প্রতীকী ছবি।
হঠাৎ করেই শহর কলকাতায় বেড়ে গিয়েছে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের চাহিদা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর দেশে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে ভারত থেকে আমদানি করছেন এই ওষুধ। কিন্তু কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক স্পষ্ট করে দিয়েছে, ক্ষেত্রবিশেষে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে করোনা রোগী, চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী এবং নার্সদের জন্য এই ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। কিন্তু প্রেসক্রিপশন ছাড়া সাধারণ মানুষের এই ওষুধ খাওয়ার কথাই নয়। কারণ, সে ক্ষেত্রে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে মারাত্মক। বিশেষত যাঁদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে প্রেসক্রিপশন ছাড়া এই ওষুধের ব্যবহার বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে।
তার পরেও গত কয়েক দিন ধরে সাধারণ মানুষ দেদার হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন সংগ্রহ করতে শুরু করছেন। যার জন্য যাঁদের সত্যিই বিভিন্ন সমস্যায় এই ওষুধ খেতে হয়, তাঁদের অনেককেই দোকান থেকে খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে। তাঁদের অভিযোগ, বিভিন্ন ওষুধের দোকান থেকে কর্পূরের মতো উবে গিয়েছে এই ওষুধটি। অথচ তাঁরা কয়েক বছর ধরে সুগার বা রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিসের চিকিৎসায় এটি খেয়ে আসছেন।
এমন ভুক্তভোগীর তালিকায় রয়েছেন শ্যামবাজারের বাসিন্দা, বছর ষাটের দামোদর দাস। ২০১৫ সালে সারভাইক্যাল স্পাইনের অস্ত্রোপচার হয় তাঁর। তার পরে দেখা দেয় সুগার-সহ নানা শারীরিক সমস্যা। ২০১৮ সালে চিকিৎসকের কাছে গেলে তিনি দামোদরবাবুকে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ৪০০ মিলিগ্রাম রোজ একটি করে খেতে বলেন। ওই প্রৌঢ় জানিয়েছেন, সম্প্রতি ওষুধ শেষ হয়ে যাওয়ায় তিনি শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ের সব ক’টি দোকান এবং আর জি কর হাসপাতালের উল্টো দিকে একাধিক দোকানে ঘুরেছেন। কিন্তু কোথাও এক পাতাও পাননি। লকডাউনের শহরে চিকিৎসকের কাছেও যাওয়ার উপায় নেই। ফলে এই ওষুধের পরিবর্তে তিনি কী ওষুধ খাবেন, বুঝেই উঠতে পারছেন না দামোদরবাবু। তিনি বলেন, ‘‘ডাক্তারবাবুকে ফোন করেছিলাম। কিন্তু তিনি না-দেখে তো ওষুধ পাল্টাতে পারবেন না। জানি না কবে, কোথায় এই ওষুধ পাব।’’
একই সমস্যায় রয়েছেন যাদবপুরের প্রণতি চক্রবর্তী। রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিসের রোগী প্রণতিদেবী গত চার বছর ধরে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন খেয়ে আসছেন। লকডাউনের আগে দু’পাতা কিনে রেখেছিলেন। আগামী দিনে লকডাউন বাড়তে পারে ভেবে দোকানে ওই ওষুধ কিনতে গিয়ে জানতে পারেন, সেটি আসছে না। মাথায় হাত পড়েছে প্রণতিদেবীর। হাওড়ার এক বাসিন্দাও জানালেন, ওষুধের দোকানে গেলে তাঁকে দু’পাতা দিয়ে বলা হয়েছে, আর নেই।
হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন এন্ডোক্রিনোলজিস্ট সুদীপ চট্টোপাধ্যায়। তিনি জানালেন, একাধিক রোগী তাঁকে এই ওষুধ পাচ্ছেন না জানিয়ে ফোন করছেন। একই বক্তব্য শহরের একটি সরকারি হাসপাতালের এক চিকিৎসকের। তিনিও জানালেন, তাঁরও কয়েক জন রোগী এই সমস্যায় পড়েছেন। দামোদরবাবু বা প্রণতিদেবীর দাবি যে সত্যি, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে শহরের একাধিক ওষুধের দোকানে ফোন করে। কেউ জানিয়েছেন দু’সপ্তাহ হয়ে গেল হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন আসছে না। কেউ আবার এক মাস ধরে ওই ওষুধের সরবরাহ নেই বলে জানালেন। কবে পাওয়া যাবে, তা-ও কেউ নিশ্চিত ভাবে বলতে পারেননি।
জোগানের সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন বেঙ্গল কেমিস্টস অ্যান্ড ড্রাগিস্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শঙ্খ রায়চৌধুরী। তবে তিনি জানান, হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন একেবারে মিলছে না তা নয়। করোনা বিপর্যয়ের মুখে দাঁড়িয়ে আগে সরকারকে ওষুধ সরবরাহ করছে প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলি। ডিস্ট্রিবিউটরদের কাছে কিছু ওষুধ এখনও মজুত আছে। লকডাউনের জন্য হয়তো তা সরবরাহে সমস্যা হচ্ছে।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)