দেবস্মিতা চৌধুরী
এক বারেই শেষ নয়। বার বার প্রতিবাদ জানাতে চান তিনি। যা প্রতিবাদযোগ্য, তাকে ফালাফালা করেই। সিএএ বা সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিলিপি ছিঁড়ে মঙ্গলবার ঠিক যেমনটি তিনি করেছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন মঞ্চে। সেখানে তিনি বলেছিলেন, ‘‘হম কাগজ নেহি দিখায়েঙ্গে। ইনকিলাব জ়িন্দাবাদ।’’ বুধবারেও যাদবপুরের স্বর্ণপদক পাওয়া ছাত্রী দেবস্মিতা চৌধুরী জানিয়ে দিলেন, আবার প্রতিবাদের সুযোগ পেলে তিনি একই ভাবে প্রতিবাদ জানাবেন।
সমাবর্তন-মঞ্চে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য প্রদীপকুমার ঘোষের কাছ থেকে পদক নেওয়ার পরে দেবস্মিতা জানিয়েছিলেন, দেশ জুড়ে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ চলছে। তাঁর মনে হয়েছিল, স্বর্ণপদক নেওয়ার জন্য মঞ্চে ওঠার সুযোগটাকে ওই আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর কাজে লাগানো উচিত।
কয়েক জন বন্ধুর সঙ্গে একটি ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করেছেন দেবস্মিতা। সেখানে এনআরসি-র বিরুদ্ধে সচেতনতা বাড়ানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। সেই কাজের জন্য অসমেও যাতায়াত করছেন। ওই ছাত্রী জানান, এনআরসি-র প্রভাব অসমের মানুষদের উপরে কী ভয়ঙ্কর ভাবে পড়েছে, তিনি তা সামনাসামনি দেখেছেন। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনকে ‘অসাংবিধানিক’ বলে অভিহিত করে দেবস্মিতা জানান, এই আইনের বিরুদ্ধে মানুষের প্রতিবাদ তাঁকে ছুঁয়ে গিয়েছে। জামিয়া মিলিয়া ও আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা প্রতিবাদ জানালে পুলিশ যে-ভাবে তাঁদের উপরে চড়াও হয়েছে, এটা তারও প্রতিবাদ। প্রস্তাবিত জাতীয় শিক্ষানীতি নিয়েও তাঁর আপত্তি আছে। ওই কৃতী ছাত্রীর প্রশ্ন, ‘‘যে-দেশে নেতা-মন্ত্রীদের অনেকেই নিজেদের শিক্ষাগত যোগ্যতার কাগজ দেখাতে পারেন না। তাঁরা নাগরিকদের কাছে কাগজ দেখতে চান কী করে?’’
দেবস্মিতা যে-কোনও মঞ্চেই এই নিয়ে তাঁর বক্তব্য জানাতে
চান। প্রয়োজন হলে একই ধাঁচে প্রতিবাদ করবেন তিনি। সেপ্টেম্বরে যাদবপুর ক্যাম্পাসে এসে ছাত্র-বিক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। পরে বাবুল জানিয়েছিলেন, এই সব পড়ুয়া এনআরসি-র মানে জানেন না। দেবস্মিতা এ দিন জানিয়েছেন, বাবুল চাইলে তিনি তাঁর সঙ্গে এনআরসি নিয়ে আলোচনা করতে তৈরি। তিনি বলেন, ‘‘আমি কোনও রাজনৈতিক দলের অনুগামী নই। এনআরসি নিয়ে অসমবাসীর আতঙ্ক নিজের চোখে দেখেছি। আর দেখছি সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে সাধারণ মানুষের প্রতিবাদ।’’
তাঁর প্রতিবাদের ভিডিয়ো যে এই ভাবে ভাইরাল হয়ে যাবে, তা ভাবেননি দেবস্মিতা। অনেকের কাছে থেকেই অভিনন্দন বার্তা পাচ্ছেন। কেউ ফোন করছেন, কেউ মেসেজ। ‘‘রাষ্ট্র কোনও কিছু চাপিয়ে দিতে চাইলে কোথাও তো কাউকে প্রতিবাদ করতেই হয়,’’ বলছেন দেবস্মিতা।