প্রতীকী ছবি
লকডাউনের মধ্যেই এ বার নতুন আতঙ্ক ছড়াচ্ছে ঘূর্ণিঝড়। বুধ অথবা বৃহস্পতিবার সকালে ‘আমপান’ নামের সেই ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়তে পারে কলকাতা-সহ গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে।
আবহাওয়া দফতরের মতে, ওই ঝড় এলে শহরে প্রবল বৃষ্টিপাতের সঙ্গে ঘণ্টায় ৬৫ থেকে ৭০ কিলোমিটার গতিতে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে। ওই ঝড়ের মোকাবিলায় সোমবার থেকেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে কলকাতা পুলিশ ও পুরসভা।
লালবাজার সূত্রের খবর, ঝড়ে জরাজীর্ণ বাড়ি ভেঙে যাতে কোনও অঘটন না ঘটে, তার জন্য ওই সমস্ত বাড়ি এবং সেখানকার আবাসিকদের নামের তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছে প্রতিটি থানাকে। ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সম্ভাব্য আশ্রয়স্থল খুঁজে রাখতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই মতো এ দিনই বিভিন্ন থানার আধিকারিকেরা এলাকার স্কুল ও কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে রেখেছেন।
দুর্ঘটনা এড়াতে নির্মীয়মাণ বিভিন্ন বহুতলের ছাদ থেকে ক্রেন বা ভারী যন্ত্রপাতি সরিয়ে ফেলার ব্যবস্থা করতেও থানাগুলিকে নির্দেশ দিয়েছে লালবাজার। ঝড়ের দাপটে সেগুলির কোনওটি নীচে পড়লে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। পুলিশ জানিয়েছে, আপৎকালীন পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস ও খাদ্যসামগ্রীর দোকান চিহ্নিত করা হচ্ছে।
লকডাউনে প্রতিটি থানা এবং ট্র্যাফিক গার্ড রোজ গড়ে কয়েক হাজার দুঃস্থ মানুষকে দু’বেলা খাবারের জোগান দিচ্ছে। তা যাতে বন্ধ না হয়, তা-ও নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। শহরের যে সব জায়গায় জল জমে, সেখানকার বাসিন্দাদের প্রয়োজনে অন্যত্র সরানো হতে পারে। কলকাতা পুলিশ ট্রেনিং স্কুলে জরুরি ভিত্তিতে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর কয়েকটি বিশেষ দলকে তৈরি রাখা হচ্ছে।
লকডাউনের কারণে রাস্তাঘাটে গাড়ি এখন কম। লোকজনের সংখ্যাও হাতে গোনা। গঙ্গার ঘাটগুলিতেও ভিড় তেমন নেই। লঞ্চ পরিষেবা বন্ধ। তাই অন্যান্য বারের তুলনায় এ বার বিপদের আশঙ্কা কম। তবে ঝড়ের সময়ে সব কিছুর উপরেই নজর রাখা হচ্ছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। প্রয়োজনে কলকাতা পুলিশের ন’টি ডিভিশনে একটি করে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর দল রাখা হতে পারে। খোলা হতে পারে বিশেষ কন্ট্রোল রুমও।
ঝড়ের মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিচ্ছে পুরসভাও। ঠিক হয়েছে, রাস্তার জমা জল বার করতে ৩৭৭টি পাম্প তৈরি রাখা হবে। থাকবে পোর্টেবল পাম্পও। পাম্প চালাতে প্রতিটি বরোয় একটি করে দল থাকবে। সেই দলে সিইএসসি-র এক জন করে কর্মীও থাকবেন।
এ দিন বিকেলে পুর ভবনে ঘূর্ণিঝড় নিয়ে বৈঠকে পুর প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান তথা পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এবং প্রশাসকমণ্ডলীর চার সদস্য ছাড়াও সেচ, কলকাতা পুলিশ এবং পুরসভার সমস্ত দফতরের ডিজি-রা উপস্থিত ছিলেন। সিদ্ধান্ত হয়েছে, পুর কন্ট্রোল রুম ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকবে আগামী ক’দিন। ঝড়বৃষ্টির সময়ে রাস্তার গালিপিট যাতে আটকে না যায়, সে দিকেও নজর রাখা হবে। ঝড়ে বড় বড় গাছ ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই গাছ কাটার যন্ত্র নিয়ে তৈরি থাকবেন পুরকর্মীরা। শহর জুড়ে যে সব বড় হোর্ডিং আছে, দ্রুত সেগুলিকে সরাতে নির্দেশ দিয়েছেন ফিরহাদ। এখন গঙ্গার জলস্তর বেশ নীচে। তাই বৃষ্টির সময়ে গঙ্গার সঙ্গে যুক্ত লকগেটগুলি খুলে রাখতে বলা হয়েছে সেচ দফতরকে। যাতে জমা জল দ্রুত বেরোতে পারে।
তড়িদাহত হওয়ার ঘটনা আটকাতে পুরসভা ও সিইএসসি-কে বলা হয়েছে, শহরের সর্বত্র বিদ্যুৎস্তম্ভ ও মিটার বক্সের অবস্থা পরীক্ষা করতে। পুরসভার বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর কিছু ত্রাণসামগ্রীও মজুত করে রেখেছে।
‘আমপান’-এর জেরে ক্ষয়ক্ষতি হলে তা রুখতে তৈরি হচ্ছে বিধাননগর পুরসভাও। সল্টলেকে পুর ভবন এবং রাজারহাটে আজ, মঙ্গলবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত পুরকর্মীদের একাধিক দল তৈরি করা হয়েছে। খোলা হচ্ছে কন্ট্রোল রুম। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, পাম্প, গাড়িও মজুত রাখা হচ্ছে বলে পুরসভা সূত্রের খবর।
আরও পড়ুন: ফের বিতর্কে মেডিক্যাল, দেহ পড়ে আড়াই ঘণ্টা