Coronavirus Lockdown

ছাড় মিলতেই বেপরোয়া, সতর্ক করছেন ডাক্তারেরা

কড়াকড়ি খানিকটা শিথিল হতেই শুরু হয়েছে নিয়ম ভাঙার পালা। রাস্তায় রোজই বেরিয়ে পড়ছে অজস্র গাড়ি। সকলেই যে খুব জরুরি কোনও প্রয়োজনে বেরোচ্ছেন, এমনটাও নয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০২১ ০৫:৩০
Share:

সোমবার আন্তর্জাতিক মোটরবাইক দিবসে শহরের রাস্তায় বাইকের ভিড়। সংক্রমণ রুখতে সরকারি কড়াকড়ি এখনও জারি থাকলেও মাস্ক নেই এক বাইকচালকেরও। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

কড়াকড়ি খানিকটা শিথিল হতেই শুরু হয়েছে নিয়ম ভাঙার পালা। রাস্তায় রোজই বেরিয়ে পড়ছে অজস্র গাড়ি। সকলেই যে খুব জরুরি কোনও প্রয়োজনে বেরোচ্ছেন, এমনটাও নয়। আর শহরবাসীর একটি বড় অংশের এই বেপরোয়া মনোভাবই ভয় ধরাচ্ছে চিকিৎসক ও সচেতন নাগরিকদের মনে। তাঁদের বক্তব্য, করোনার সংক্রমণ এখন নিম্নমুখী ঠিকই, কিন্তু প্রশাসনিক ছাড়ের সুযোগ নিয়ে মানুষের দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণের জেরে ফের তা বেড়ে যাবে না তো? তাঁদের মতে, এটাই সতর্ক হওয়ার আসল সময়। নিয়মবিধি মেনে চললে আর বিধিনিষেধ জারির প্রয়োজন না-ও হতে পারে। কিন্তু এর অন্যথা হলে অচিরেই পড়তে হতে পারে তৃতীয় ঢেউয়ের মুখে!

Advertisement

মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার যেমন বললেন, “জীবন যেমন প্রয়োজন, জীবিকাও তেমনই প্রয়োজন। এই প্রয়োজনের কথাটা বুঝেই কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়েছে। ছাড় দেওয়া মানেই আর কিছু মানার দরকার নেই, এটা ভাবলে মুশকিল। নিজেদেরই ঠিক করতে হবে যে, যেটুকু ছাড় আছে, সেটুকুই নেব। যাতে ছাড় নেই, তা করতে গিয়ে অযথা বিপদ ডেকে আনব না। অর্থাৎ, কোনও কিছুর সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা ছেড়ে সুস্থ থাকার চেষ্টা করতে হবে।”

চিকিৎসক কুণাল সরকার বলেন, “এই মুহূর্তে শুধু মানুষের সতর্কতা নয়, সেই সঙ্গে রাষ্ট্রের সতর্কতাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। মানুষ সতর্ক কি না, তা বোঝা যাবে, তাঁরা মাস্ক পরছেন কি না বা দূরত্ব-বিধি বজায় রাখছেন কি না, সেটা দেখে। আর রাষ্ট্রের সতর্কতা বোঝা যাবে তখনই, যখন দেখা যাবে, সংক্রমণ কমলেও করোনার পরীক্ষা কমছে না এবং ছোঁয়াচ এড়ানো নিয়ে আগের মতোই কড়াকড়ি হচ্ছে।” কুণালবাবুর দাবি, “এই দু’পক্ষের ভূমিকাই এখন খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, সংক্রমণ কমলেই দেখা যাচ্ছে, পরীক্ষা কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ছোঁয়াচ এড়ানোর সব রকম চেষ্টা ঘুচে যাচ্ছে। এর জেরে হুড়মুড়িয়ে আমরা গাড্ডায় গিয়ে পড়ছি। এ বার সেটার পুনরাবৃত্তি আর হতে দেওয়া যাবে না।”

Advertisement

চিকিৎসকেরা বলছেন, এর সঙ্গেই এই মুহূর্তে অত্যন্ত জরুরি কোভিড-পরবর্তী চিকিৎসায় জোর দেওয়া। প্রতিদিনই রক্তচাপ ও রক্তে শর্করার মাত্রা মেপে চিকিৎসকের যথাযথ পরামর্শ মেনে চলতে হবে। কোভিড থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তিদের ফিজ়িয়োথেরাপির পাশাপাশি চালিয়ে যেতে হবে সুষম খাবার খাওয়া এবং অক্সিজেনের স্যাচুরেশন মাপা। বক্ষরোগের চিকিৎসক অনির্বাণ নিয়োগী বললেন, “শহরের দৈনিক সংক্রমণ দেড়শোর নীচে নেমেছে বটে, কিন্তু তার মানে কাজ শেষ হয়ে যায়নি। নতুন রোগীর চাপ কিছুটা কমায় কোভিড থেকে সদ্য সেরে ওঠা রোগীদের দিকে আর একটু বাড়তি নজর দেওয়ার সুযোগ এসেছে। এই সুযোগে করোনার জেরে যাঁর যে যে দিকে ক্ষতি হয়েছে, সে দিকে নজর দিতে হবে। তা হলেই সংক্রমণ শূন্যে পৌঁছনোর পাশাপাশি সার্বিক ভাবে করোনামুক্তি সম্ভব।”

মেডিসিনের চিকিৎসক কাজি সামসুজ্জামান যদিও মনে করেন, “সংক্রমণ কমলেও আরও কিছু দিন দেখে নিয়ে বিধিনিষেধ শিথিল করলে ভাল হত। কারণ, ছাড়ের বেপরোয়া সুযোগ নেওয়ায় যদি করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের মধ্যে পড়তে হয়, তা হলে বিপদ। সেই সময়ে যদি দৈনিক আট লক্ষ রোগীর চাপ সামলাতে হয়, তা হলে পেরে ওঠা মুশকিল।” সেই সঙ্গেই তাঁর পরামর্শ, বিধিনিষেধ উপভোগে মন না-দিয়ে এই সময়টা বরং প্রতিষেধক নিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে জোর দেওয়া ভাল।

মনোরোগ চিকিৎসক জয়রঞ্জন রাম বললেন, “অনেকের কাছেই লকডাউনের কড়াকড়ি এক রকমের দমবন্ধ পরিস্থিতি। সেই পরিস্থিতি থেকে কাউকে ছাড়া হলে তিনি নিশ্চয়ই শ্বাস নেওয়ার জন্য আঁকুপাঁকু করবেন, প্রাণায়াম করবেন না! কিন্তু সেই শ্বাস নেওয়া যাতে বেপরোয়া ও উদ্দাম না হয়ে ওঠে, তা দেখতে হবে। মনে রাখতে হবে, করোনা শত্রু কিন্তু এখনও আনাগোনা করছে। তাকে একেবারে রুখে দেওয়ার এটাই সেরা সময়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement