প্রতীকী ছবি
কোভিড-১৯ সংক্রমণের ভয়ে তালাবন্ধ গোটা দেশ। বন্ধ কলকারখানা, স্কুল-কলেজ। তবে করোনাময় এ যুগে কমেনি স্যানিটারি ন্যাপকিনের চাহিদা। অথচ অভিযোগ, লকডাউনে সেটির জোগান সুনিশ্চিত করার দিকে নজর নেই কারও। তাই ন্যাপকিনের অভাবে বড় সমস্যার মুখোমুখি দেশের, বিশেষত গ্রামের মহিলারা।
কলকাতার ওষুধের দোকানের মালিকেরা জানাচ্ছেন, ড্রাগস অ্যান্ড কসমেটিক্স অ্যাক্টের অধীনে ওষুধপত্র থাকলেও স্যানিটারি ন্যাপকিন নেই। বর্তমান পরিস্থিতিতে এটিকে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বলে গণ্য করা হচ্ছে কি না, তা নিয়েও রয়েছে ধোঁয়াশা। ফলে লকডাউনে ব্যাহত হচ্ছে ন্যাপকিন সরবরাহ, যার জেরে মুশকিলে পড়ছেন শহরের মেয়েরা। অনলাইনেও পছন্দের ন্যাপকিন পাচ্ছেন না অনেকে। যদিও রাজ্যের নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা বলছেন, ‘‘সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে এই সমস্যা মেটানোর চেষ্টা চলছে। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগে বিভিন্ন এলাকায় ন্যাপকিন বিলি হচ্ছে। ন্যাপকিন বিক্রি সংক্রান্ত সমস্যা থাকলে ওষুধের দোকানগুলি রাজ্য সরকারের হেল্পলাইনে জানাক।’’
বেশি ভুগছেন অবশ্য গ্রামের মেয়েরাই। দামি ন্যাপকিন কেনার পয়সা না-থাকায় দোকানে গিয়েও কাউকে ফিরে আসতে হচ্ছে অনেককে। কাউকে আবার শুনতে হচ্ছে— ‘‘বাড়িতে আছ যখন, কাপড়েই কাজ চালাও।’’ স্ত্রীর জন্য এক সময়ে স্যানিটারি ন্যাপকিন বানাতে শুরু করা, ‘প্যাডম্যান’ অরুণাচলম মুরুগনন্থম এমন পরিস্থিতিতে রীতিমতো উদ্বিগ্ন। তিনি বলছেন, ‘‘গ্রামে ন্যাপকিন অমিল। লকডাউনে অন্য সব সমস্যা নিয়ে আলোচনা হলেও মেয়েদের এই ঋতু-সমস্যা নিয়ে ভাবছেন না কেউ।’’
আরও পড়ুন: ঝরা পাতায় মুখ ঢেকেছে দুই সরোবর
কেন এই অবস্থা? ‘কলকাতার প্যাডম্যান’ বলে পরিচিত শোভন মুখোপাধ্যায়ের ব্যাখ্যা, রাজ্যের সীমানা সিল করা এবং উৎপাদন বন্ধের কারণেই এই সমস্যা। রাজ্যের সীমানা বন্ধ থাকায় ভিন্ রাজ্য থেকে ন্যাপকিন পৌঁছচ্ছে না। ‘‘শহরের গণশৌচাগারগুলিতে রাখার জন্য ১০ হাজার প্যাড মুম্বই স্টেশনে পড়ে রয়েছে। লকডাউনে এক্সপ্রেস ট্রেন বন্ধ বলে আনা যাচ্ছে না।’’— বলছেন শোভন। দূরত্ব-বিধির কারণে বন্ধ রয়েছে ন্যাপকিন উৎপাদনকারী বহু ছোট সংস্থাও।
কোয়মবত্তূরে অরুণাচলমের ন্যাপকিন তৈরির মেশিন এবং কাঁচামাল সরবরাহকারী কারখানাও এখন বন্ধ। অরুণাচলম জানাচ্ছেন, দেশে প্রায় ২৫ হাজার ছোট সংস্থায় ১৫-২০ জন মহিলা মিলে ন্যাপকিন বানান। কিন্তু লকডাউনে তাঁদের রোজগার ও উৎপাদন, দুই-ই বন্ধ। অরুণাচলমের আশঙ্কা, ‘‘বিধি মেনে এখনই উৎপাদন শুরু না হলে সমস্যা আরও বড় আকার নেবে।’’
এ রাজ্যে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবারে কম খরচে ন্যাপকিন তৈরি করেন স্বপ্না মিদ্যা। তিনি বলেন, ‘‘আমার কারখানায় ১০ জন দুঃস্থ মেয়ে ন্যাপকিন বানান। সেগুলি বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে দেওয়া ছাড়াও পুরুলিয়া, সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকায় বিলি করা হয়। লকডাউনের কারণে ২০ মার্চ থেকে উৎপাদন বন্ধ।’’ তবে সমস্যার মোকাবিলায় সম্প্রতি রাজ্য সরকারের ‘সাথী’ প্রকল্পের মাধ্যমে জেলায় জেলায় ন্যাপকিন বিলির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
দেশের অন্যত্রও পরিস্থিতি আলাদা নয়। রাজস্থানের উদয়পুরে মহিলাদের ঋতুকালীন স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবক কপিলা ব্যাস বলছেন, ‘‘উদয়পুরের পাহাড়ি এলাকায় ন্যাপকিন মিলছে না। অঙ্গনওয়াড়ির কর্মকর্তাদের কাছে যে ন্যাপকিন থাকত, তা-ও শেষ। বাধ্য হয়ে মহিলারা কাপড় ব্যবহার করছেন।’’
অথচ কাপড়ের ব্যবহার বাড়লে ফের ঋতুকালীন সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অরুণাচলম-শোভনেরা।
অরুণাচলম সাফ বলছেন, ‘‘২০০৫ সালে ১২ শতাংশ ভারতীয় মহিলা ন্যাপকিন ব্যবহার করতেন। ২০১১ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৪ শতাংশে। কিন্তু লকডাউনে মেয়েরা যদি পুরনো অস্বাস্থ্যকর অভ্যাসে ফিরতে বাধ্য হন, তা হলে ভবিষ্যতে তাঁদের ন্যাপকিনে ফেরানো কঠিন হবে। দু’দশক ধরে যে কাজ করেছি, সবটাই আজ ব্যর্থ হতে বসেছে।’’
আরও পড়ুন: বাহিনীর মনোবল বাড়াতে থানায় ঘুরলেন সিপি
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)