায়
শহিদ মিনার এলাকার বাজি ব্যবসায়ী সরলকুমার সাহা বলেন, ‘‘কলকাতায় এ রকম কোনও জায়গাই তৈরি করা যায়নি। উলুবেড়িয়া আর তারকেশ্বরে এমন ঘর রয়েছে ঠিকই। কিন্তু সেখানে বাজি নিয়ে যেতে গাড়ি ভাড়াই পড়বে অন্তত তিন হাজার টাকা। তার উপরে কার্টনপিছু এক বছরের ভাড়া গুনতে হবে ৩০০ টাকা করে। যে জিনিস বিক্রি করে এক টাকাও আয় হবে না, তার জন্য এত খরচ করবে কে?’’ বড়বাজারের এক বাজি ব্যবসায়ী সুনীল সিংহ যদিও বললেন, ‘‘এত ঝামেলায় যাব না। আদালত তো রাস্তা দিয়ে বাজি নিয়ে যেতে বারণ করেনি। অন্য রাজ্যে বেচে দেব।’’ হাওড়ার ব্যবসায়ী সমীর ঘোষেরও মন্তব্য, ‘‘আমরাও বাজি বাইরে পাঠিয়ে দেব ভাবছি। যা বিক্রি হওয়ার হবে, না হলে দোকানে বা দোকানের কাছাকাছি কোনও ঘরে সব বাজি রেখে দেব।’’ কিন্তু আদালতের রায়ের পরেও বাজি বিক্রির আশা করছেন? কোনও উত্তর মেলেনি সমীরবাবুর থেকে।
এখানেই বিপদের আশঙ্কা করছেন অনেকে। তাঁরা জানাচ্ছেন, এত দিন টালা, বেহালা, কালিকাপুর, বিজয়গড় এবং শহিদ মিনারে সরকারি বাজি বাজার বসত। টালা, শহিদ মিনারের মতো কিছু বাজারের ব্যবসায়ীরা এ বারের পরিস্থিতি বুঝে ‘ধীরে চলো’ নীতি নিলেও বাকিরা বিক্রির জন্য ইতিমধ্যেই প্রচুর বাজি তুলে ফেলেছিলেন। সেই বাজি বসতি এলাকায় রেখে দিলে বা গোপনে বিক্রির চেষ্টা করলে বিপদ ঘটতে বাধ্য।
আরও পড়ুন: বাজি ফাটেনি, তার আগেই হাওয়া খারাপ এই শহরের
কলকাতা পুলিশের ডিসি (রিজার্ভ ফোর্স) সুখেন্দু হীরা এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘স্থানীয় থানার তরফে তো অভিযান হয়ই, গোয়েন্দা বিভাগের সঙ্গে রিজার্ভ ফোর্সও অভিযান চালায়। এ বারও তা হবে। ব্যবসায়ীরা সেই বুঝে পদক্ষেপ করলে ভাল।’’ ‘পশ্চিমবঙ্গ বাজি শিল্প উন্নয়ন সমিতি’র সম্পাদক তথা আইনজীবী শুভঙ্কর মান্না বলেন, ‘‘আদালতের নির্দেশকে সকলেই স্বাগত জানিয়েছি। আশা করব, ব্যবসায়ীরা সেই মতো উদ্যোগী হয়ে সুরক্ষিত কোথাও বাজি রাখার ব্যবস্থা করবেন।’’