Coronavirus

পাঁচ হাজারে পজ়িটিভ ১৬, একুশের হিসেবে গরমিল

শুক্রবার স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন অনুযায়ী, এ পর্যন্ত রাজ্যে সংক্রমিত ৪৮১৩ জন। এর মধ্যে ১৯৭৩ জন কলকাতার বাসিন্দা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০২০ ০২:২১
Share:

—ফাইল চিত্র।

করোনা নিয়ে একুশ দিনের হিসেবে গোলমাল! স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন অনুযায়ী, গত ২১ দিনে কলকাতাতেই মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১১৪৬। অথচ ২১ দিনে পুরসভার নজরদারি দলের মাধ্যমে যে ৫০০০ লালারসের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে, তার মধ্যে মাত্র ১৬টি রিপোর্ট পজ়িটিভ এসেছে বলে খবর। ফলে যে সব এলাকায় নমুনা পরীক্ষা করানো প্রয়োজন আদৌ সেখানেই তা হচ্ছে কি না, সেই প্রশ্ন উঠছে।

Advertisement

শুক্রবার স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন অনুযায়ী, এ পর্যন্ত রাজ্যে সংক্রমিত ৪৮১৩ জন। এর মধ্যে ১৯৭৩ জন কলকাতার বাসিন্দা। সংক্রমণ রোধে নজরদারির কাজ শুরু করেছেন কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্যকর্মীরা। বাড়ি বাড়ি ঘুরে আইএলআই (ইনফ্লুয়েঞ্জা-লাইক ইলনেস) এবং সারি (সিভিয়র অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইলনেস)-র উপসর্গযুক্ত রোগীদের খুঁজে বার করা, আক্রান্তের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তি, বাইরে থেকে আসা ও উপসর্গযুক্ত ব্যক্তিদের নমুনা পরীক্ষা করাই এই প্রক্রিয়ার লক্ষ্য।

অথচ স্বাস্থ্য দফতরের খবর, গত ২১ দিনে (৭-২৮ মে) এসএসকেএমে ৪৮৪১টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে, যার মধ্যে পজ়িটিভের সংখ্যা মাত্র ১৬। মূলত ৪, ৭ এবং ৯ নম্বর বরো থেকে বেশি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ওই বরোগুলির মধ্যে রয়েছে হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিট, ভবানীপুর, চেতলা, পার্ক সার্কাস, তিলজলা, তপসিয়া, জোড়াবাগান, বিডন স্ট্রিট এবং গিরিশ পার্কের মতো এলাকা। ফলে নমুনা সংগ্রহের প্রক্রিয়া নির্দেশিকা মেনে করা হয়েছে কি না, গত সোমবার স্বাস্থ্য ভবনে একটি বৈঠকে সেই প্রশ্ন উঠেছে বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর।

Advertisement

পুর চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, স্বাস্থ্য দফতরের তথ্যের ভিত্তিতে কোন ওয়ার্ডে পরীক্ষা করানো প্রয়োজন, তা ঠিক করে পুরসভা। ওয়ার্ডের কোথায় নমুনা পরীক্ষা সংগ্রহ করা হবে, তা দেখেন ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটর। সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড থেকে অন্তত ৫০টি নমুনা সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা থাকে, যা পূরণ করাতে কোঅর্ডিনেটরের ‘আবদার’ও রাখতে হয় বলে অনুযোগ পুর চিকিৎসকদের একাংশের। নজরদারি দলের কাজ পর্যালোচনায় তিনটি

মেডিক্যাল কলেজের কমিউনিটি মেডিসিনের যে চিকিৎসকেরা যু্ক্ত রয়েছেন, তাঁদের একাংশও কোঅর্ডিনেটরদের এই অনুরোধ রাখার কথা স্বীকার করছেন।

যদিও কোভিড নিয়ন্ত্রণে পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর উপদেষ্টা ও

চিকিৎসক শান্তনু সেন বলেন, ‘‘কলকাতায় কমিউনিটি স্তরে সংক্রমণ যে এখনও ততটা ছড়ায়নি এই পরিসংখ্যানই তার প্রমাণ। নাক বা মুখের ভিতর থেকে নমুনা সংগ্রহের পদ্ধতিটি খুব কষ্টের। কেউ সেধে সেই যন্ত্রণা নেবেন বলে মনে হয় না। তাই কাউন্সিলরদের আবদারের বিষয়টি যুক্তিযুক্ত বলে মনে হচ্ছে না।’’

স্বাস্থ্য ভবনের ওই বৈঠকে নজরদারি প্রক্রিয়ায় আইএলআই এবং সারি রোগীর সংখ্যা কম কেন, সে প্রশ্নও ওঠে। এ বিষয়ে তিনটি মেডিক্যাল কলেজের কমিউনিটি মেডিসিনের চিকিৎসকদের একাংশ জানান, পিপিই পরা লোকেদের দেখে অনেকে তথ্য গোপন করছেন। নমুনা সংগ্রহে প্রশিক্ষণের অভাবের কথা জানাচ্ছেন নজরদারি প্রক্রিয়ার

সঙ্গে যুক্ত মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টদের একাংশ।

তবে পাঁচ হাজারে ১৬টি পজ়িটিভের অন্য ব্যাখ্যাও রয়েছে। পুরসভার এক চিকিৎসক-আধিকারিক জানান, রাজ্যের ৪০টি ল্যাবের মধ্যে অন্তত ২০টি কলকাতাকেন্দ্রিক। সরকারি এবং বেসরকারি ল্যাবে প্রতিদিন যে সব নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে সেগুলির রিপোর্টেরই

প্রতিফলন ঘটছে বুলেটিনে। সব ক’টি ল্যাবে কত সংখ্যক নমুনা পরীক্ষা করে প্রতিদিন গড়ে ৫০-৬০টি পজ়িটিভ পাওয়া যাচ্ছে, তা বিশ্লেষণ করলে পুরসভার কাজ ঠিক মতো হচ্ছে কি না, বোঝা যাবে। ওই চিকিৎসক-আধিকারিকের কথায়, ‘‘উপসর্গহীন অথচ পজ়িটিভ, এমন কত জন রয়েছেন তা-ও দেখতে চাইছিলাম। কারণ দেশে উপসর্গহীন পজ়িটিভের সংখ্যা বেশি বলে দেখা যাচ্ছে। আমরা যা পরীক্ষা করেছি তাতে উপসর্গহীন ব্যক্তিদের মধ্যেও সংক্রমণের হার বেশি নয়। ফলে সবটাই যে ভুল তথ্য, তা নয়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement