Coronavirus in Kolkata

পাড়ায় আক্রান্ত ১৬, তবু বাজারে বেরোনো চলছেই

ছবিটা নাগেরবাজারের তেলিপুকুর এলাকার। করোনা কামড় বসিয়েছে সেখানকার একাধিক বাড়িতে। একটি বাড়িতে চার জন আক্রান্ত হওয়ার খবরও মিলেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২০ ০৩:০৩
Share:

অসচেতন: তেলিপুকুর কন্টেনমেন্ট জ়োনে মাস্ক না পরেই রাস্তায়। সোমবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

গত কুড়ি দিনে একটি এলাকা থেকেই ১৬ জনের আক্রান্ত হওয়ার খবর এসেছে। মারা গিয়েছেন এক জন। এলাকায় বন্ধ বেশির ভাগ দোকান। তবু রাস্তায় ব্যারিকেড টপকে মানুষের বাজারে যাওয়ার চেষ্টার বিরাম নেই। স্থানীয় এক বাসিন্দা বাজার করতে বেরিয়ে লঙ্কা না-পেয়ে আফশোস করে বলছেন, ‘‘বাড়িতে লঙ্কা নেই একটুও। একটু লঙ্কা না হলে কী ভাবে রান্না করব বলুন তো?’’

Advertisement

ছবিটা নাগেরবাজারের তেলিপুকুর এলাকার। করোনা কামড় বসিয়েছে সেখানকার একাধিক বাড়িতে। একটি বাড়িতে চার জন আক্রান্ত হওয়ার খবরও মিলেছে। এ হেন এলাকায় সোমবার সকালে গিয়ে দেখা গেল, প্রায় থমথমে পাড়ায় অধিকাংশ দোকান বন্ধ থাকলেও নিয়ম ভাঙা চলছেই! তেলিপুকুরের প্রধান যে রাস্তা এক দিকে যশোর রোড এবং অন্য দিকে দমদম রোডকে জুড়েছে, সেই লিঙ্ক রোডে ঢোকার মুখে গার্ডরেল পর্যন্ত নেই। বাজারের সামনে ওই রাস্তা নাম-কা-ওয়াস্তে আটকানো রয়েছে একটি বাঁশ দিয়ে। তাতে অবশ্য কাউকে আটকানো যাচ্ছে না। বাঁশের নীচ দিয়ে অবাধে চলছে বাইক, সাইকেল, লোকজনের যাতায়াত।

স্থানীয় বাসিন্দা সুদীপ দে বলেন, ‘‘আমার পাশের বাড়িতেই এক জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। খালি মনে হচ্ছে, এ বার আমি সংক্রমিত হব না তো? এত ভয় কখনও পাইনি।’’ আর এক বাসিন্দা জয়ন্ত দত্ত বলেন, ‘‘যে ভাবে পাড়ায় সংক্রমণ ছড়াচ্ছে, তাতে আগামী কয়েক দিন সকলের বাড়ি থেকে বেরোনো বন্ধ রাখা উচিত। কিন্তু লোকজন তা শুনছেন কই?’’

Advertisement

আরও পড়ুন: আতঙ্কে মায়ের দেহ ফ্ল্যাটের বাইরেই রাখলেন ছেলে

আরও পড়ুন: স্মার্ট কার্ডের বদলে কাগজের লাইসেন্স আবেদনকারীদের

নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পেতে যাতে এলাকাবাসীর সমস্যা না-হয়, সে জন্য দক্ষিণ দমদম পুরসভার উদ্যোগে তিনটি টোটো করে আলু, পেঁয়াজ, দুধ এবং অন্য সামগ্রী বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। দেখা গেল, বহুতলের বেশ কয়েক জন বাসিন্দা দড়ি দিয়ে ব্যাগ ফেলে সেই সব সামগ্রী কিনছেন। যাঁরা টোটোয় বাজার নিয়ে ঘুরছেন, তাঁদের এক জন বললেন, ‘‘আমরা প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে বাড়ি বাড়ি পৌঁছচ্ছি। কিন্তু তাতেও অনেকে খুশি নন। এই পরিস্থিতিতেও কেউ কেউ আক্ষেপ করছেন, বাজারে সদ্য আসা ইলিশ না-হলে তাঁদের চলছে না! পাড়ার বাজার বন্ধ। তবু দমানো যাচ্ছে না। একটু দূরে গিয়ে তাঁরা বাজার করছেন।’’

এ দিন ওই এলাকার বন্ধ বাজারে গিয়ে দেখা গেল, ফুলের দোকান খোলা। তার সামনেই জটলা কয়েক জনের। দু’-এক জনের মুখে মাস্কও নেই। কেন মাস্ক পরেননি? এক যুবক প্রায় রে রে করে উঠলেন, ‘‘সিগারেট খাওয়ার সময়ে কী ভাবে মাস্ক পরব বলুন তো?’’

পাড়ার প্রধান রাস্তা লিঙ্ক রোডের প্রবেশপথ কেন ব্যারিকেড দিয়ে বন্ধ করেনি প্রশাসন, এই প্রশ্ন তুলছেন বাসিন্দাদের একাংশ। কেন আক্রান্তদের বাড়ি ঘিরে দেওয়া হবে না, সেই প্রশ্নও উঠছে। পাড়ার এক বাসিন্দা জানান, তাঁর পাশের বাড়িতেই করোনা আক্রান্ত রোগী আছেন। সেই বাড়ি জীবাণুমুক্ত করা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। ওই ব্যক্তির প্রশ্ন, ‘‘আরও কত জন আক্রান্ত হলে হুঁশ ফিরবে প্রশাসনের?’’

স্থানীয় কাউন্সিলর অমিত পোদ্দারের অবশ্য দাবি, ‘‘রাস্তায় বেরোলে বাসিন্দারা যাতে মাস্ক পরেন, তার জন্য প্রচার চালানো হচ্ছে। আমাদের হেল্পলাইন নম্বরও আছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে জীবাণুমুক্ত করার কাজ চলছে। লিঙ্ক রোড বন্ধ করার জন্য জেলা পুলিশকর্তাকে চিঠি দিয়েছি। তবে পাড়ার মানুষকে আরও সচেতন হতে হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement