বেলগাছিয়া বস্তিতে বোঝানো হচ্ছে বাসিন্দাদের। ছবি: সুমন বল্লভ
আপাদমস্তক সাদা বর্মবস্ত্রে ঢাকা। সেই বর্মবস্ত্রের সঙ্গে যুক্ত চশমার কাচে মাঝেমধ্যেই জমে যাচ্ছে বাষ্প। কিন্তু তা মোছার উপায় নেই। নিজের নিয়মেই তা চশমার কাচে জমছে এবং মিলিয়ে যাচ্ছে। জীবাণুনাশক রাসায়নিকের ভার কাঁধে নিয়ে বেলগাছিয়ার দিকে এগিয়ে চলেছেন কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্যকর্মীরা। মূল এলাকায় ঢোকার আগে বেলগাছিয়া মোড়ের কাছে প্রশ্নটা করা গেল, ভয় লাগছে? ৫৭ বছরের প্রৌঢ় আত্মবিশ্বাসী স্বরে বলে উঠলেন, ‘‘ভয় কিসের! এ সব পরে একটু গরম লাগছে। মানুষের সেবা করাটাই আমাদের কাজ। সেই কাজ তো করতেই হবে।’’ শহর কলকাতায় কোভিড-নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির প্রথম দিনে এই স্বরই এখন ‘চরৈবেতি’ মন্ত্র।
কলকাতা পুরসভার তিন নম্বর ওয়ার্ডের বেলগাছিয়া এলাকায় সম্প্রতি বেশ কয়েক জন করোনা রোগীর সন্ধান মিলেছে। কয়েক জনের মৃত্যুও হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে করোনা রোধে এ দিন সরেজমিন এলাকা পরিদর্শনের কাজ শুরু হয় সেখানে। স্থানীয় কমিউনিটি হলে প্রাথমিক প্রশিক্ষণের পরে কাজ শুরু করেন পুরসভার স্বাস্থ্যকর্মীরা। এলাকায় ঢোকার আগে অস্থায়ী স্বাস্থ্যকর্মী, বছর সাতান্নর অশোক চৌরাসিয়া জানান, বেলগাছিয়ার জীবনকৃষ্ণ ঘোষ রোডে তাঁর প্রায় প্রতিদিনের যাতায়াত। মশা মারার কাজের সুবাদে ওই এলাকার অলিগলি চেনেন তিনি। অশোকবাবুর কথায়, ‘‘আমার জন্য যদি কারও প্রাণ বাঁচে, তার চেয়ে ভাল কি কিছু হয়?’’ প্রৌঢ়ের মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বছর আটত্রিশের এক স্বাস্থ্যকর্মী বললেন, ‘‘সকলে সুস্থ থাকলে আমরাও ভাল থাকব।’’
গলির ভিতরে খানিক ঢুকে এক স্বাস্থ্যকর্মী জানতে চাইলেন, বাড়িতে কারও জ্বর হয়েছে? শ্বাসকষ্টের কোনও রোগী আছেন? বেশির ভাগ জবাবই এল নেতিবাচক। বাড়ির ঠিকানা জানতে চাইলে তার সোজাসাপ্টা জবাবও খুব বেশি এল না। আবার উল্টো ছবিও দেখা গিয়েছে। গলি থেকে একদল যুবককে মাস্ক ছাড়া বাড়ির বাইরে বেরোতে দেখে স্থানীয় বাসিন্দারাই ধমক দিচ্ছেন। গলির বাইরে কলকাতা পুলিশের গাড়ি থেকে ক্রমাগত মাইকে সহযোগিতার আবেদন জানানো হচ্ছিল। এক যুবক বললেন, ‘‘আমাদের ভালর জন্যই তো বলছে। শুনছ না কেন?’’
আরও পড়ুন: ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন সংক্রমণ ৮২৬ জনের, আক্রান্ত বেড়ে ১২৭৫৯, মৃত ৪২০
আরও পড়ুন: রাজ্যে করোনায় মৃত্যু ৭ থেকে বেড়ে হল ১০, সক্রিয় রোগী ১৪৪
ওই যুবক যখন এ কথা বলছেন, তখন এক স্বাস্থ্যকর্মীর পিপিই-র চশমা ঠিক করে দিচ্ছেন স্থানীয় এক প্রৌঢ়। অনভ্যাসে একটু ঢিলে হয়ে গিয়েছিল বর্মবস্ত্র। বাসিন্দারা ঠিক মতো প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন না, পুরসভার স্বাস্থ্যকর্মীদের একাংশ এমন অনুযোগ করলে শাহিদ আখতার নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বললেন, ‘‘আপনারা আমাদের বাঁচানোর জন্য এসেছেন। কেন সহযোগিতা করব না? কিন্তু আপনারা আমাদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করুন। লকডাউনের মধ্যে অনেক অসুবিধা রয়েছে। সে সবও তো শুনতে হবে।’’
এই প্রসঙ্গে স্থানীয় কাউন্সিলর শান্তনু সেন বলেন, ‘‘অভিযানের প্রথম দিনে এ ধরনের কিছু ছন্দপতন ঘটবে, সেটা স্বাভাবিক। এলাকাবাসীর স্বার্থেই যে এ সব করা হচ্ছে, সেই বিশ্বাসটা অর্জন করতে হবে। এই আস্থা অর্জনের লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজে নেমেছি।’’
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)