নীরদ সি চৌধুরী। ফাইল চিত্র।
দক্ষিণ কলকাতার একটি অভিজাত ক্লাবের প্রদর্শন কক্ষ থেকে উধাও হয়ে গিয়েছিল অনাবাসী ভারতীয় লেখক, প্রয়াত নীরদ সি চৌধুরীর নানা মূল্যবান সামগ্রী ও স্মারক। সেই ঘটনায় নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে ভবানীপুর থানাকে এফআইআর দায়ের করে তদন্ত শুরু করার নির্দেশ দিলেন আলিপুর আদালতের মুখ্য বিচারবিভাগীয় বিচারক শুভ্রসোম ঘোষাল।
আলিপুর আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, গত জানুয়ারি মাসে নীরদ সি চৌধুরীর ছেলে পৃথ্বীনারায়ণ চৌধুরী আদালতে এই ঘটনায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। তাঁর বক্তব্য, তিনিই আইনত তাঁর বাবার সম্পত্তির উত্তরাধিকারী। এই সংক্রান্ত নথি কলকাতা হাই কোর্টের কাছে রয়েছে।
পৃথ্বীনারায়ণ জানান, ১৯৯৯ সালে নীরদ সি-র সমস্ত স্মারক, মেডেল ও দুষ্প্রাপ্য কিছু গ্রন্থ একটি সম্মতিপত্রের মাধ্যমে তিনি দক্ষিণ কলকাতার ওই ক্লাব কর্তৃপক্ষকে দিয়েছিলেন তাঁদের প্রদর্শন কক্ষে রাখার জন্য। তাঁর দাবি, ক্লাব থেকে খোয়া যাওয়া ওই সমস্ত স্মারকের বর্তমান মূল্য কয়েক মিলিয়ন পাউন্ড। কারণ, সেই সব জিনিসের মধ্যে উইলিয়াম শেক্সপিয়রের প্রবন্ধের প্রথম সংস্করণও রয়েছে। যা এক কথায় অমূল্য।
পৃথ্বীনারায়ণের অভিযোগ, সম্প্রতি তিনি লক্ষ করেন, ওই ক্লাবে তাঁর বাবার দুষ্প্রাপ্য কিছু স্মারক ও গ্রন্থ নেই। বিষয়টি জানাতে ক্লাব কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাধিক বার যোগাযোগ করেন তিনি। কিন্তু তাঁর অভিযোগ, ওই ক্লাব তাঁর সঙ্গে কোনও রকম সহযোগিতা করেনি। তিনি জানান, তাঁর সঙ্গে ক্লাব কর্তৃপক্ষের যে চুক্তি হয়েছিল, তাতে স্পষ্ট বলা ছিল, কড়া নিরাপত্তার বলয় তৈরি করে তবেই ওই সমস্ত অমূল্য সামগ্রী জনসাধারণের জন্য প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হবে।
আদালতে নিজের আবেদনে পৃথ্বীনারায়ণবাবু জানিয়েছেন, সম্প্রতি তাঁর নজরে আসে, ওই ক্লাব থেকে নীরদ সি-র বেশ কিছু দুষ্প্রাপ্য ও অমূল্য জিনিস উধাও। সেগুলি কোথায় গেল, তা জানতে ক্লাবের কর্তাদের কাছে বেশ কয়েক বার দরবার করেছেন তিনি। কিন্তু সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে তাঁর সঙ্গে কোনও রকম সহযোগিতা করা হয়নি। তাঁর সন্দেহ, ওই সমস্ত স্মারক ক্লাবের প্রদর্শন কক্ষ থেকে চুরি হয়ে গিয়ে থাকতে পারে। তাই বিষয়টিতে আদালতের হস্তক্ষেপ চেয়ে আবেদন জানান তিনি। আলিপুর আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ক্লাবটি ভবানীপুর থানা এলাকায়।
পৃথ্বীনারায়ণের অভিযোগের ভিত্তিতে গত জানুয়ারি মাসে মুখ্য বিচারবিভাগীয় বিচারক শুভ্রসোম ঘোষাল ভবানীপুর থানাকে এ বিষয়ে অনুসন্ধান করে আদালতে রিপোর্ট জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন।
সম্প্রতি ভবানীপুর থানা সেই অনুসন্ধান রিপোর্ট জমা দিয়ে জানিয়েছে, অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। ক্লাব থেকে বহু মূল্যবান সামগ্রী উধাও বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে। এর পরেই আদালতে দায়ের করা পৃথ্বীনারায়ণের অভিযোগপত্রকে এফআইআর হিসেবে বিবেচনা করে ভবানীপুর থানাকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
আদালত সূত্রের খবর, আগামী ২৫ এপ্রিল প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট আদালতে পেশ করার জন্য ভবানীপুর থানাকে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।