Coronavirus in Kolkata

হাজার ঝড়ঝাপ্টা পেরিয়ে কোভিড-যুদ্ধে জয়ী

ভর্তির সঙ্গে সঙ্গেই সেখানে আমাকে স্থানান্তরিত করা হল আইসিইউয়ে। শুরু হল জীবন বাঁচানোর যুদ্ধ।

Advertisement

সঞ্জিত দাশগুপ্ত (বেসরকারি সংস্থার কর্মী)

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ মে ২০২১ ০৫:৪৭
Share:

—প্রতীকী ছবি।

প্রথমে নিজে করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া, সেখান থেকে সোজা আইসিইউয়ে। হাসপাতালে ভর্তি থাকা অবস্থাতেই বাবার মৃত্যুসংবাদ— এত কিছুর পরেও করোনাকে আমি হারাতে পেরেছি। সঙ্গী বলতে, কেবল মনের জোর। আর সেই মনের জোরেই এই বছর বিয়াল্লিশে অটুট রইল জীবনবাতি। হার মানল করোনা।

Advertisement

গত মাসের ২১ তারিখ। নিউ টাউনের অফিস থেকে রাতে বারাসতের ডাকবাংলোর বাড়িতে যখন ফিরলাম, শরীরটা বেশ দুর্বল লাগছিল। রাতে স্ত্রীর সঙ্গে খেতে বসেছিলাম। দেখি, খাবারে স্বাদ-গন্ধ কিছুই তেমন পাচ্ছি না! সেই সঙ্গে হাল্কা জ্বর। এত দিনে কাগজ পড়ে এটা জেনেছি, খাবারের স্বাদ-গন্ধ না পাওয়া করোনার উপসর্গ। সন্দেহ হল। ভাবলাম, রাতটা দেখি। সকালে উঠে যা করার করব। পরের দিন সকালে খেতে বসেও এক অবস্থা। সে দিন আর অফিসে গেলাম না। পরের দিনও খাবারের স্বাদ-গন্ধ পাচ্ছি না দেখে সন্দেহ বাড়ল। দেরি না করে বৃদ্ধ বাবা-মাকে মধ্যমগ্রামে বোনের বাড়িতে পাঠালাম। বাড়িতে রইলেন স্ত্রী। যদিও নিজেকে তত ক্ষণে একটা ঘরে বন্দি করে ফেলেছি। ২৬ তারিখ করোনা পরীক্ষা করা হল। দু’দিন বাদে রিপোর্ট এল— পজ়িটিভ। এ দিকে হাল্কা জ্বর আসছে-যাচ্ছে, সেই সঙ্গে অসম্ভব দুর্বলতা। চিকিৎসকের পরামর্শমতো বাড়িতেই ছিলাম, কয়েকটি ওষুধও চলছিল নিয়মিত। অক্সিমিটারে শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কখনও ৯৫, কখনও ৯৭। কিন্তু ৩০ এপ্রিল রাতে হঠাৎই শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমতে শুরু করল। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তা নেমে গেল ৯০-এর অনেকটা নীচে। বন্ধু-আত্মীয়দের ও চিকিৎসককে বিষয়টা জানালাম। ডাক্তার তখনই হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দিলেন। কিন্তু আশপাশের কোনও হাসপাতালেই শয্যা না পেয়ে চলে এলাম বারাসত জেলা হাসপাতালে। রাতে সেখানে ভর্তি করা হল আমায়। সঙ্গে চলতে থাকল অক্সিজেন।

অক্সিজেন চললেও অবশ্য অবস্থার কোনও উন্নতি হচ্ছিল না আমার। বরং ক্রমশ অন্যান্য শারীরিক সমস্যা বাড়ছিল। পরের দিন সকালে অবস্থার আরও অবনতি হওয়ায় বাড়ির লোকেরা আমাকে বারাসতের এক নার্সিংহোমে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করাল।

Advertisement

ভর্তির সঙ্গে সঙ্গেই সেখানে আমাকে স্থানান্তরিত করা হল আইসিইউয়ে। শুরু হল জীবন বাঁচানোর যুদ্ধ। চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে দেখলেন, ফুসফুসে সংক্রমণ মারাত্মক ভাবে ছড়িয়েছে। অবস্থা সঙ্কটজনক। এ ভাবেই যুদ্ধ চলল টানা দু’দিন। তার পরে অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও দেখা গেল, ফুসফুসের সংক্রমণ তখনও রয়েছে। চিকিৎসকদের মতে, তখনও ভয়ের কারণ রয়েছে। এ দিকে, আমার এই সংবাদ সহ্য করতে না-পেরে মারা গেলেন বাবা। যদিও আমি তখন সে সবের কিছুই জানি না। অবস্থার আরও কিছুটা উন্নতি হওয়ার পরেই বাবার মৃত্যুসংবাদ আমাকে দিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা। সেই খবর শুনে ভেঙে পড়লেও অবশ্য মনের জোরটা হারাইনি। অবশেষে ১০ মে নার্সিংহোম থেকে ছুটি মিলল। আপাতত আমি বাড়িতেই।

হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে করোনার সঙ্গে লড়তে লড়তে মৃত্যু-চিন্তাকে কখনও মনের মধ্যে ঠাঁই দিইনি। আইসিইউয়ে শুয়েও নিজের উপরে ভরসা রেখেছি। মনে মনে ভেবেছি, আমি পারব করোনাকে হারাতে। আর সেই মনের জোরকে সঙ্গী করেই অবশেষে হাজার ঝড়ঝাপ্টা পেরিয়ে কোভিড-যুদ্ধে জয়ী হতে পেরেছি আমি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement