আমফানের তাণ্ডবে ভেঙে পড়ল গাছ। —নিজস্ব চিত্র।
গত কয়েক দশকের মধ্য সবচেয়ে বড় দুর্যোগের মুখোমুখি হল কলকাতা। আয়লা, বুলবুল কিংবা ফণী— কোনও ঘূর্ণিঝড়ই এত শক্তিশালী অবস্থায় কলকাতায় প্রভাব ফেলেনি, যতটা তাণ্ডব চালাল আমপান।
উপকূলে আছড়ে পড়ার সময় ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৫৫ থেকে ১৬৫ কিলোমিটার। তখন কলকাতায় ঝড়ের গতিবেগ গড়ে ১১০-১২০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায়। ২০০৯ সালে আয়লা যখন সুন্দরবনের উপকূলে স্থলভাগে আছড়ে পড়েছিল, সেখানে তার গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১২৫-১৩০ কিলোমিটার। আর কলকাতায় কার্যত আয়লার লেজের ঝাপটা লেগেছিল। কলকাতায় ঝড়ের গতিবেগ সে বার ছিল ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটারের আশেপাশে। তবু কার্যত লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছিল শহর। আর আমপানে এ বার কলকাতা আর আশপাশের এলাকা মিলিয়ে সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৩৩ কিলোমিটার।
গত বছরের নভেম্বরে এসেছিল ঘূর্ণিঝড় বুলবুল। বুলবুল উপকূলে আছড়ে পড়ার সময় তার গতিবেগ ছিল ১৩০, তবে তার তাণ্ডব সুন্দরবন এলাকাতেই সীমাবদ্ধ ছিল। কলকাতায় তার খুব একটা প্রভাব পড়েনি। আবার গত বছর আরও এক ঘূর্ণিঝড় ফণী আছড়ে পড়েছিল ওড়িশার উপকূলে। কলকাতায় তার প্রভাব পড়ার আশঙ্কা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তেমন কিছু ঘটেনি ।
আরও পড়ুন: স্থলভাগে আছড়ে পড়ছে আমপান, সাগরদ্বীপ মাত্র ৩৫ কিমি দূরে
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের আধিকর্তা গণেশকুমার দাস বলেন, ‘‘অত্যন্ত শক্তিশালী এই ঘূর্ণিঝড় যদি শেষ মুহূর্তে গতিপথ পরিবর্তন না করে, তা হলে কলকাতায় ঝড়ের গতিবেগ থাকবে ১১০ থেকে ১২০ কিলোমিটার। পূর্ব কলকাতা এবং দক্ষিণ কলকাতায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।’’
আরও একটি কারণে এই আমফান ভয়ঙ্কর হতে চলেছে। আলিপুরের আবহবিদদের মতে, প্রায় ১২ ঘণ্টা ধরে তাণ্ডব চালাবে এই ঘূর্ণিঝড়। কলকাতাতেও তার প্রভাব অন্য ঝড়ের চেয়ে দীর্ঘস্থায়ী হবে। ফলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। শহর কলকাতায় অনেক পুরনো বাড়ি রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় এবং ভারী বৃষ্টির জেরে বহু বাড়িঘর ভেঙে পড়তে পারে। উপড়ে পড়তে পারে বহু গাছপালা।
আয়লার সময় এই রকম অনেক তাণ্ডবের সাক্ষী ছিল কলকাতা। —ফাইল চিত্র
আরও পড়ুন: আমপান ঢোকার আগেই তাণ্ডব দিঘা-বকখালিতে, গাছ পড়ল কলকাতাতেও
অন্য দিকে, আমপানের প্রভাবে ইতিমধ্যেই কলকাতায় প্রচণ্ড বেগে ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে চলছে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি। পরিস্থিতির মোকাবিলায় কোমর বেঁধে নেমেছে কলকাতা পুরসভা। পুরসভায় রয়েছেন প্রশাসক মণ্ডলীর চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিম-সহ অন্যান্য সদস্যরা। প্রাক্তন মেয়র পারিষদ তারক সিংহকে গোটা বিষয়ের তদারকির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।