সবচেয়ে আগে টিকা পাবেন স্বাস্থ্যকর্মী এবং প্রথমসারির কোভিড-যোদ্ধারা। —ফাইল চিত্র।
আপনি কবে টিকা পাবেন?
এখনই পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে বলা যাচ্ছে না। তবে সারা দেশের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গেও টিকা আসতে চলেছে। নবান্ন সূত্রের খবর, তিন সপ্তাহের মধ্যে কলকাতায় চলে আসবে অক্সফোর্ডের করোনার টিকা ‘কোভিশিল্ড’। তবে কেন্দ্রীয় সরকার বিষয়টি যুদ্ধকালীন ভিত্তিতে দেখলে জানুয়ারির মাঝামাঝি কলকাতায় করোনার টিকা পৌঁছে যাওয়ার সম্ভাবনা। একটি ওয়াকিবহাল সূত্র জানাচ্ছে, পুনের সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি সরকারি ‘কোভিশিল্ড’ টিকার পাশাপাশি ফাইজার-সহ কয়েকটি টিকাও কলকাতায় চলে আসবে। তবে সেগুলি সরকারি টিকা হবে না। সেগুলি নিয়ে সরকার কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। তা ছাড়া, সেই টিকাগুলি পাওয়া যাবে খোলাবাজারে। ‘কোভিশিল্ড’-এর চেয়ে সেগুলির দাম একটু বেশি হওয়ারই সম্ভাবনা। করোনার টিকা দেওয়া হবে ইন্ট্রামাসকুলার ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে। অর্থাৎ দেহের পেশিতে। নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে টিকার দু’টি ডোজ নিতে হবে।
এখন প্রশ্ন, প্রথম টিকা এলে সেটি কারা পাবেন? শ্যামবাজারের যদুনাথ মল্লিক বা তালতলার অমিত রায় অথবা যাদবপুরের কৌশিক দাস কবে টিকা পাবেন?
এখনও স্পষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। কারণ, সবচেয়ে আগে টিকা পাবেন স্বাস্থ্যকর্মী এবং প্রথমসারির কোভিড-যোদ্ধারা। কেন্দ্রীয় সরকার সেই মর্মেই বিভিন্ন রাজ্য সরকারকে প্রস্তুত থাকতে বলেছে। যেমন পশ্চিমবঙ্গে প্রায় পাঁচ লক্ষ সরকারি স্বাস্থ্যকর্মী আছেন। তাঁদের সকলকেই একসঙ্গে টিকা দেওয়া হবে? নাকি যে জেলায় করোনার প্রকোপ বেশি, সেখানকার স্বাস্থ্যকর্মীদের আগে টিকা দেওয়া হবে, তা এখনও ঠিক হয়নি। রাজধানী শহর হিসাবে কলকাতার বাসিন্দারা আগে টিকা পাবেন? নাকি রাজ্যের দূরবর্তী কোনও জেলায় করোনার প্রকোপ বেশি হয়ে থাকলে সেখানকার স্বাস্থ্যকর্মীদের আগে টিকা দেওয়া শুরু হবে কি না তা এখনও স্পষ্ট নয়। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকার নির্দিষ্ট গাইডলাইন দেবে রাজ্য সরকারকে। রাজ্য সরকার সেই গাইডলাইন কতটা মেনে চলবে, সেটিও প্রণিধানযোগ্য। আবার স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশাপাশিই যাঁরা অন্য ‘স্পর্শকাতর এবং গুরুত্বপূর্ণ’ পেশায় রয়েছেন, তাঁদেরও প্রথমে টিকা দেওয়া হতে পারে। সে ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্যপুলিশের ডিজি-র মতো প্রথমসারির প্রশাসনিক অফিসার বা আসন্ন নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে রাজ্য নির্বাচন কমিশনারকেও অন্যদের আগে টিকা দেওয়া হতে পারে।
আরও পড়ুন: কমছে সংক্রমণের হার, বছর শুরুর দিনে করোনা সংক্রমিত ১,১৫৩
একটি সূত্র জানাচ্ছে, সাধারণ ভাবে প্রথমে স্বাস্থ্যকর্মী এবং প্রথমসারির কোভিড-যোদ্ধাদের টিকা দেওয়ার পরের পর্যায়ে টিকা দেওয়া শুরু হবে পঁয়তাল্লিশ-ঊর্ধ্ব নাগরিকদের। তাঁদের মধ্যে যাঁদের বয়স ৬৫-৭০ বছর এবং তাঁদেরও মধ্যে যাঁরা কো-মর্বিডিটিতে ভুগছেন, তাঁদের সবচেয়ে আগে টিকা দেওয়া হবে। পরের ধাপে টিকা পাবেন ১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়সীরা। এই প্রতিটি পর্যায়েই আধার কার্ডে উল্লিখিত বয়সকেই প্রমাণ হিসাবে গণ্য করা হবে বলে সূত্রের খবর। অনূর্ধ্ব-১৮ বয়সিদের টিকা দেওয়া নিয়ে এখনও সে ভাবে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তবে ওয়াকিবহাল মহলের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় সরকার নিশ্চয়ই ওই বিষয়েও নির্দিষ্ট গাইডলাইন স্থির করে দেবে।
শুক্রবার, বছরের প্রথমদিনে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তৈরি বিশেষজ্ঞ প্যানেলের ছাড়পত্র পাওয়ার পর অক্সফোর্ডের এই ‘কোভিশিল্ড’ টিকাকে দেশের ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘ড্রাগ কন্ট্রোল জেনারেল অব ইন্ডিয়া’-র কাছে পাঠানো হবে। তাদের ছাড়পত্র পেলেই শুরু হয়ে যাবে টিকা দেওয়া। প্রসঙ্গত, অ্যাস্ট্রাজেনেকা এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ গবেষণায় তৈরি ‘কোভিশিল্ড’ ভারতে তৈরি করছে সেরাম ইনস্টিটিউট। ভারত বায়োটেক আইসিএমআর-এর সঙ্গে যৌথ ভাবে তৈরি করছে কোভ্যাক্সিন।
আরও পড়ুন: দেশে আরও ৪ জনের দেহে মিলল করোনার নুতন স্ট্রেন, সংখ্যা বেড়ে ২৯
যদিও এখনও ভারত সরকার ও সেরাম ইনস্টিটিউটের মধ্যে নতুন করে টিকা কেনার কোনও চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়নি, তবু পৃথিবীর বৃহত্তম টিকানির্মাতা সেরাম ইনস্টিটিউট জানিয়ে দিয়েছে, ভারতের বাজারকেই তারা প্রথমে গুরুত্ব দেবে। সংস্থার প্রধান কার্যনির্বাহী আধিকারিক আদর পুনাওয়ালা জানিয়েছেন, তাঁরা ইতিমধ্যেই ৫ কোটি করোনা টিকার ডোজ তৈরি করার পরিকল্পনা নিয়েছেন। মার্চ মাসের মধ্যে ১০ কোটি ডোজ তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে সংস্থার। অন্যান্য অনেক টিকার মতো এই টিকা সংরক্ষণ করতে খুব বেশি পরিকাঠামোর দরকার নেই। প্রায় স্বাভাবিক তাপমাত্রাতেই এটি সংরক্ষণ করা যাবে। ফলে টিকার খরচ ভারতীয় মুদ্রায় ১,০০০ টাকারও কম হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। সরকার ও নির্মাতা সংস্থা সূত্রে তেমনই ইঙ্গিত। তবে খোলাবাজারে যে টিকা পাওয়া যাবে, তার মূল্য এর চেয়ে খানিক বেশি হওয়ারই সম্ভাবনা।
অক্সফোর্ড তাদের ঘোষণাপত্রে টিকার গড়ে ৭০ শতাংশ কার্যকারিতার কথা জানিয়েছিল। টিকার ডোজ নিয়েও বিতর্ক বেধেছিল। টিকার দু’টি ফুল ডোজ় মাত্র ৬২ শতাংশ কর্মক্ষমতা দেখিয়েছিল। সে দিক থেকে ফাইজার এগিয়ে। কারণ, তারা ৯৫ শতাংশ কার্যকারিতা দাবি করেছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনটির ‘বিতর্কিত’ দু’টি ফুল ডোজকেই ছাড়পত্র দিয়েছে ‘মেডিসিন অ্যান্ড হেল্থকেয়ার প্রডাক্টস রেগুলেটরি এজেন্সি’ (এমএইচআরএ)। কারণ, পরে অক্সফোর্ড তাদের চূড়ান্ত রিপোর্টে দাবি করেছে, দু’টি ডোজ দেওয়ার মাঝের সময়ের ব্যবধান বাড়ানোর ফলে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পেয়েছে।