অভিনব: বরাহনগরে এ ভাবেই চলে সচেতনতার প্রসার। নিজস্ব চিত্র
জীবন্ত মানুষের যমলোকে প্রবেশ নিষেধ। তা সত্ত্বেও দুই যমদূত ভুল করে গাঁয়ের ছেলে সিধুকে নিয়ে হাজির হয়েছিল যমলোকে। তা নিয়ে অবশ্য বেজায় ফাঁপরে পড়তে হয়েছিল স্বয়ং যমরাজকে। নাজেহাল হতে হয় চিত্রগুপ্ত ও বিচিত্রগুপ্তকেও।
বাঙালির মনে আজও গেঁথে রয়েছে ১৯৫৮ সালের সেই ছবি, ‘যমালয়ে জীবন্ত মানুষ’। জীবিত অবস্থাতেই যমলোকে যেতে হয়েছিল সিধু, অর্থাৎ অভিনেতা ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়কে। কিন্তু ২০২০-তে চিত্রটা উল্টো। লকডাউনের শহরে এ বার রাস্তায় নেমে এসেছেন যমরাজ নিজেই!
মাথা ভর্তি কোঁকড়া চুল। দু’পাশে দুটো শিং। কালো পশমের ‘রাজবেশ’ পরে, হাতে গদা নিয়ে প্রায় ছ’ফুট লম্বা যমরাজ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন বিভিন্ন এলাকার অলিগলিতে। রাস্তায় অহেতুক ঘুরে বেড়ানো লোকজনকে দেখলেই তাড়া করছেন গদা নিয়ে। এ বার অবশ্য জীবন্ত মানুষকে ধরে নিয়ে যাওয়ার মতো ভুল করছেন না যমরাজ। বরং কথা না-শোনা লোকজনের পিঠে পড়ছে গদা। আবার মাস্ক না থাকলেও কড়া ধমক দিচ্ছেন ‘যমলোকের অধিপতি’। পরক্ষণেই অবশ্য নিজের ঝোলা থেকে বার করে হাতে তুলে দিচ্ছেন মাস্ক।
কিন্তু করোনার এই পরিস্থিতিতে মর্ত্যের রাস্তায় যমরাজের মুখে মাস্ক নেই কেন? প্রশ্নটা শুনে তাঁর সহাস্য উত্তর, ‘‘মাস্ক পরলে কথা বলা মুশকিল। তাই খুলে রেখেছি।’’
লকডাউন সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে এ ভাবেই ‘মৃত্যুর দেবতা’-কে পাঠিয়ে প্রচার শুরু হয়েছে শহর থেকে শহরতলির বিভিন্ন পাড়ায়। চৈত্রের শেষে গাজন বা চড়কের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নানা রকম সেজে কিছু রোজগার হত বহুরূপীদের। কিন্তু লকডাউনের জেরে এ বার তা হয়নি। এখন তাই করোনা নিয়ে প্রচারে বেরিয়ে কিছু টাকা পাচ্ছেন বহুরূপীরা।
আরও পড়ুন: দিনভর দৌড়ে বেড়িয়েও শূন্য অনলাইন অর্ডারের ঝুলি
টিটাগড়ের পি কে বিশ্বাস রোডের জেলিয়াপাড়ায় থাকেন সং সাজানোর ঠিকাদার গুরুদাস গুছাইত। তিনি জানান, লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকে উত্তর শহরতলির বিভিন্ন জায়গার পাশাপাশি কলকাতা থেকেও ডাক আসছিল যমরাজকে নিয়ে সচেতনতামূলক প্রচার চালানোর জন্য। তিন-চার ঘণ্টার জন্য সং-পিছু পারিশ্রমিক ১১০০ টাকা।
গুরুদাসের দলেই কাজ করেন সঞ্জয় নামের এক যুবক। তাঁকেই মুখে সবুজ রং মাখিয়ে, জমকালো পোশাক পরিয়ে সাজানো হচ্ছে যমরাজ। কখনও তাঁর সঙ্গে থাকছেন চিত্রগুপ্ত, কখনও বা দু’টি কঙ্কাল। সম্প্রতি বরাহনগরের বিভিন্ন এলাকায় যমরাজকে নিয়ে লকডাউনের প্রচার চালানো হয়।
যমরাজের বাহন মোষ। তবে বরাহনগরের অলিগলিতে তিনি ঘুরেছেন পুরনো দিনের গাড়িতে চেপে। ওই কর্মসূচির উদ্যোক্তা শঙ্কর রাউত বলেন, ‘‘মানুষকে একটু আনন্দ দেওয়ার পাশাপাশি অভিনব পদ্ধতিতে সচেতনতার প্রসার ঘটাতেই যমরাজের ভাবনাটা মাথায় আসে। তবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই প্রচার হয়েছে।’’
তবে সে যুক্তি আর মানতে রাজি নন টিটাগড় এলাকার জেলিয়াপাড়ার লোকজন। তাঁদের দাবি, যমরাজ আর বেপাড়ায় ঘুরতে পারবেন না।
এত দিন কেউ কিছু না বললেও উত্তর ২৪ পরগনা স্পর্শকাতর জেলা হিসেবে চিহ্নিত হতেই সতর্ক হয়ে গিয়েছেন গুরুদাস, সঞ্জয়ের প্রতিবেশীরা। তাঁদের দাবি মেনে সম্প্রতি ওই দু’জন বাড়ি ফিরতেই ডেকে সাবধান করে দিয়েছেন পুরকর্তারা। টিটাগড় পুরসভার চেয়ারম্যান প্রশান্ত চৌধুরী বলেন, ‘‘ওঁদের বলে দিয়েছি, যেখানে সেখানে আর ঘুরে বেড়ানো যাবে না। কোথায় যাচ্ছেন, কার সংস্পর্শে আসছেন, কিছুই জানি না। তাই সাবধান করেছি।’’
অগত্যা, লকডাউনে এ বার ঘরবন্দি হলেন যমরাজও!
আরও পড়ুন: নিয়মের রকমফেরে ধোঁয়াশা লক্ষ্মণরেখায় বন্দি শহরে
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)