পাতিপুকুর রেল সেতুর নীচে জমা জলে ডুবে রয়েছে অ্যাম্বুল্যান্স। বৃহস্পতিবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
ত্রিমুখী আক্রমণ! ঘূর্ণিঝড় আমপানের ধাক্কায় শহর জুড়ে টানা কয়েক ঘণ্টা ধরে বৃষ্টি হয়েই চলেছিল। তার সঙ্গে যোগ হয়েছিল বিদ্যুৎ বিপর্যয়। যার জেরে নিকাশির জল নামাতেই পারল না পাম্পিং স্টেশনগুলি। বুধবারের সেই ভোগান্তিকে উস্কে দিয়েছিল গঙ্গার জোয়ার। ওই ত্রিমুখী আক্রমণে বুধবার বিকেল থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত জলমগ্ন থাকল শহরের বিভিন্ন অংশ।
অথচ কলকাতা পুরসভা আগাম ঘোষণা করেছিল, আমপানের জেরে শহরের জমা জল দ্রুত সরাতে স্টেশনগুলিতে ৩৭৭টি পাম্প প্রস্তুত আছে। কিন্তু আমপান শহরে আছড়ে পড়তেই বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বালিগঞ্জ, পামারবাজার, বীরপাড়া-সহ পাঁচটি পাম্পিং স্টেশনে। ফলে জমা জল দ্রুত বার করার কাজ থমকে যায়। গঙ্গার সঙ্গে রয়েছে শহরের আটটি লকগেট। শহর জলমগ্ন হলে দ্রুত জল বার করতে সেগুলি খুলে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি যে এমন হতে পারে সেটা আঁচ করে লকগেটগুলি খুলে দেওয়ার জন্য পুরসভার তরফে সেচ দফতরে আবেদন করা হয়েছিল। সেচ দফতর রাজিও ছিল। বাদ সাধে বৃষ্টি।
রাত আটটার পরে বৃষ্টি চলাকালীনই জোয়ার শুরু হয় গঙ্গায়। তখন গঙ্গার জলস্তর নিকাশি নালার সমান হয়ে যাওয়ায় লকগেট খোলা যায়নি। এক পুরকর্তা জানান, ওই সময়ে লকগেট খুলে দিলে উল্টে গঙ্গার জল শহরে ঢুকে যেত। তাই বন্ধ রাখা ছিল সেগুলি। তবে ভাটার সময়ে লকগেট খুললে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়।
বৃষ্টি শুরু হয় বুধবার সকালেই। বেলা ১২টার পরে বৃষ্টির পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। ঝড়ের সঙ্গে নাগাড়ে বৃষ্টি চলে রাত ১০টা পর্যন্ত। তার পরে বৃষ্টির তীব্রতা কমলেও তত ক্ষণে জলমগ্ন হয়ে গিয়েছে শহরের অধিকাংশ রাস্তা। এমনকি জলে থইথই করছিল এ জে সি বসু এবং মা উড়ালপুল। ঝড়ের সময়ে বন্ধ ছিল ওই দুই উড়ালপুল। রাস্তার জমা জলে ডুবে মৃত্যু হয় উত্তর কলকাতার তিন জন এবং এক্সাইড মোড়ে এক জনের।
গভীর রাতে বাড়ির ফেরার সময়ে ঝড়ে বিপর্যস্ত শহরের এই অবস্থা দেখেন কলকাতা পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিম। এমনকি বুধবার রাতে নবান্ন থেকে বেরিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বাড়ি ফিরবেন কোন পথে, তা নিয়ে ধন্দে পড়ে লালবাজার। কারণ, হরিশ মুখার্জি রোডও ছিল জলমগ্ন। লালবাজার জানিয়েছে, বুধবারের দুর্যোগে জলমগ্ন হয়ে যায় সুকিয়া স্ট্রিট, ঠনঠনিয়া কালীবাড়ি, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, রামমোহন সরণি, পার্ক স্ট্রিট, সুরাবর্দি লেন, এ জে সি বসু রোড, শরৎ বসু রোড, পার্ক সার্কাস কানেক্টর, আলিপুর রোড, শেক্সপিয়র সরণি, এম জি রোড এবং বেহালার বিভিন্ন অংশ। পাতিপুকুর রেল সেতুর নীচে রাত থেকে সকাল পর্যন্ত আটকে ছিল অ্যাম্বুল্যান্স। লালবাজারের দাবি, গাড়ি কম থাকায় বিভিন্ন রাস্তা বন্ধ হলেও এ দিন সকালে ভোগান্তি হয়নি।