Circus

করোনার দাপটে ময়দান ছাড়ল সার্কাসের তাঁবু

ছবিতে সার্কাসের শো বন্ধ হয়নি ঠিকই, তবে করোনার দাপটে শীতের কলকাতায় সার্কাস বন্ধ হয়ে গেল। পার্ক সার্কাস ময়দান, টালা অথবা সিঁথির মোড়— কোথাও এ বার সার্কাসের তাঁবু পড়েনি।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০২০ ০১:১০
Share:

কসরত: এ বার শীতের শহরে অদেখাই থাকবে এই দৃশ্য। ফাইল চিত্র

মায়ের মৃত্যু হয়েছে। তবু শোক চেপে কর্তব্যের খাতিরে দর্শকদের হাসিয়ে চলেছেন জোকার। কারণ, জীবনে যা-ই ঘটে যাক না কেন, শো কখনও বন্ধ হয় না। ‘দ্য শো মাস্ট গো অন’। ‘মেরা নাম জোকার’ ছবির বিখ্যাত এই দৃশ্যে রাজ কাপুরের অভিনয় দর্শকের মনে ছাপ রেখে গিয়েছে।

Advertisement

ছবিতে সার্কাসের শো বন্ধ হয়নি ঠিকই, তবে করোনার দাপটে শীতের কলকাতায় সার্কাস বন্ধ হয়ে গেল। পার্ক সার্কাস ময়দান, টালা অথবা সিঁথির মোড়— কোথাও এ বার সার্কাসের তাঁবু পড়েনি। দেখা নেই সার্কাসের বিজ্ঞাপনী পোস্টারেরও। শহরবাসী মনে করতে পারছেন না, শীতের শহরে সার্কাস বসেনি, এমন আগে হয়েছে বলে।

অজন্তা সার্কাসের অন্যতম অংশীদার রবিউল হক বলেন, ‘‘করোনা সব এলোমেলো করে দিল। এ বার আর সার্কাসের তাঁবু ফেলতে পারলাম না। ১০০ জনেরও বেশি শিল্পী-কর্মী সবাই উপার্জনহীন হয়ে রয়েছেন।’’ রবিউল জানান, করোনা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হওয়ার পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখে বিধি মেনে তাঁবু ফেলার অনুমতি চেয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু উত্তর আসেনি। রবিউল বলেন, ‘‘ডিসেম্বর মাস শেষ হতে চলল। এখন আর অনুমতি পেয়েও লাভ নেই। এ বার সার্কাসের তাঁবু ফেলব না বলেই ঠিক করেছি।’’ রবিউল জানান, সার্কাস নিয়ে তাঁরা সারা বছর ঘুরে বেড়ান বিভিন্ন শহরে। শীতে চলে আসেন কলকাতায়। গত বছর টালা পার্কে সার্কাসের তাঁবু পড়েছিল। এ বার পুরো আট মাস সার্কাস বন্ধের পরে শীতে কলকাতা থেকেই যাত্রা শুরু করবেন ঠিক ছিল। কিন্তু সেটাও হল না।

Advertisement

আরও পড়ুন:প্রধানমন্ত্রীর জন্য ১০টি ৪ তলা বাড়ি! খরচ প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার কোটি

অলিম্পিক সার্কাস ও ফেমাস সার্কাসের অংশীদার চন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ফোন করলে রিংটোন শোনা গেল, ‘জিনা ইঁহা, মরনা ইঁহা, ইসকে সিবা জানা কাঁহা।’ তাঁর কথায়, ‘মেরা নাম জোকার’-এর এই গানের সঙ্গে তাঁর জীবনের খুব মিল। জীবনের সবথেকে বেশি সময় দিয়েছেন যে সার্কাসকে, সেই পেশাই গত আট মাস ধরে টানা বন্ধ। তাঁরা ভাবতেই পারছেন না, শীতে এ বার সার্কাস নেই। তবে চন্দ্রনাথবাবু বলেন, ‘‘করোনা পরিস্থিতিতে এ বার সার্কাস খুললেও লাভ হত না। ২০০ জনের বেশি শোয়ে ঢোকার অনুমতি মিলত না। অত কম দর্শককে নিয়ে শো চালালে আমাদের লাভ কিছুই হত না। তাই সার্কাস বসানোর জন্য পুরসভার থেকে অনুমতিও চাইনি। শিল্পীরা কেউ কেউ অন্য পেশায় চলে গিয়েছেন।’’

আরও পড়ুন: সিএএ কবে, জবাব দিলেন অমিত

সার্কাসে পশু-পাখি নিয়ে খেলা দেখানো নিষিদ্ধ হওয়ার পরে বিদেশের শিল্পীদের জিমন্যাস্টিকস ও ট্রাপিজ়ের খেলাই এখন আকর্ষণ। চন্দ্রনাথ এবং রবিউলের মতে, এ বার সার্কাস খুললেও বিদেশি শিল্পীরা আসতে পারতেন না। ফলে সেই আকর্ষণ কম থাকত।

কলকাতা পুরসভার পার্ক ও উদ্যান দফতরের প্রাক্তন মেয়র পারিষদ তথা পুর প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য দেবাশিস কুমার বলেন, ‘‘সার্কাস শুরু হওয়ার মাস তিনেক আগে সংস্থাগুলো অনুমতি চেয়ে আবেদন করে। এ বার ওই সময়ে করোনার দাপট এতই বেশি ছিল যে অনুমতি দেওয়ার প্রশ্নই ছিল না। এখন আবেদন করলে ভেবে দেখতে পারি। তবে সব মেনে সার্কাস বসতে বসতে শীত কেটে যাবে।’’ এর পরেই তাঁর সহাস্য মন্তব্য, ‘‘ছোটবেলায় সার্কাস দেখা নিয়ে আমারও স্মৃতি রয়েছে।’’

সার্কাস নিয়ে নানা রকম স্মৃতি রয়েছে সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়েরও। তিনি বলেন, ‘‘এই বছরটা তো একেবারেই আলাদা। শীতের সার্কাস অন্য রকম উৎসব। এ বার বইমেলাও হবে না হয়তো। কোনও কিছুই স্বাভাবিক নেই। এই বছরটাকে আলাদা চোখে দেখতে হবে। মেনে নিতে হবে আমাদের।’’

কবি জয় গোস্বামী বলেন, ‘‘সার্কাস না বসায় এ বছর বাচ্চারা অনাবিল আনন্দ থেকে বঞ্চিত হল। শিল্পীদের কথা ভেবেও খুব খারাপ লাগছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement